প্রধানমন্ত্রীর সায় পেলেই প্রজ্ঞাপন
৩৫-ই হচ্ছে চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা
প্রকাশিত : ১৭:২০, ১৭ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১৮:০৫, ১৮ অক্টোবর ২০১৮
শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মেয়াদের শেষ সময়ে এসে চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে। কিছুদিন আগে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। প্রস্তাবনার খসড়াটি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সায় দিলে শিগগিরই মন্ত্রিসভা বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিলেই প্রজ্ঞাপন জারি করবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি মিললেই মন্ত্রিসভা হয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সাধারণ বয়স ৩০বছর। আর অবসরের বয়স ৫৯ বছর। এবিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা ৩৫ বছর করার প্রস্তাব করলেও সরকার ইচ্ছা করলে সেটা আরও বাড়াতে পারে। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে এখনো কিছু বলতে পারেননি তাঁরা। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর।
অবশ্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীরা বলছেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছরই করতে হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির দাবিতে গড়ে ওঠা সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্ববায়ক সঞ্জয় দাস একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা ৩৫ বছর করে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি না করা হবে ততদিন পযর্ন্ত আন্দোলন চলবে। দাবি আদায়ে আগামী ১৮,১৯,২০ তারিখে শাহবাগ জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপরও যদি দাবি না আদায় হয় আন্দোলন চলমান থাকবে।
তিনি আরো বলেন, আগে যেখানে একজন ছাত্র ৪/৫ বছর বয়সে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হয়ে ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সে এসএসসি পাস করতে পারত, এখন সেটা ১৬ বছরের আগে কোনক্রমেই সম্ভব নয়। স্নাতক ও সম্মান উভয় ক্ষেত্রে ১ বছর করে বৃদ্ধি করে যথাক্রমে ৩ ও ৪ বছর করা হয়েছে। সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকের দুই বছর যোগ করলে একজন সম্মান পাস ব্যক্তির বয়স দাড়ায় ২২ বছর।
অপরদিকে, তিন বছর স্নাতকধারীর বয়স হয় ২৩ বছর। তাছাড়া, ফল প্রকাশ, ভর্তি এসব কাজেও একজন শিক্ষার্থীর এক-দুই বছর চলে যায়। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে চাকরিতে প্রবেশের নিম্নসীমা ১৮ বছরও অযৌক্তিক। তাই রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের দাবি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হোক।
চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, গত দুই মাস আগে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি চাকরিতে বয়সের সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করছে। আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে যেকোনো সময় এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিন্ধান্ত আসতে পারে। প্রধানমন্ত্রী কাছে আমাদের অনুরোধ দেশে শিক্ষিত বেকারদের কথা মাথায় রেখে আমাদের দাবি মেনে নিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যে সুপারিশ করা হয়েছে অবশ্যই যৌক্তিক। আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবিষয় নীতিনির্ধারকরা ভালো বলতে পারবেন।
চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাবনা এখন কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয় কোনো মন্তব্য করতে চানটি।
কোটা আন্দোলেন আগের চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে তবে কেন বয়সসীমা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোটা আন্দোলন কত তারিখ শুরু হয়েছে বা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলন কবে হয়েছে এটাও আমার জানা নেই। তাই এবিষয় আমি কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আলোচনা হচ্ছে, প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি, খুব তাড়াতাড়ি হবে। খুব তাড়াতাড়িই জানতে পারবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের আগে দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর। ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে সেটা বাড়িয়ে করা হয় ৩০ বছর।
এরপর ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সরকারি চাকরিতে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়স এক বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করা হয়।
অবসরের বয়স বাড়ানোর কারণে সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের সংখ্যা কমে যায়। ফলে চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি পাওয়ার পথ সংকুচিত হয়। পাশাপাশি একদিকে চাকরিতে তীব্র প্রতিযোগিতা, আরেক দিকে শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরি পেতেও অনেকের দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
এজন্য অবসরের বয়স বাড়ানোর পর থেকেই চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা মানববন্ধন, অনশনসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই দাবি আরও জোরালো হয়। জাতীয় সংসদেও বিষয়টি আলোচনা হয়। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দিচ্ছিল না। এর মধ্যে গত জুনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৯ তম সভায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার সুপারিশ করা হয়। এর আগে কমিটির ২১ তম সভায় ৩২ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছিল।
/ এআর /