৬৬ বছর বয়সে ১৪৬ কি.মি. সাঁতরাতে নেমেছেন তিনি
প্রকাশিত : ১৯:২৫, ৫ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ১০:৩৬, ৬ আগস্ট ২০১৭
নতুন রেকর্ড গড়ার লক্ষ্য নিয় মাত্র ৬৬ বছর বয়সে আবারো সাঁতরাতে নামলেন ক্ষিতিন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। নেত্রকোনার মদন উপজেলার এই কৃতী সাঁতারুর ইচ্ছা ১৪৬ কিলোমিটার সাঁতার কেটে নতুন রেকর্ড গড়া।
শুক্রবার বিকেলে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার কংস নদের সরচাপুর সেতু থেকে সাঁতার শুরু করে শনিবার বেলা ২টায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার টেউটুকুন ঘাটে পৌঁছেছেন তিনি।
ফুলপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও মদন উপজেলা নাগরিক কমিটি যৌথভাবে এ আয়োজন করে। এতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার কংস নদের সরচাপুর সেতু থেকে নেত্রকোনার মদন উপজেলার মগড়া সেতু পযর্ন্ত ১৪৬ কিলোমিটার সাঁতার কাটবেন ক্ষিতিন্দ্র।
ফুলপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এমএ হাকিম সরকারেরর সভাপতিত্বে শুক্রবার বিকেলে ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ সাঁতারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রখ্যাত সাঁতারু ক্ষিতিন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় পানিতে নামে। এ সময় হাজারও মানুষ করতালি দিয়ে তাকে উৎসাহ দেন।
ক্ষিতিন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের বাড়ি নেত্রকোনার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুরে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এএনএস কনসালট্যান্ট হিসেবে চাকরি করে বর্তমানে অবসর গ্রহণ করেছেন।
১৯৭০ সালে সিলেটের ধুপাদীঘি পুকুরে অরুণ কুমার নন্দীর বিরামহীন ৩০ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনী দেখে তিনি সাঁতারে উদ্বুদ্ধ হন। পরে একই বছর মদনের জাহাঙ্গীরপুর উন্নয়ন কেন্দ্রের পুকুরে তিনি ১৫ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে এলাকায় আলোচিত হন। এটিই তার প্রথম সাঁতার। পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে সিলেটের রামকৃষ্ণ মিশন পুকুরে ৩৪ ঘণ্টা, সুনামগঞ্জের সরকারী হাইস্কুলের পুকুরে ৪৩ ঘণ্টা, ১৯৭৩ সালে ছাতক হাইস্কুলের পুকুরে ৬০ ঘণ্টা, সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে ৮২ ঘণ্টা এবং ১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শন করে জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করেন। জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করায় ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ডাকসুর উদ্যোগে ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল করা হয়। ১৯৭৬ সালে তিনি জগন্নাথ হলের পুকুরে ১০৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতার প্রদর্শন করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জগন্নাথ হলের পুকুর পাড়ে স্মারক ফলক নির্মাণ করে।
ভারতেও দূরপাল্লার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। ১৯৮০ সালে মাত্র ১২ ঘণ্টা ২৮ মিনিটে মুর্শিদাবাদের ভাগিরথী নদীর জঙ্গীপুর ঘাট থেকে গোদাবরী ঘাট পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেন। সাঁতার প্রদর্শনী ও রেকর্ড সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
সাঁতারু ক্ষিতিন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য বলেন, সিলেটে অরুণ কুমার নন্দীর একক সাঁতার দেখে আমি সাঁতার প্রদর্শনীতে উদ্দীপনা পেয়েছি। শেরপুর নালিতাবাড়ী থেকে সাঁতার দেয়ার কথা থাকলেও নানা প্রতিকূলতায় ফুলপুর সরচাপুর কংস থেকে সাঁতার শুরু করছি। জীবনে অনেক সাঁতার কেটেছি, এটাই হবে হয়তো আমার শেষ সাঁতার। মদন নাগরিক কমিটি ও ফুলপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ এমন একটি সাঁতারের আয়োজন করার জন্য।
ডব্লিউএন
আরও পড়ুন