মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে মালয়েশিয়ায় হুন্ডি ব্যবসা জমজমাট
প্রকাশিত : ১৯:১৫, ১ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১৯:২০, ১ এপ্রিল ২০১৮
মালয়েশিয়া হুন্ডি ব্যবসা জমজমাট হয়েছে। মালয়েশিয়া থেকে অর্থ পাঠানোর জন্য রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংক, যার মাধ্যমে বৈধ পথে অর্থ পাঠানো গেলেও হুন্ডিতে অর্থ আসছে বলে জানা গেছে। আর এই হুন্ডি ব্যবসায়ীরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নাম ভাঙ্গাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে করছে জমজমাট ব্যবসা। ফলে দেশ হারাচ্ছে রেমিট্যান্স, হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। তবে হুন্ডি ব্যবসা জমজমাট হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন প্রবাসীরা। প্রবাসীরা মনে করেন, সহজেই কোনো ঝামেলা ছাড়া অর্থ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেয় এ ব্যবসায়ীরা। এজন্য জনপ্রিয় হচ্ছে অবৈধ এ পদ্ধতি।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ার কোতারায়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অগ্রণী ব্যাংকের শাখাসহ, ন্যাশনাল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক থাকলেও তাদের বিভিন্ন নিয়ম-কানুনের কারণে দিন দিন প্রবাসীরা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতে অনিহা প্রকাশ করছে। যার ফলে সঠিক নিয়মে মালয়েশিয়া থেকে টাকা না যাওয়ায় সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রেমিট্যান্স থেকে। কমছে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ।
কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হলে তারা জানান, আসলে মালয়েশিয়া থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতে হলে বিভিন্ন কাগজপত্র বা পাসপোর্ট কপি লাগে। রয়েছে বিভিন্ন নিয়ম-কানুনের বেড়াজাল ও দেশে টাকা পেতে দেরি হওয়া ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে টাকা উত্তোলনের সময় ব্যাংক হতে বিভিন্ন বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এছাড়া ব্যাংকের থেকেও বিকাশে বা এরকম মোবাইল ব্যাংকিং করে যেসব প্রতিষ্ঠান কখনও কখনও বেশি টাকার রেট পাওয়া যায়, এই জন্য কোনো রকম ঝুটঝামেলা ছাড়ায় অতি সহজ এবং অল্প সময়ের মধ্যে নিশ্চিতভাবে টাকা পেতে এসব মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিকল্প নাই বলে তারা মন্তব্য করেন তারা।
এসব প্রতিষ্ঠান দেশে থাকা তাদের কোন না কোনো এজেন্টকে টাকা পাঠানোর জন্য ওই নম্বরে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বিকাশ করার জন্য বলে দেন। সেই স্বজন অতি সহজে তখন তার মোবাইলের মাধ্যমেই টাকা পান। কিন্তু এক্ষেত্রে বিকাশ বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নাম ব্যবহার করা হলেও আসলে হুন্ডির মাধ্যমে টাকার লেনদেন হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুয়ালালামপুরের একজন হুন্ডি ব্যবসায়ী নিজেকে বিকাশে এজেন্ট দাবি করে জানান, মালয়েশিয়া থেকে যদি কোনো প্রবাসী দেশে টাকা পাঠাতে চায়, তাহলে দেশে নিয়োগ করা আমাদের কর্মীর মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রত্যান্ত অঞ্চলে টাকা পাঠিয়ে থাকি। আমাদের দলে কিছু হুন্ডি সদস্য দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থান করে বাংলাদেশি ওয়েজ আর্নারদের নিকট থেকে বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করে তা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় টাকায় স্থানীয়ভাবে পরিশোধ করে দেয়।
বিকাশের বিরুদ্ধে এ অভিযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার হালিম বলেন, বিদেশে বিকাশের কোনো এজেন্ট নেই। বিকাশের নাম ভাঙ্গিয়ে অনেকে অবৈধ লেনদেন করার চেষ্টা করেন। আসলে বিদেশে যেহতেু কোনো আমাদের এজেন্ট নেই তাই লেনদেন করারও সুয়োগ নেই। তবে অনকে হুন্ডি ব্যবসায়ী বিকাশের নাম ভাঙ্গিয়ে এ অধরনের অপকর্ম করে আসছে। আর এ ধরনের অপকর্ম করার জন্য অনেক সময় বিদেশে কোনো জায়গায় বিকাশের লোগো ব্যবহার করছে তারা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা বিদেশে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আর যাতে বিদেশে এ ধরনের লেনদেন কেউ না করে এ জন্য গণমাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, তবে দেশের বৈধ পথে অর্থ আনার জন্য আমরা কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছি। আমাদের সঙ্গে যাদের চুক্তি রয়েছে তারা লেনদেন করে, তাহলে সহজেই দেশে আমরা সেটা লেনদেন করে থাকি। তবে একটা কথা কোনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিদেশে এজেন্ট নেই।
হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বিকাশ, ইউ ক্যাশ, ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এর নাম ব্যবহার করে এ ব্যবসা করছেন বলে জানা গেছে। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা প্রবাসীদের কাছ এসব চ্যানেলের কথা বলে অর্থ নিয়ে বাংলাদেশে তাদের লোকের মাধ্যমে সহজেই পৌঁছে দেন। খুব সহজেই প্রবাসীদের অর্থও পৌঁছে যায় তাদের স্বজনদের কাছে বলে জানা যায় কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে কথা বলে।
আবার অনেকে হয়তো অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। হয়তো তার আয়ের স্বপক্ষে যথেষ্ট কাগজপত্র নেই। আবার রিঙ্গিত বিনিময়ে হারও কোনো কোনো সময় বেশি দিয়ে থাকি। তাদের এসব টাকা হুন্ডিকারীরা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে একেবারে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে। এ কারণে অনেকে এসব প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হন বলে তিনি জানান।
এসএইচ/
আরও পড়ুন