ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

হৃদরোগ প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৫৪, ২০ মে ২০১৮ | আপডেট: ০৯:২৮, ২০ মে ২০১৮

বর্তমান বিশ্বে যে রোগটি হু হু করে বেড়ে চলেছে তা হলো করোনারি হৃদরোগ। দ্রুত নগরায়ন আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ফলে বিলাসী জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, ধূমপান, শারীরিক পরিশ্রমহীনতা এবং উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও প্রতি্দ্বন্দ্বিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে সৃষ্ট স্ট্রেস বা টেনশনকে হৃদরোগের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। হৃদরোগ প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা জেনে রাখা জরুরি-

সব ধরনের খাবারের মধ্যে প্রাকৃতিক খাবারই শ্রেয়। এরমধ্যে নিরামিষভোজীরা সুস্থ থাকেন সবচেয়ে বেশি এবং তারা দীর্ঘজীবিও হন।

খাবারের পরিমান যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ কী খাবার আপনি খাচ্ছেন। ব্রিটেন ও ফ্রান্স- পাশাপাশি দুটি দেশ। দেশ দুটির জনগনের জীবনযাত্রার মান ও খাদ্যাভ্যাস প্রায় একই রকম। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রিটেনের তুলনায় ফ্রান্সের মানুষের করোনারি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার কম। কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফরাসীদের চেয়ে ব্রিটিশরা ফল-মূল বেশি খায়। আর ফলে থাকে প্রচুর এন্টি-অক্সিডেন্ট ভিটামিন (ভিটামিন এ, সি, ই) যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

এক সময় বিজ্ঞানীরা প্রচুর আমিষ বিশেষ করে প্রাণীজ আমিষ খেতে বলতেন। কারণ এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, সুস্থতার পরিমান বাড়বে। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, আমিষের ঘাটতি যেমন শরীরের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধিসাধন ব্যাহত করে, শরীরকে অসুস্থ করে তুলে। তেমনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত আমিষও শরীরের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। আর যদি তা প্রাণীজ আমিষ হয় তবে তো ক্ষতির মাত্রা হবে বহুবিধ।

প্রত্যেকেরই উচিৎ এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা সীমার মধ্যে রাখা। গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তের টোটাল কোলেস্টেরল যদি ১৫০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন ছাড়া) এর কম হয় তবে তা হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিন্তু কোলেস্টেরলের মাত্রা শতকরা ১ ভাগ বৃদ্ধি পেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে শতকরা ২ ভাগ। শুধু তাই নয়, যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা সবসময় ১৫০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এর মধ্যে থেকেছে, তাদের কখনও হার্ট অ্যাটাক হয়নি। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ কোলেস্টেরলের মাত্রা সবসময় ১৫০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এর মধ্যে রাখা। আর এখানেই রয়েছে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা।

যে খাবারগুলো খেলে এলডিএল কোলেস্টেরলের পরিমান বাড়ে সেগুলো হলো- গরুর মাংস, খাসির মাংস, হাঁসের মাংস, ডিমের কুসুম, কলিজা, মগজ (ব্রেন), হাঁস ও মুরগির চামড়া, হাড়ের মজ্জা, মাখন, ঘি, ডালডা, মার্জারিন, চিংড়ি, নারিকেল, দুধের সর, বড় মাছের মাথা। 

কোনও তেলই উপকারী নয়, তবে যেহেতু সানফ্লাওয়ার ও স্যাফফ্লাওয়ার তেলে তুলনামূলক কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, তাই এ দুই ধরনের তেল খাওয়া যেতে পারে। তবে পরিমান যত কম হয় ততো ভাল। আমাদের যতদূর সম্ভব রান্না-বান্নায় কম তেল ব্যবহার করতে হবে। চার সদস্যের একটি পরিবারে প্রতিমাসে দুই লিটারের বেশি তেল ব্যবহার করা উচিৎ নয়। এছাড়া বাইরের ভাজা পোড়া তৈলাক্ত খাবার বর্জন করতে হবে।

কোলেস্টেরল বাড়ার পেছনে যে খাবারগুলোর ভুমিকা কম নয় সেগুলোর মধ্যে- ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, জুস, আইসক্রিম, চকোলেট অন্যতম।

হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে পরিপূর্ণ সুস্থ থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত শাক-সবজি, ডাল, সালাদ, ভর্তা, ফল খাওয়া উচিৎ। এর সঙ্গে আমাদের সপ্তাহে দুই দিন বড় মাছ, দুই দিন ছোট মাছ, এক দিন মাংস (মুরগী) এবং দুই দিন শুধু শাক-সবজি, ডাল, সালাদ, ভর্তা, ফল খাওয়া উচিৎ। আমাদের কাঙ্খিত ওজন ধরে রাখা সম্ভব হবে।

আমাদের প্রত্যেকের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ একটিই আর তা হলো- সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন, কর্মব্যস্ত সুখী জীবন। এটি অর্জনের জন্য আমাদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা উচিৎ এবং তা হতে হবে অবশ্যই ঘণ্টায় চার মাইল বেগে। সঙ্গে ১৫-২০ মিনিট যোগ ব্যায়াম এবং প্রাণায়াম চর্চা। ওজন অবশ্যই নিয়ন্ত্রনে থাকতে হবে। আর যাপন করতে হবে দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা আর স্ট্রেস যেন আপনাকে কাবু করতে না পারে। সেইজন্যে প্রতিদিন দু’বেলা ধ্যানে বসুন। আর প্রতিদিন মনে মনে শতবার বলুন- সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন, কর্মব্যস্ত সুখী জীবন।

একে//

           


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি