ঢাকা, শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

২০১৭ : বিশ্ব মানবতার আর্তনাদের বছর

প্রকাশিত : ১৯:০৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৮:৪২, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

সিরিয়া থেকে কাতার, মিয়ানমার থেকে ইয়েমেন সর্বত্রই মানবতার করুণ আহাজারি। জাতিবিদ্বেষের শিকার রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে সীমান্তের পথে পথে। নারীরা গণধর্ষণ থেকে বাঁচতে দিচ্ছে আত্মাহুতি। অবরোধ আর বিমান হামলায় লাখ লাখ ইয়েমেনি জীবন সায়াহ্ণে দাঁড়িয়ে। সিরিয়ায় মৃত্যুর মিছিল থামছে না।

এছাড়া ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকাতে সন্ত্রাসী হামলায় শত-শত নিরীহ মানুষের জীবনহানি মানবতাকে খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছে। আর মানবতার এসব করুণ পরিণতিতে ২০১৭ সালটি বিশ্বের কাছে এক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা  আর ভয়াবহতার আতুঁড়ঘর হয়ে দেখা দিয়েছিল। এবার চলুন, দেখে নেওয়া যাক ২০১৭ সালের ঘটে যাওয়া কিছু আলোচিত ঘটনা-

রোহিঙ্গা সংকট

বিদায়ী বছরে বিশ্বজুড়ে প্রধান আলোচিত ঘটনা ছিল মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ ও গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা। জাতিসংঘ, ইউরোপিয় ইউনিয়ন,আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে জাতিগত নির্মূল অভিযান নামে চিহ্নিত করে। এছাড়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল ও সাধারণ কাউন্সিলে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধে প্রস্তাব পাশ হয়। একইসঙ্গে দেশটির উপর অবরোধ আরোপেরও চিন্তা-ভাবনা করে সংস্থা দুটি। তবে শেষ পর্যন্ত চীন ও রাশিয়ার ভেটোর কারণে সেখান থেকে পিছু হটে জাতিসংঘের ওই পরিষদ দুটি।

চলতি বছরের আগস্টের শেষের দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি সেনাচৌকিতে হামলা চালায় বিদ্রোহীরা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার কেবল সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কেই চটিয়ে তুলেন নি, একইসঙ্গে দেশটির হিন্দু ও খ্রিস্টানদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। এরই অংশ হিসেবে ওই নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায় বিদ্রোহীরা। তবে ওই হামলায় রোহিঙ্গাদের দায়ী করে অভিযান পরিচালনা করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে  পুড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকশ গ্রাম, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, ধর্ষণের শিকার হন অসংখ্য নারী। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত ১৪ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিককে হত্যা করেছে। ধর্ষণ করেছে অসংখ্য যুবতীকে।   

এদিকে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে পুরো বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অন্যদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নেয়। প্রথমে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদেরকে দেশে ঢুকতে বাঁধা দিলেও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রিন সিগনালে তাদের দেশে ঠাঁই দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভাষণে বলেন, আমরাও উদ্বাস্তু ছিলাম, আমাদেরও কয়েক লাখ মানুষ স্বাধীনতাকালে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাই আমরা তাদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির মতে বাংলাদেশে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে অনুপ্রবেশ করেছে। আর এতে সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে । তবে লাখো শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। এদিকে সরকারের নানামুখী কূটনৈতিক প্রচারণা ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। তবে কখন থেকে তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঠিক করেনি দেশটি।

ইয়েমেনে মানবতার মৃত্যু

একসময়ের জৌলুসপূর্ণ ইয়েমেন এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। সার্বক্ষণিক ভয় আর আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে দেশটি। দেশটির দেড় কোটিরও বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের কড়াল গ্রাসে মানবতার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। প্রতিদিনই দেশটিতে ডজন ডজন মানুষ ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এছাড়া সৌদি জোটের বিমান হামলায় ইয়েমেনের ভবনগুলো এখন একটি মৃত্যুর ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই দেশটিতে সৌদি জোটের হামলায় ডজন ডজন মানুষ মারা যাচ্ছেন। পঙ্গুত্ব বরণ করছেন হাজার মানুষ। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের এক কর্মী সেখান থেকে জানিয়েছেন, সানা এখন এক ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত ২০১৪ সালে । সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহর পৃষ্ঠপোষকতায় হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা আক্রমণ করলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদ ররোহ মনসুর হাদি সৌদি আরবে পালিয়ে যান। এরপর পুরো দেশটি দখলে নেয় হুতি বিদ্রোহীরা। পরবর্তীতে সালেহপন্থীদের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করে হুতি বিদ্রোহীর। এরপর ২০১৫ সালের মার্চে সৌদি আরব দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করে । এতে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সৌদি জোটের যুদ্ধ বেঁধে যায়।

দেশটিতে টানা দু’বছর ধরে সরকার ও বিদ্রোহী হুতি মিলিশিয়াদের মধ্যে চলছে সশস্ত্র লড়াই। এতে সৌদি আরব ইয়েমেনের বরখাস্থ সরকারকে ও ইরান হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে। এ যুদ্ধে প্রায় ১৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক লোক বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। দেশটির ২ কোটি ৭ লাখ মানুষ এখন মানবিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে। এদের মধ্যে ৯৮ লাখের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয় বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। এদিকে গত মঙ্গলবারও দেশটির একটি শপিংমলে হামলা চালিয়ে ৪০ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। সৌদির অবযোগ, ইরান হিজবুল্লাহর মাধ্যমে হুতি বিদ্রোহীদের দিয়ে ইয়েমেনে তার আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

সিরিয়ায় আইএসের পরাজয়: তবুও বিশ্বজুড়ে আইএস ফোবিয়া-

দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার বিমান হামলায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস সিরিয়ায় খেলাপত প্রতিষ্ঠা থেকে পিছু হটেছে। যুক্তরাষ্ট্র এতদিন ধরে আইএস লক্ষ্য বস্তুতে হামলা চালিয়ে আসলেও আইএসকে কোনভাবেই পিছু হঠানো যাচ্ছিল না। তবে বাসার আল আসাদের সমর্থনে রাশিয়া দেশটিতে বিমান হামলা শুরু করলে আইএস পিছু হঠতে থাকে। একইসঙ্গে বাসার-আল আসাদ বাহিনী, রুশ বাহিনী, মার্কিন বাহিনী ও সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চতুর্মূখী লড়াইয়ে সিরিয়া এক নরকে পরিণত হয়েছে। পাঁচ বছর ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৪৯ লাখ বেসামরিক নাগরিক। তাদের অনেককেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। এছাড়া দেশটিতে উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশ। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী দেশটিতে সাড়ে ১১ শতাংশ মানুষ ওই যুদ্ধে হতাহতের শিকার হয়েছেন।

এদিকে সিরিয়ায় আইএসের পরাজয় ঘটলেও বছরের প্রথম দিনটি থেকে প্রায় প্রতি মাসেই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও তাদের সমর্থকদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালের প্রথমদিনে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে একটি নাইট ক্লাবে হামলা চালিয়ে ৩৯ জনকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরবর্তীতে জানা যায়, জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের এক সমর্থক বন্দুক দিয়ে তাদের হত্যা করে। পরে ঘটনার দায় স্বীকার করে আইএস। ঘটনার কদিন না পেরোতেই যুক্তরাজ্যে হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। ২২ মার্চ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে এক জঙ্গি হামলায় পুলিশসহ পাঁচজন নিহত হন। মে মাসে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয় ২২ জন। পরের মাসেই লন্ডন ব্রিজে ভিড়ের মধ্যে ভ্যান চালিয়ে দিয়ে এবং ছুরি মেরে সাতজনকে হত্যা করা হয়।

এদিকে অক্টোবরে সোমালিয়ার মোগাদিসুতে ট্রাক বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় পাঁচশ। পরের মাসে মিশরের সিনাই উপত্যাকায় মসজিদে বন্দুকধারীদের হামলায় তিন শতাধিক মুসল্লীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নাইজেরিয়ায় আরেক মসজিদে হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হন।  ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে একটি মাজারে আত্মঘাতী হামলায় ৮০ জন নিহত হন। অক্টোবরে একই দিনে আফগানিস্তানের দুটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৭২ জনের মৃত্যু হয়। সব হামলার ঘটনায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকে দায়ী করেছে দেশগুলির গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।

ট্রাম্পের জেরুজালেম স্বীকৃতি: মানবতার কফিনে শেষ পেরেক-

তিন ধর্মের পবিত্রভূমি জেরুজালেম। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করায় ফুঁসে উঠেছে মুসলিম বিশ্ব। শুধু মুসলিম বিশ্ব-ই নয় জাতিসংঘ, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও চীন যুক্ত হয়েছে এ কাতারে। তবে আন্তর্জাতিক মত যেদিকেই যাক না কেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আছেন তার নিজেরে নিশানার উপর দাঁড়িয়ে। তিনি একচুলও টলবেন না বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। তাই ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ভূমি বাঁচাতে নেমে এসেছেন রাস্তায়। গাজায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তবে জান দিলে ভূমি ছাড়তে রাজি নন ফিলিস্তিনি নাগরিকরা। এরইমধ্যে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এবং প্রতিদিনই ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ট্রাম্পের জেরুজালেম  স্বীকৃতিকে মানবতার কফিনে শেষ পেরেক হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে, ইউনিসেফ, অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যালশান থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সবাই একবাক্যে ট্রাম্পকে তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকলে মধ্যপ্রাচ্যে নরক নেমে আসবে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছে। এতে ওই অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই মানবতার কফিনে শেষ পেরেক না দিতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে জেরুজালেম ইস্যুতে জাতিসংঘের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। জাতিসংঘের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘে চাঁদার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, মার্কিনিদের বিপক্ষে ভোট দিলে যে কোন দেশে অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেন তারা।

নিহত সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ

ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহকে গুলি করে হত্যা করেছে হুতি বিদ্রোহীরা। এ যেন ঘরের শত্রু বিভীষণের কাণ্ড। ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে আলী আবদুল্লাহ সালেহ হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে জোট বাঁধেন। সেই কোয়ালিশন চলছিলও ঠিকঠাক ভাবে। তবে গোলবাঁধে সৌদি জোটের বিমান হামলা আর অবরোধ। এতে দেশটিতে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে আছে, আন্তর্জাতক মহলের এমন পর্যবেক্ষণের পর সৌদি জোটের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করে সালেহ। তবে হুতি বিদ্রোহীরা তার এ ঘোষণাকে কোয়ালিশন সরকারের সঙ্গে প্রতারণা হিসেবে চিহ্নিত করে এর প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ব্যক্ত করে সংগঠনটি। এরপরই তাদের হাত থেকে বাঁচতে প্রাসাদ ছেড়ে নিজ গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন সালেহ। তবে পথিমধ্যে হুতি বিদ্রোহীরা তার পথ রোধ করে এলোপাথারি গুলি ছুঁড়তে থাকেন। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আলী আবদুল্লাহ সালেহ। এতে দেশটির শান্তি প্রক্রিয়া ভাগাড়ে গিয়ে পড়েছে বলে মত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের উপর যৌন নির্যাতন

অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের অনেক গোঁমর ফাঁস হয়েছে।  একইসঙ্গে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপর তার নির্যাতনের চিত্র উঠে এসেছে। এদিকে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীতে চাকরিরত নারী সদস্যদের যৌন নির্যাতন করা হয়। এ নির্যাতন চালান জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাই। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের এসব তথ্য দিয়েছেন সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় আশ্রয় নেওয়া এক নারী। এ ঘটনার পরই সারা বিশ্বজুড়ে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী নিয়ে নির্যাতনের বিষয়টি সামনে চলে আসে। ওই নারী সেনা বলেন, “আমরা সেখানে ঠিকমতো খেতে পারতাম না। গোসল করতে পারতাম না। সেনাবাহিনীর ঊর্ধতন কর্মকর্তারা আমাদের পালাক্রমে ধর্ষণ করতো। তবে আমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই।”

এর আগে উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়া পালিয়ে যাওয়া ২৬ বছর বয়সী তরুণী হি ইয়ন লিম দাবি করেছিলেন, উত্তর কোরিয়ার সুন্দরী স্কুলছাত্রীদের ধরে এনে গোপন ডেরায় যৌনদাসী করে রাখেন দেশটির নেতা কিম জং-উন। সেখানেই ওই কিশোরীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়। দেশটির নেতার নানা অত্যাচার পর্যবেক্ষণ করে ভয়ে ওই দেশ ছেড়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। পিয়ংইয়ংয়ে সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মেয়ে তিনি।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি বলছে, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানবেতর জীবন-যাপন করে। তারা শুরু ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের দ্বারাই নির্যাতিত নন, দেশটির নেতা কিম জিং উনের দ্বারা তারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। তাই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

দুর্যোগ, দুর্ঘটনা

এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি খায় ইরান। গত ১৪ নভেম্বর ইরাক ও ইরান মধ্যবর্তী সীমান্তে ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে ইরানের কেরমানশাহ এবং ইলাম প্রদেশ লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এ ঘটনায় ৫৪০ জন মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। আর একেবারে ধসে পড়েছে কমপক্ষে ১২ হাজার ঘর-বাড়ি।

এদিকে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবলীলা প্রত্যক্ষ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যাবিরীয় অঞ্চল। আগস্টের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে চার মাত্রার ঝড় হার্ভি ও এরপর সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় হিউস্টনের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। ৯০ জনের মৃত্যু ছাড়াও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৯৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এর আগে এত ক্ষতি কখনো হয়নি।

দশ দিনের ব্যবধানে এর চেয়েও শক্তিশালী ঝড় আরমা ক্যারিবীয় দ্বীপের দেশগুলোকে লণ্ডভণ্ড করে দেয়। এক শতকের মধ্যে আটলান্টিক মহাসাগর ও মেক্সিকো উপকূলে সৃষ্ট সবচেয়ে শক্তিশালী এ ঝড়ে অন্তত ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়। ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়ে যায় ৬৩ বিলিয়ন ডলার। দুই সপ্তাহের মধ্যে হারিকেন মারিয়া পাঁচ মাত্রার ঝড় হয়ে ডোমিনিকায় আঘাত হানে; এ ঝড়ে মৃতের সংখ্যা ছিল ৯৪, ক্ষতি ১০৩ বিলিয়ন ডলার।

এছাড়া সেপ্টেম্বরে মেক্সিকোর কেন্দ্রে ৭ দশমিক ১ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে সাড়ে তিনশর বেশি মানুষ নিহত হয়। এছাড়া ফিলিপাইন ও ভারতের তামিলনাড়ুতে বন্যা, রেকর্ড বৃষ্টিতে জাপানে বন্যা ও ভূমিধস, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় কয়েক দফা দাবানল, আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে খরা ও অনাবৃষ্টি, বছরের শেষ প্রান্তে ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট আগুংয়ে অগ্ন্যুৎপাত সংবাদের শিরোনাম হয়েছে।

/ এআর /

 

 

 

 

 

 

 

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি