ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

১০০০ এতিমকে খাওয়ানোর শর্তে ক্ষমা পেল স্টার কাবাব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৪১, ৮ অক্টোবর ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া ও এক হাজার এতিম শিশুকে একবেলা খাবার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় স্টার কাবাব কর্তৃপক্ষ ক্ষমা করে দিয়েছেন সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলক নামের সেই ভোক্তা। আজ মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) এক বার্তায় তিনি এ তথ্য জানান।

সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলক বলেন, গত ৬ অক্টোবর দুপুরে বনানী স্টার কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে আমার ওপর হামলার ঘটনায় প্রকৃত সত্য জনগণের কাছে তুলে ধরায় দেশের সকল গণমাধ্যমকর্মী ভাই ও বন্ধুদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আপনারা পাশে না থাকলে হয়তো এই ঘটনার বিচার চাওয়া পর্যন্ত যেতে পারতাম না। অন্যায় দেখে সবাই মুখ চেপে চলে আসে। পচা বাসি খাবার একাধিক গ্রাহককে দেওয়া যত কম টাকার বিষয়ই হোক না কেনো, তা অন্যায়। তাই প্রতিবাদ করেছি। রক্তাক্ত হয়েও এক ঘণ্টা রক্ত ঝরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে থেকে আমার গণমাধ্যমকর্মী বন্ধু ও আইনের লোকদের জন্য অপেক্ষা করে এই ঘটনার বিচার ও শাস্তি দাবি করেছি।

সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলক আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করতে চাই, বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে না। বিশ্বাস করতে চাই, জাতীয় সংগীতের মতো আমার সোনার বাংলা সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলা হবে, আমরা ইউরোপ আমেরিকার মতো অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হওয়ার আগে চারিত্রিক ও ব্যবহারগতভাবে তাদের মতোই উন্নত হবো। তাই রক্ত ঝরলেও আমি এই ক্ষুদ্র বিষয়ের প্রতিবাদ করেছি কিছু ভালো পরিবর্তনের প্রত্যাশায়।

তিনি বলেন, ৬ অক্টোবরের ঘটনায় আমার করা মামলায় ইতোমধ্যে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, একদিন জেলও খেটেছে তারা। আমি মামলা চলমান রাখলে তাদের কয়েক মাস হয়তো জেল খাটতে হবে। আমি মনে করি, তারা তাদের মালিকপক্ষের ক্ষমতার দাম্ভিকতায় আমার ওপর আক্রমণ করেছে, আমাকে রক্তাক্ত করেছে। 

সেই বার্তায় আরও বলা হয়, তারা হয়তো ভেবেছিল, বনানী তাদের এলাকা, এখানে কেউই তাদের আইনের আওতায় আনতে পারবে না। তাদের এই ধারণার সত্যতা ৬ অক্টোবর রাতে আমি মামলা করতে গেলে দেখতে পাই। তাদের জন্য বিভিন্ন প্রভাবশালী জায়গা থেকে ফোন আসা শুরু হয়। তবে আমি একজন গণমাধ্যমকর্মী হওয়ায় এবং পাশে আমার বন্ধুরা নিঃস্বার্থভাবে দাঁড়ানোয় তারা আমাকে দমাতে ব্যর্থ হয়। আমি মামলা করে তাদের গ্রেপ্তার করাতে সক্ষম হই।

সালেহ মোহাম্মদ রশীদ বলেন, আমার প্রত্যাশা ছিলো, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, আইনের চেয়ে শক্তিশালী কেউ নই, সেই বার্তা সবার কাছে যাক। আমার প্রাথমিক প্রত্যাশা সফল হয়েছে। দেশের মানুষ দেখেছে, খাবারের বিষয়ে সচেতন হয়েছে। সকল রেস্টুরেন্ট খাবারের মানের বিষয় সতর্ক হবে, তারাও জানবে পচা খাবার দিলে আইনের আওতায় আসতে বাধ্য।

তিনি আরও বলেন, স্টার কাবাবের পক্ষ থেকে গত দুই দিন বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে ক্ষমা চেয়েছে। ১১ জন গ্রেপ্তার করা কর্মচারী যারা আমার ওপর হামলা করেছিল, তারাও নানাভাবে ক্ষমা চেয়েছেন, অনুতপ্ত হয়েছেন, তাদের পরিবারের কথা বলে মাফ করে দিতে বলেছেন। মামলা চলমান রাখলে তাদের হয়তো কয়েক মাস জেল হবে। আমি চেয়েছিলাম একটি গুণগত পরিবর্তনের সূচনা, যা আশা করি শুরু হয়েছে। ১১ জনের পরিবার, বাবা মা, সন্তানের দিকে তাকিয়ে স্টার কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে আমি ক্ষমার জন্য কিছু শর্ত দিয়েছি।

স্টার কাবাব কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে ও কোনোপ্রকার চিকিৎসা ব্যয় বা আর্থিক ক্ষতিপূরণ আমি না নিয়ে ১০০০ এতিমকে স্টার কাবাব কর্তৃপক্ষ একবেলা বিনামূল্যে খাওয়ালে তাদের ওপর করা মামলা প্রত্যাহার করার কথা ভাবছি।

১. স্টার কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে পচা খাবার দেওয়া এবং গ্রাহককে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার জন্য গ্রাহক, সাংবাদিক সমাজ ও জনগণের কাছে নিঃশর্তভাবে লিখিত ক্ষমা চাইতে হবে।

২. তাদের সার্ভিস ও খাবারের মান উন্নত করার প্রতিশ্রুতি জনগণের কাছে লিখিতভাবে দিতে হবে।

৩. সব শাখার প্রত্যেক কর্মচারী, ম্যানেজার ও অন্যান্য কর্মকর্তাকে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে একবার সদাচরণ ও গ্রাহকসেবার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়ে আনতে হবে।

৪. আমাকে কোনো চিকিৎসা ব্যয় ও কোনোপ্রকার আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না (আমি নেবো না), তবে ক্ষমার শর্ত হিসেবে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ২০০০ এতিমকে এতিমখানায় একবেলা বিনামূল্যে খাবার দিতে হবে।

এদিকে, সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলকের শর্তে রাজি হয়ে এক হাজার এতিম শিশুকে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্টার কাবাব কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির সিইও এস এম মনিরুজ্জামান একটি প্রতিশ্রুতিনামাও দিয়েছেন।

প্রতিশ্রুতিনামাতে সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলক ক্ষমা করে স্বাক্ষর করেছেন বলে লক্ষ্য করা গেছে।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি