ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

৪৭ বছর পর ভাই-বোনের সাক্ষাৎ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৫১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

একটি বেসরকারি সংস্থার কল্যাণে দীর্ঘ ৪৭ পর এক বোন পেল বড় বোন ও ছোট ভাইকে। জীবনসায়াহ্নে এসে ১০১ বছরের বোন বুন চেয়া এবং ছোট ভাইর (নাম জানা যায়নি) সাক্ষাৎ পেলেন ৯২ বছর বয়সী আরেক বোন বুন সেন। এক আবেগঘন মুহূর্তে একে অপরের মুখটি দেখলেন তারা। তাদের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ১৯৭৩ সালে।

১৯৭০ এর দশকে কম্বোডিয়ায় খেমাররুজের সন্ত্রাসের রাজত্বের সময় পরিবার থেকে এরা সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যান।  খেমাররুজ শাসনামলে প্রায় ২০ লাখ মানুষ নিহত হন। সেই থেকে আর দেখাসাক্ষাৎ নেই তাদের।

বুন সেন ধরে নিয়েছিলেন ওই সময় তার পরিবারের সবাই মারা গেছেন। এ সময়ে অসংখ্য পরিবার ভেঙেচুরে গেছে। অনেক সন্তানকে পিতামাতার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। এ সময়ে কমিউনিস্টরা পুরো দেশে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের জন্য চাপ সৃষ্টি করে।

পলপটের শাসন আমলে স্বামী হারান বুন সেন। এরপর তিনি অবস্থান নেন রাজধানী নমপেনের ময়লার ভাগাড় বলে খ্যাত স্টাং মিনচে’তে। অনেক দিন সেখানে ময়লা আবর্জনার মধ্যে বর্জ্য পদার্থ খুঁজে বেরিয়েছেন। তা বিক্রি করেছেন। আবার শিশুদের যত্ন নিতেন। 

তাদের বাড়ি ছিল কামপং চাম প্রদেশের এক গ্রামে। সেই গ্রামে বেড়াতে যাওয়ার স্বপ্নের কথা সব সময়ই তিনি বলতেন। কিন্তু বয়স, হাঁটতে না পারার কারণে তার জন্য এই দীর্ঘ পদ পাড়ি দেয়া সম্ভব হয়নি।

২০০৪ সাল থেকে বুন সেন’কে দেখাশোনা করতে থাকে এনজিও কম্বোডিয়ান চিলড্রেনস ফান্ড। তারাই বুন সেনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। তারা অনুসন্ধান করে জানতে পারেন, বুন সেনের এক বোন ও এক ভাই এখনও জীবিত। তারা নিজেদের সেই গ্রামেই বসবাস করছেন। 

বড় বোন বুন চেয়া এবং ছোট ভাই (নাম জানা যায় নি)-এর সঙ্গে বুন সেনের দ্রুত সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি চলতে থাকে। অবশেষে গত সপ্তাহে তিন ভাইবোনের মিলন হয় প্রায় অর্ধশত বছর পরে। 

তারা হারিয়ে যান অতীতের দিনগুলোতে, যখন সবাই এক সঙ্গে থাকতেন। অনেক স্মৃতি তাদের চোখে ভাসতে থাকে। এত বছর পরে ভাইবোনের মিলনমেলা পরিণত হয় এক হাসি-আনন্দের উৎসবে।

বুন সেন বলেন, আমি অনেক বছর আগে গ্রাম ছেড়ে গিয়েছিলাম। তারপর আর ফিরি নি। সব সময়ই ভাবতাম ভাই ও বোন মারা গেছে। এখন বড় বোনের হাতটা ধরতে পারছি- এই পাওয়া যে আমার কাছে কি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমার ছোটভাই প্রথমবার আমার হাত যখন স্পর্শ করলো আমি তখন শুধু অঝোরে কেঁদেছি।

বড় বোন বুন চেয়ার স্বামীকে হত্যা করেছে খেমাররুজরা। তিনিও মনে করতেন, তার ছোটবোন বুন সেন মারা গেছে। তিনি বলেন, পলপট আমাদের ১৩ জন আত্মীয়কে হত্যা করেছে। মনে করেছিলাম তার মধ্যে ছিল বুন সেন।

এখন একে অন্যকে কাছে পেয়ে আনন্দে ভেসে যাচ্ছেন তারা। এখান থেকে ওখানে ছুটছেন। ঘুরে ঘুরে দেখছেন নিজেদের গ্রাম, চেনা পরিবেশ কিভাবে পাল্টে গেছে।

সূত্র : বিবিসি
এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি