৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিপৎসীমার নিচে নামবে বন্যার পানি
প্রকাশিত : ১৭:৫৯, ২৮ জুলাই ২০১৯
বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে এখনো দেশের নদ-নদীর ১৩টি পয়েন্ট বিপৎসীমার মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান ভুইয়া। তবে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে যাবে বলেও জানান তিনি।
রোববার (২৮ জুলাই) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি। পাউবোর নির্বাহী এই প্রকৌশলী বলেন, বর্তমানে যমুনা, ব্রক্ষ্মপুত্র, কুশিয়ারা সুরমা নদ- নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। ভারী বন্যা না হলে এসব নদ-নদীর পানি দ্রুত নেমে যাবে।
এ সময় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দীন আহমেদ জানান, আগামী ১০ দিনে বড় ধরনের বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই। বঙ্গোপসাগরে যে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেয়া রয়েছে, তা আস্তে আস্তে তুলে নেয়া হবে।
আগামী দুই সপ্তাহ দেশের মধ্যে এবং উজানে দেশের বাইরে ভারী বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। এ সময় বন্যা পরিস্থিতি আর অবনতির কোনো আশঙ্কা নেই বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘গত সপ্তাহের শেষ থেকে সারাদেশে এবং দেশের উজানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেছে। এ কারণে দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি শনিবার থেকে হ্রাস পাওয়া শুরু করেছে। এ মুহূর্তে সব জায়গায় পানি হ্রাস পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহের শেষদিন বিপৎসীমার ওপরে ছিল। গতকাল (শনিবার) ১৭টি পয়েন্টে, আজ (রোববার) সকাল ৯টায় ১৩টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্টেশন ভেদে বিপৎসীমার ১-২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সব কয়টি পয়েন্টে দ্রুত পানি হ্রাস পাচ্ছে।’
নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘আশা করছি আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব পয়েন্টে পানি নেমে (বিপৎসীমার নিচে) যাবে। তবে যে সব জায়গায় বেশি বন্যা আক্রান্ত ছিল যেমন- জামালপুর, গাইবান্ধায় অনেক ভেতরে পানি ঢুকে গেছে, সে জায়গা থেকে পানি নামতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।’
‘এ সপ্তাহে দেশে এবং উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই এবং আগামী সপ্তাহেও ভারী বৃষ্টিপাতের লক্ষণ দেখছি না। নদ-নদীর পানি হ্রাস আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে বড় বন্যার ঝুঁকি আমাদের দেশে নেই’- বলেন আরিফুজ্জামান।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বলেন, ‘গত ছয়-সাতদিনে উত্তরাঞ্চলে দু-একটি জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছিল, সেটি কমে যাচ্ছে। সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তা ৩০ থেকে ৩৫ মিলিমিটারের মধ্যে ছিল।’
পরিচালক বলেন, ‘আগামী ১০ দিন ভারতীয় অংশে বাংলাদেশের উজানে বিশেষ করে নেপাল, আসাম, মিজোরাম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। তবে হালকা ধরনের বৃষ্টিপাত হবে। একই সাথে বাংলাদেশেরও বিভিন্ন অংশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হবে।’
বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত বহাল রয়েছে জানিয়ে আবহওয়া অধিদফতরের পরিচালক বলেন, আমরা আশা করছি আগামী দু-একদিনের মধ্যে এ সতর্কতা সংকেতও তুলে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।রোববার (২৮ জুলাই) সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৬ থেকে ৭ জুলাই সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। ১০ জুলাই উজান থেকে নেমে আসা পানি ও দেশের ভেতরে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে ২৮ জেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যাকবলিত হয়।
বন্যা দেখা দেয়া জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, শেরপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর।
এর মধ্যে ১৪ জেলায় বন্যাজনিত কারণে এখন পর্যন্ত ৭৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বন্যায় ২৮ জেলার ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ৪১৫ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
আরকে/
আরও পড়ুন