২০৪৫-এর মধ্যেই মানুষের ইচ্ছামৃত্যু?
প্রকাশিত : ২২:২৮, ২৭ অক্টোবর ২০১৮
আর ২৭ বছর পর কি ‘পিতামহ ভীষ্ম’-এর মতো আমরাও ‘ইচ্ছামৃত্যু’র বর পাব? আমাদের মৃত্যুটা আর অনিবার্য থাকবে না? শুধু কোনও দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া আর কোনও ভাবেই মৃত্যু হবে না আমাদের? আমরা কি থামিয়ে দিতে পারব বার্ধক্যের ‘বিজয়রথ’ও? বয়সের হিসেবে বার্ধক্যে পৌঁছেও দেহে-মনে থাকতে পারব তরতাজা যুবা? অফুরন্ত হবে যৌবন?
এমনটাই দাবি করেছেন ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-র জেনেটিক্সের অধ্যাপক জোসে লুই কর্দেইরো ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ও জিনতত্ত্ববিদ ডেভিড উড। কোনও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে নয়, কর্দেইরো ও উড এই দাবি করেছেন তাঁদের প্রকাশিতব্য বই ‘দ্য ডেথ অফ ডেথ’-এ। বইটি ইংরেজি ছাড়াও ছাপা হচ্ছে স্প্যানিশ, পর্তুগিজ ও কোরীয় ভাষায়, শীঘ্রই।
তাঁদের বইয়ে এই দুই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার দাবি করেছেন, ২০৪৫ সাল নাগাদ মানুষ (যার প্রজাতির নাম- হোমো সাপিয়েন্স সাপিয়েন্স) আর কোনও প্রাকৃতিক কারণে বা রোগে ভুগে মারা যাবে না। সব রকমের স্বাভাবিক মৃত্যুকে পুরোপুরি জয় করে ফেলবে মানুষ। জন্মের মতো মৃত্যুটাও আর স্বাভাবিক থাকবে না। বার্ধক্য বলতে তখন মানুষ বুঝবে রোগ। আর সেই রোগ সারিয়ে মানুষকে বার্ধক্য থেকে ফের ‘যৌবন’-এ ফেরানো যাবে।
স্পেনের বার্সিলোনায় ইকোয়েস্ট্রিয়ান সার্কেল-এ তাঁদের এই দাবির সপক্ষে বলতে গিয়ে কর্দেইরো ও উড জানিয়েছেন, জিনের ওপর মানুষের ‘দাদাগিরি’-ই এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলবে। এই অবিশ্বাস্যকে করে তুলবে আক্ষরিক অর্থেই, বিশ্বাসযোগ্য। যে পদ্ধতিকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।
কী কী করা যাবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে?
তালিকাটা এতই লম্বা যে, কী করা যাবে না বললে কাজটা খুব সহজে হয়ে যায়! শিশুদের মধ্যেও যেমন ‘ভাল’ আর ‘দুষ্টু’রা থাকে, জিনের মধ্যেও থাকে তেমনটাই। সেই দুষ্টু শিশুকে আমরা যেমন বকেঝকে, শাসন করে ধীরে ধীরে ভাল করে তুলি, ঠিক তেমনই ‘দুষ্টু’ জিন (গুলি)-কেও আমরা ‘ভাল’, আমাদের পক্ষে ‘উপকারী’ করে তুলতে পারি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে। জিনের প্রযুক্তির জাদুতেই মরে যাওয়া কোষ, কলা (কোষের দল বা সমষ্টি, যাকে বলে টিস্যু)-গুলিকে আমাদের শরীর থেকে বের করে আনতে পারি।
মৃতকে কি কেউ দেহে পুষে রাখতে চায়? শরীরের যে কোষগুলি বিগড়ে গিয়েছে, যে ভাবে চলা উচিত, ঠিক সেই ভাবে চলছে না, বরং আমাদের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে বাধা দিচ্ছে, তাদের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে, সেই ‘মাথা বিগড়ে যাওয়া’ কোষগুলিকে আমরা জিনের প্রযুক্তি দিয়েই সারিয়ে তুলতে পারি। জিনের প্রযুক্তিটা সে ক্ষেত্রে যেন একটা ‘সংশোধনাগার’! বিগড়ে যাওয়া, বখে যাওয়া কোষগুলিকে ‘সুস্থ, সামাজিক স্রোত’-এ ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক করে তুলছে। স্টেম সেল দিয়ে শরীরের বিভিন্ন রোগজীর্ণ অংশ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে অনায়াসে সারিয়ে ফেলতে পারি। হৃদপিণ্ড, কিডনি, ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়ের মতো দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিকে ‘খেলতে খেলতে’ বদলে দিতে পারি, নতুন নতুন তরতাজা ‘থ্রি-ডি প্রিন্টেড’ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে।
এই দাবি যে দুই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারের, তাঁদের এক জন কর্দেইরো বলে দিয়েছেন, ‘ঠিক করেই ফেলেছি, আমি মরব না।’ এও বলেছেন, ‘‘৩০ বছর পর তো আর মরার কথাটাই ভাবব না।
টিআর/