ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪

‘১৫ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ নষ্ট, নিরব প্রশাসন’

জাককানইবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ১৬:৪৮, ১৪ নভেম্বর ২০১৯

উন্নত স্বাস্থ্য সেবার জন্য ভালো মানের মেডিকেল সেন্টার থাকার কথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। নার্স, ফার্মাসিস্ট ও ল্যাব পরিচালনার জন্যে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং ল্যাব পরীক্ষার জন্য প্যাথলোজিস্ট এবং দক্ষ চিকিৎসক সংকটসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অপ্রতুলতার ফলে চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো অর্থ অপচয়ের যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই খাতে অর্থ বরাদ্দ থাকলেও তা সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘ব্যাথার দান’মেডিকেল সেন্টারে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মেডিকেল যন্ত্রাংশ। মেয়াদ হারিয়ে নষ্ট হয়েছে ২৫ হাজার টাকার ল্যাবরেটরি সংশ্লিষ্ট ঔষধ।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে মেডিকেল সেন্টারের যন্ত্রপাতি ক্রয়বাবদ ব্যবহার করা হয়েছে ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৯২১ টাকা। পরবর্তিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আবারো মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ ব্যয় করা হয় ৭লাখ ৩৫ হাজার টাকা। দুই মেয়াদে মোট ১৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকার ক্রয় করা যন্ত্রাংশগুলো ব্যবহার ছাড়া তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

এছাড়াও বার্ষিক ঔষধ ব্যয় বাবদ বরাদ্দ হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা যা প্রয়োজনের থেকে কম বরাদ্দ বলে দাবি মেডিকেল সেন্টার দপ্তরের। মাসে গড়ে ২৫ হাজার টাকার ঔষধ ক্রয় করা হয় বলে জানান সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ।

৪ জন ডাক্তারসহ ১০ জন জনবল নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘ব্যাথার দান’মেডিকেল সেন্টার। যেখানে নেই পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নার্স, ফার্মাসিস্ট ও ল্যাব পরিচালনার জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং ল্যাব পরীক্ষার জন্য প্যাথলজিক্যাল ডাক্তার।

ল্যাব সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগের আগে যন্ত্রাংশ ক্রয় করার কোনো বিধান না থাকলেও বারবার সে প্রক্রিয়ায় মেডিকেল যন্ত্রাংশ ক্রয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রথমবার ক্রয় করা যন্ত্রাংশ ব্যবহার না করলেও দ্বিতীয় মেয়াদে পুনরায় ক্রয় করা হয়েছে মেডিকেল যন্ত্রাংশ। সকল যন্ত্রাংশ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট প্রায় ।

মেডিকেল সেন্টারটি অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় ময়লার স্তুপে পরিণত হয়েছে। কক্ষগুলোতে মাটির স্তুপ ও সেখানে বিভিন্ন পোকামাকড়ও দেখা গেছে কক্ষ পর্যবেক্ষণের সময়। পরিষ্কার করার জন্য মেডিকেল প্রতিষ্ঠার পর থেকে নেই কোনো পরিচ্ছন্নতা কর্মী। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশেই চলছে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া এই মেডিকেল সেন্টারটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক নারী শিক্ষার্থী কিন্তু মেডিকেলে নেই নারী নার্স। অন্যদিকে নারী ডাক্তারও রয়েছে মাত্র একজন। সেই নারী ডাক্তার নিয়োগেও রয়েছে অস্বচ্ছতার অভিযোগ।

৭ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে জরুরি চিকিৎসা কাজে ব্যবহারের জন্য রয়েছে মাত্র একটি এ্যাম্বুলেন্স। এই নিয়ে শিক্ষার্থীরা একাধিকবার বিক্ষোভ করলেও সংযোজন হয়নি নতুন এ্যাম্বুলেন্স। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান তথ্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি এ্যাম্বুলেন্স উপহার দেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মেডিকেল সেন্টারের যন্ত্রাংশ ক্রয় ও নষ্ট হওয়া প্রসঙ্গে সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ব্যাথার দান’ মেডিকেল সেন্টার অনেক সংকট মাথায় নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। 

১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯২১ টাকার যে যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হয়েছে তা ব্যবহার করার জন্য যা প্রয়োজন তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পাচ্ছি না। ল্যাব পরিচালনার জন্য টেকনেশিয়ান, ঔষধ প্রদানে ফার্মাসিস্ট, সার্বক্ষনিক রোগীর পরিচর্যায় নার্স প্রয়োজন এবং মেডিকেলের অন্যতম শর্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। তাই একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীও আমাদের প্রয়োজন। 

এই সুবিধাগুলো পেলেই ভালো মানের চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ছাড়া ল্যাব পরিচালনা অসম্ভব আর ল্যাবের যন্ত্রাংশ ব্যবহার না হলে নষ্ট হতেই পারে। ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে ২৫ হাজার টাকার ল্যাবে ব্যবহার করার ঔষধ নষ্ট হয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও নতুন করে আরো দুজন ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হলে ভালোভাবে মেডিকেল সেন্টার পরিচালনা সম্ভব।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ও চাহিদা বিবেচনায় রেখে নিয়োগ ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। তবে ১৪ লক্ষাধিক টাকা এভাবে নষ্ট হওয়া অনুচিত। 

মেডিকেল সেন্টার থেকে দেয়া চাহিদা পত্র অনুযায়ী তা বরাদ্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই চাহিদা পাঠানোর সময় এই বিষয়টি অবগত হয়ে চাহিদা পাঠানো উচিত ছিলো দপ্তরটির। প্রশাসন দ্রুতই এই সমস্যা সমাধান করবে।

মেডিকেল সেবা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাইমুন হক শিতন বলেন, সপ্তাহে ৭ দিন ও ২৪ ঘন্টা মেডিকেল সেন্টার খোলা রাখা উচিত। সেই সাথে নার্স, পর্যাপ্ত ঔষধ ও রোগ পরীক্ষার উপকরণ যুক্ত করাসহ  অভিজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে আমরা মানসম্মত চিকিৎসা পাচ্ছি না। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা সমাধান করবে বলে আশা করি।

এআই/এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি