৮ মার্চ: সর্বাত্মক অসহযোগের দ্বিতীয় পর্যায়
প্রকাশিত : ০৮:২৬, ৮ মার্চ ২০২২
একাত্তরের ৮ মার্চ ছিল আগের সাতটি দিনের চেয়ে আলাদা। আগের দিন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে মুক্তির মন্ত্র পেয়ে যাওয়ায় নতুনভাবে জেগে উঠে বাঙালি।
রেসকোসের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার মুক্তিকামী মানুষকে যে ১০ নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার ভিত্তিতেই ৮ মার্চ থেকে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেয়।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ৮ মার্চ সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা বেতার থেকে সম্প্রচার করা হয়। প্রদেশের অন্যান্য বেতার কেন্দ্র থেকেও তা সম্প্রচার করা হয়।
ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সহ-সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন সেদিন একটি যৌথ বিবৃতি দেন।
সেখানে বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানানো হয়।
রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষিত নির্দেশনার ব্যাখ্যায় বলেন, ব্যাংকগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় বিভাগগুলো খোলা থাকবে। সার সরবরাহ ও পাওয়ার পাম্পের ডিজেল সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।
পোস্ট অফিস সেভিংস ব্যাংক খোলা থাকবে। পানি ও গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।
সরকারি এক প্রেসনোটে সেদিন দাবি করা হয়, আন্দোলনে ১৭২ জন নিহত হয়েছেন; আহত ৩৫৮ জন।
তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ আরেকটি বিবৃতিতে ওই প্রেসনোটের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, হতাহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে বলা হয়েছে।
ব্রিটেন প্রবাসী প্রায় ১০ হাজার বাঙালি এদিন লন্ডনে পাকিস্তান হাই কমিশনের সামনে স্বাধীন বাংলার দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে যে শর্ত দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পিপলস পার্টির চেয়াম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টোকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। কিন্তু ভুট্টো কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তৎকালীন ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ’ সংগঠনের নামের আগে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ অংশটি বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় এদিন।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সিনেমা হলগুলোতে পাকিস্তানের পতাকা প্রদর্শন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন বন্ধ রাখা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য ও তখনকার পশ্চিম জার্মানির ১৭৮ জন নাগরিক এদিন ঢাকা ছেড়ে চলে যান।
এসএ/