লড়াই-সংগ্রামের হাজার বছরে স্বরূপ হারায়নি বাংলা ভাষা (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১১:৫১, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
লড়াই-সংগ্রামের হাজার বছরে পরাজিত হয়নি বাংলা ভাষা (ভিডিও)
প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয় ইন্দো ইউরোপীয় গোত্রে। সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপত্তির জনশ্রুতি থাকলেও ভাষাবিদরা মনে করেন, বাংলা মাগধী প্রাকৃত এবং পালির মতো ইন্দো আর্য ভাষা থেকে এসেছে, আর এরই ধারাবাহিকতায় বাংলার উদ্ভব।
বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। যা পৃথিবীর সর্বাধিক ব্যবহৃত মাতৃভাষা হিসেবে পঞ্চম স্থানে।
একসময় সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব বলে ধারণা করা হলেও আধুনিক গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা।
লেখক গবেষক অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “বাংলা ভাষার জন্ম নিয়ে দুটি মত আছে। একটা মত, ড. সুনীতি কুমার চট্টপাধ্যায় বলেছিলেন মাগধি প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার জন্ম। বিভিন্ন ভাষাতাত্ত্বিক যুক্তি দিয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমাণ করলেন বাংলা ভাষার জন্ম মাগধি প্রাকৃত থেকে নয় গৌরীয় প্রাকৃত থেকে। গৌরীয় প্রাকৃত বলতে রাজশাহীতে শুরু করে মালদা এই অঞ্চলের যে ভাষা সেখান থেকে আস্তে আস্তে বাংলা ভাষার জন্ম। বাংলা ভাষার জন্ম সংস্কৃত ভাষা থেকে হয়েছে এটা একেবারেই ভুল তথ্য।”
বিবর্তন ও বিকাশের মাধ্যমে বাংলা বর্তমান রূপ পেয়েছে। বিবর্তনের তিনটি পর্যায় হচ্ছে পুরাতন, মধ্য ও আধুনিক বাংলা।
লেখক গবেষক অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী বলেন, “বাংলা ভাষা তখন কিন্তু নিঃস্বাদের ভাষা, এর সাথে বৈরি ভাষা, পালির ভাষাকে নিয়েই এগুতে থাকলো। যেটি আমরা ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে চর্চা পদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজি যখন বাংলা অধিকার করলেন তখন বাংলা ভাষায় তুর্কি শব্দ যোগ হলো। এর মধ্যে বনিকেরা এসেছে তাদের মাধ্যমে আরবি ভাষা ঢুকেছে। এসেছে পর্তুগিজ- এভাবে চলতে চলতে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির আম্রকাননে নবাবের পরাজয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন। সেই শোষণের ভেতর দিয়ে ইংরেজি আমাদের উপর চেপে বসলো। কিন্তু একটা লক্ষনীয় বিষয়, বাংলা ভাষা কখনই তার স্বরূপ হারায়নি।”
প্রায় ১৩০০ বছরের দীর্ঘ বিবর্তনে বাংলা ভাষার সাথে যুক্ত হয়েছে প্রচুর স্থানীয় ও বিদেশি শব্দ। ১৯ শতকে রাজা রাম মোহন রায় ও বিদ্যাসাগরের হাতে বাংলা আধুনিক রূপ পায়। এভাবেই বিবর্তন ও বিকাশের মাধ্যমেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলা ভাষা।
ভাষা সর্বদাই পরিবর্তনশীল, বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলা ভাষায় প্রচুর ইংরেজিসহ বিদেশি শব্দের ব্যবহার হচ্ছে।
অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী বলেন, “১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি উর্দু ভাষার কর্তৃত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করবার জন্য রক্ত দিয়েছে। বাঙালির ভাষার জন্যে, বাংলা ভাষার জন্যে আর বাংলা ভাষার অস্তিত্বের লড়াইয়ে হাজার বছর ধরে শুধু লড়াই-সংগ্রাম, সেই লড়াই-সংগ্রামে একটি বারের জন্যেও বাংলা ভাষা পরাজিত হয়নি।”
বর্তমানে বাংলা ভাষা শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও এটা চূড়ান্ত রূপ নয় বলেও মনে করেন গবেষকরা।
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “ভাষা বিকশিত হয়। কালে কালান্তরে আজকে যে ভাষায় আমরা কথা বলছি, একশ’ বছর এই ভাষার রূপান্তর ঘটবে। কি হবে তা জানিনা কিন্তু রূপান্তর ঘটবেই।”
এএইচ