৫ টাকার দিনমজুর থেকে কোটিপতি কুস্তিগীর
প্রকাশিত : ১২:১৫, ১৮ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১২:১৬, ১৮ আগস্ট ২০১৯
গোটা দুনিয়া তাকে দ্য গ্রেট খালি হিসেবেই চেনে। ভারতের হিমাচল প্রদেশের একটি গরিব পরিবারের ছেলে কীভাবে ‘দ্য গ্রেট’ হয়ে উঠলেন? আসলে তার এই গ্রেট হওয়ার পিছনে যে কাহিনি রয়েছে তা শুনলে তাজ্জব হয়ে যেতে হয়। ‘দ্য ম্যান হু বিকেম খালি’ এই বইটিতেই রয়েছে তার সাফল্যের কাহিনি।
হিমাচলের সিরমোর জেলার ধিরাইনা গ্রামের এক গরিব পাঞ্জাবি রাজপুত পরিবারে জন্ম খালির। দুনিয়া তাকে খালি হিসেবে চিনলেও, তার আসল নাম দলীপ সিংহ রাণা। সেই দলীপ ছিলেন ডব্লুডব্লুই-র এক খ্যাতনামা মুখ। ভারতের প্রথম কুস্তিগীর যিনি ডব্লুডব্লুই-তে অংশ নিয়েছেন।
খালির ছোটবেলায় এমনও দিন গেছে, যে আড়াই টাকা স্কুলের ফি দেওয়ার মতো সামর্থ্যও ছিল না তার পরিবারের।
‘দ্য ম্যান হু বিকেম খালি’- এই বইতে খালি বলেছেন, সাল ১৯৭৯। সে বছরে প্রচুর গরম ছিল। ফলে তার পরিবার ফসলের যে চাষ করেছিল সব শুকিয়ে যায়। পরিবারের হাতে টাকা ছিল না। ফলে স্কুলের ফি-ও দিতে পারেননি। আর ফি দিতে না পারার জন্য স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল তাকে।
খালির দাবি, স্কুলের শিক্ষক অন্য ছাত্রদের সামনে তাকে অপমান করেছিলেন। বইতে খালি এ প্রসঙ্গে বলেন, সে দিন খুব খারাপ লেগেছিল আমার। স্কুলের সহপাঠীরাও হাসি-ঠাট্টা করতে শুরু করে।
আর এর পরই খালি সিদ্ধান্ত নেন আর স্কুলে যাবেন না। স্কুলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দিনমজুরের কাজে লেগে পড়েন তিনি।
দিনমজুরের কাজ করার পাশাপাশি বাবার চাষের কাজেও সাহায্য করতেন। মাত্র আট বছর বয়স থেকেই মজুরের কাজ শুরু করেন খালি। এর জন্য মজুরি হিসেবে দৈনিক ৫ টাকা পেতেন। আর এই ৫ টাকাই ছিল একরত্তি ছেলের কাছে বড় মূলধন।
খালিরা সাত ভাইবোন। ছোটবেলায় খালি অ্যাক্রোমেগালি নামে এক দুর্লভ রোগের শিকার হন। তার পর থেকেই তার চেহারায় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। এই রোগের বিশেষত্ব হল, দেহের আকৃতি বিশাল হয়। মুখ লম্বাকৃতি হয়।
তার বিশাল চেহারার জন্য খালি এর পর শিমলাতে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ পান। আর এই কাজ করার সময় এক পুলিশ আধিকারিকের চোখে পড়েন তিনি। ১৯৯৩-তে পাঞ্জাব পুলিশে যোগ দেন তিনি।
তবে পুলিশ নয়, কুস্তিগীর হওয়ার লক্ষ্য ছিল খালির। তাই জালন্ধরে পৌঁছেই জিমে ঢোকেন। নিজেকে কুস্তিগীর হিসেবে প্রস্তুত করেন। ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে পরপর দু’বার মিস্টার ইন্ডিয়া হন তিনি।
এর পরেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্পেশাল রেসলিং ট্রেনিংয়ের জন্য ডাক পান খালি। ২০০০-এ প্রথম পেশাদার রেসলার হিসেবে ‘জায়ান্ট সিংহ’ নামে অল প্রো রেসলিংয়ে নামেন।
২০০৬-এ প্রথম ভারতীয় পেশাদার রেসলার হিসেবে ডব্লুডব্লুই-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। ২০০৭-এ ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট বিভাগে ডব্লুডব্লুই চ্যাম্পিয়ন হন।
এই মুহূর্তে বছরভর ডব্লুডব্লুই থেকে বেতন পান প্রায় ৭ কোটি টাকা যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আর বোনাস পান ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ কোটি ৫৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এছাড়া ব্র্যান্ড এনডর্সমেন্ট প্রায় ১৮ লাখ টাকা যা বাংলাদেশি টাকায় ২১ লাখ ৪২ হাজার টাকা পান।
(আনন্দবাজার অবলম্বনে)