পর্ব-১
৭০ পদের ভর্তা তোতা মিয়ার হোটেল নিরিবিলিতে
প্রকাশিত : ০০:০৯, ২ নভেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১২:১৬, ৬ নভেম্বর ২০১৮
ব্র্যান্ডিং কী হতে পারে তার দূর্দান্ত উদাহরন তোতা মিয়ার হোটেল নিরিবিলি। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হলেও এই হোটেলের খাবারের সুঘ্রাণ পৌঁছে গেছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। ৭০ পদ দিয়ে তৈরি ভর্তার স্বাদ নিতে এই হোটেলে ভীড় জমান দূর দূরান্ত থেকে আসা অতিথিরা।
বলা হচ্ছে গাজীপুর কাপাসিয়ার টোক নয়ন বাজারের হোটেল নিরিবিলির কথা। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে হোটেলটি এখন ভোজন ও ভ্রমণ রসিকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে ৭০ পদ দিয়ে তৈরি এক থালা ভর্তা কুড়িয়েছে সবার প্রশংসা।
৭০ পদে এই এক থালা ভর্তার দাম পরবে ১০০ টাকা। তবে তা দিয়ে অনায়াসেই খেতে পারবেন তিন জন। ভর্তার মধ্যে আছে চিকেন ভর্তা, শুটকি ভর্তা, কলা ভর্তা, কাসুন্দি ভর্তা, কালিজিরা, সিম ভর্তাসহ আরও কয়েকটি ভর্তা। এছাড়াও আছে কোয়েল পাখির ডিম, আস্ত কোয়েল পাখি, কবুতর, চিকেন কারি, বিভিন্ন ধরণের মাছ। যারা সবজি পছন্দ করেন তাদের জন্য আছে সবজির থালাও। সেখানে আছে বেগুন ভাজি, চিচিংগা ভাজি, আলু ভাজি, করল্লা, ভেন্ডি-শবজিসহ নানান পদ। এছাড়াও বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে মাসকলাই এর ডাল। আর এই সব খাবারই পাওয়া যাবে খুবই সুলভ মূল্যে।
২০০৬ সালে কাপাসিয়ায় নিজের বাড়িতেই এই হোটেলের কার্যক্রম শুরু করেন তোতা মিয়া। প্রথমে বাসায় রান্না করা খাবার ছোট পরিসরে বিক্রি করতেন তিনি। এখন সেই বাসায় পালা করে রান্না করেন ১০ থেকে ১৫ জন নারী রাধুনী।
তোতা মিয়া জানান, এসব খাবার নিজের বাড়িতেই রান্না করা হয়। হোটেলে পাওয়া বিভিন্ন মাছ বাড়ির আশেপাশের পুকুর থেকেই সংগ্রহ করেন তিনি। যার ফলে দেশিয় মাছের নাম শুনলেই যাদের জিভে জল এসে যায় তাদের জন্য দারুণ এক খোড়াক হতে পারে হোটেলটি।
কক্সবাজারের একটি হোটেলে বয়ের কাজ করতেন তোতা মিয়া। সেই থেকে খাবার নিয়েই আছেন তিনি। সেখানে প্রায় এক যুগের কাজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজ জেলায় ফিরে এসে চালু করেন এই হোটেল। তোতা মিয়ার মতে, তার হোটেলে আসা অতিথিদের প্রতি আন্তরিক সেবার কারণেই এতটা জনপ্রিয় হয়েছে হোটেল নিরিবিলি। একই সাথে এর খ্যাতির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দেশের গণমাধ্যমগুলোর প্রতি।
তোতা মিয়া বলেন, “শুরু থেকেই আমার একটা বিশ্বাস ছিলো যে, ভর্তা দিয়ে হোটেলের শুরু করলে তা ভালো চলবে। মানুষ ভর্তা খুব পছন্দ করে। সেই সাথে আমি আমার মেহমানদের খুব যত্ন নিয়ে খাওয়াই। সবমিলিয়ে এটা খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। এরজন্য মিডিয়াও আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। একুশে টিভি, এটিএন, চ্যানেল ২৪ সহ বেশ কয়েকটি মিডিয়া আমাদের নিয়ে লিখেছে। আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ”।
নিজ হোটেলের জনপ্রিয়তা বর্ণনা করতে গিয়ে তোতা মিয়া আরও বলেন, “আমার এখানে খাবার এতে ইংল্যান্ড, ইরান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এসেছেন। কয়েক দিন আগে কলকাতা থেকে একদল লোক আসেন। তারা কলকাতায় হোটেল নিরিবিলির একটা শাখা খুলতে চান। কিন্তু আমি তো এই একটা হোটেলই সামাল দিতে পারি না। আমি রেসিপি বলে দিলাম। কিন্তু তাও তারা আমার মতো করে ভর্তা বানাতে পারেন না। দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও আমার এখানে এসে খাবার খেয়েছেন। আমি খুব খুশি”।
একজন ব্যবসায়ী হওয়ার পাশাপাশি তোতা মিয়ার আছে সমাজ সেবক এবং জনদরদির পরিচয়। নিজ এলাকার প্রায় ৬০০ ছাত্রীর পড়ালেখার দায়িত্বে আছেন তিনি। এছাড়াও খেলাধূলার প্রতি আছে ব্যাপক আগ্রহী।
ব্যক্তি তোতা মিয়ার নানান দিক থাকবে এই প্রতিবেদনের দ্বিতীয় অংশে।