২০ টার্কিতে খামার শুরু, মাসে আয় লাখ টাকা
প্রকাশিত : ১৫:২২, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১০:৪২, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭
টার্কি খামারি আলম মিয়া
জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য আলম মিয়া (২৭) জমি চাষ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু তাতে যা আয় হতো তা সংসার পরিচালনায় পর্যাপ্ত ছিল না। দারিদ্রের এ বেড়াজাল থেকে নিজেকে মু্ক্ত করতে টার্কি মুরগি পালন শুরু করেন। আত্মপ্রত্যয় ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি এখন সফল খামারি।
আলম মিয়ার বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার দুরাইল অঞ্চলে। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে নিজ বাসস্থানের পাশে ৫শতক জমির উপরে টার্কি খামার গড়ে তোলেন।
তিনি প্রথমে পিকেএসএফ ও জাকস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ২০টি বাচ্চা দিয়ে টার্কি পালন শুরু করেন। তাতে খরচ পড়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে পিকেএসএফ ও জাকস ফাউন্ডেশন থেকে তিনি পেয়েছিলেন ২৫,০০০ হাজার টাকা। রোগ-বালাই কম হওয়ায় মাচা পদ্ধতির মাধ্যমে টার্কি পালন শুরু করেন তিনি।
বড় আকারের গৃহপালিত এই টার্কির উৎপত্তি উত্তর আমেরিকায়। কিন্তু ইউরোপসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এটি পালন করা হয়। তুলনামূলকভাবে অনেক বড় এই পাখিগুলো দেখতে অনেকটা মুরগির মতো।
টার্কি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে ওঠার ছয় মাসের মধ্যে ডিম দেয়। ছয় মাসের মেয়ে টার্কির ওজন হয় পাঁচ থেকে ছয় কেজি। আর পুরুষ টার্কি হয় প্রায় আট কেজির। ১ টি টার্কি মুরগি বছরে ২০০ থেকে ২৫০ টি ডিম দেয়। ডিম দেওয়া টার্কিকে মুরগিও বলা হয়।
আলম মিয়ার খামারে টার্কি
আলম মিয়া ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২০টি টার্কি থেকে প্রায় ৪০০ টি বিক্রি করেছেন। বড় টার্কি, বাচ্চা এবং ডিম বিক্রি থেকে এ পর্যন্ত ৭ লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি। বর্তমানে খামারে আরও ১১০ টার্কি রয়েছে। বাচ্চা ফোটার অপেক্ষায় রয়েছে ৫০ টি ডিম। এখন ডিম দেওয়ার উপযোগী প্রতি জোড়া টার্কি বিক্রি করছেন আট হাজার টাকায়। প্রতি পিস ডিম বিক্রি করছেন ২০০ টাকা করে।
বর্তমানে আলমের মাসিক আয় ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। পাঁচবিবিতে আলমকে দেখে প্রায় ১০০ টি পরিবার টার্কি পালন শুরু করেছেন। তারাও ভাগ্যের চাকা বদলাতে চান।
খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টার্কির খাবার নিয়ে মুরগির চেয়ে দুর্ভাবনা কম। এরা ঠাণ্ডা-গরম সব সহ্য করতে পারে। দানাদার খাবারের চেয়ে কলমি শাক, বাঁধাকপি এবং সবুজ শাকসবজি বেশি পছন্দ করে।
পশ্চিমা দেশগুলোর টার্কির রোস্ট অভিজাত খাবার। আমাদের দেশে টার্কি রান্না করা হয় মুরগির মাংসের মত। রোস্ট ও কাবাব হিসেবেও টার্কির মাংস খাওয়া যায়। বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নাটোর ও কুমিল্লাসহ বেশ কিছু অঞ্চলে টার্কির চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
টার্কির লালন পালন নিয়ে খামারি আলম বলেন, টার্কি পালন থেকে আমি প্রতি মাসে গড়ে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করি। ২০১৬ সালের প্রথম দিক থেকে এ পর্যন্ত ১টি টার্কি মুরগি থেকেই ৭০ হাজার টাকার ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করেছি। এখন আমার খামারে প্রায় ১১০ টি টার্কি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ডিম ও মুরগি বিক্রি করার জন্য খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। বাসা থেকেই দোকানদার এবং আশপাশের এলাকার মানুষজন আমাদের কাছ থেকে ডিম ও মুরগি কিনে নিয়ে যায়।
টার্কির মাংস কতটা সুস্বাধু ও পুষ্টিকর সে সম্পর্কে জাকসের সহকারী পরিচালক ও কৃষি কর্মকর্তা ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে টার্কির মাংস বেশ জনপ্রিয়। ওইসব দেশে পাখির মাংসের মধ্যে হাঁস, মুরগি, কোয়েল এর পর টার্কির অবস্থান। টার্কি বর্তমানে মাংসের প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনীতিতে বেশ অবদান রাখছে। এছাড়া এ মাংসে প্রোটিন বেশি, চর্বি কম এবং আন্যান্য পাখির মাংসের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর।
টার্কির লালনপালনও অনেকটা নিরাপদ-এমনটাই জানালেন জাকস ফাউন্ডেশনের পশু ডাক্তার ডা. আসাদ। বলেন, সাধারণত টার্কি মুরগির বড় ধরনের কোনো রোগ-বালাই দেখা দেয় না। তবে রাণীক্ষেত এবং সালমোনেলোসিস (পায়খানার সঙ্গে রক্ত আসা) রোগ দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা এবং সঠিকভাবে পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন রাখলে রোগ বালাই হয় না বললেই চলে।
এম/এএ/ এআর
আরও পড়ুন