শতবর্ষী দবিরুলকে স্বীকৃতি পদক দিলেন ব্রিটেনের রানি
প্রকাশিত : ১৩:৩৫, ১০ অক্টোবর ২০২০
ব্রিটেনের এক শতবর্ষী বাঙালি দবিরুল ইসলাম চৌধুরী। যিনি এক মহৎ কাজ করে সেই কাজের স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার ইচ্ছে ছিল- বাংলাদেশ, ব্রিটেন এবং আরো কিছু দেশের করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত মানুষের সহায়তার জন্য অর্থসাহায্য সংগ্রহ করা। যেমন ইচ্ছে, তেমন কাজ। তিনি রোজার মাসে পায়ে হেঁটে করোনা ভাইরাস তহবিলের জন্য প্রায় সাড়ে চার লক্ষ পাউন্ড চাঁদা তুলেছিলেন। এবার সেই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেলেন ব্রিটেনের রানির বিশেষ সম্মাননা।
দবিরুল ইসলাম চৌধুরী পূর্ব লন্ডনের বো এলাকার বাসিন্দা। তাকে অর্ডার অফ দ্যা ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) পদক দেয়া হয়েছে।
পদক পেয়েছে তিনি বলেন, ‘এই দুর্লভ সম্মান পেয়ে আমি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান বলে মনে করছি। আমার অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে সবার প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ‘
প্রসঙ্গত, রানি এলিজাবেথের জন্মদিন উপলক্ষে ব্রিটেনের সমাজ-জীবনে যারা বিশেষ ভূমিকা রাখেন প্রতিবছর তাদের সম্মান জানানোর রীতি রয়েছে। চলতি বছর জুন মাসে এই সম্মাননা ঘোষণার পরিকল্পনা থাকলেও করোনা ভাইরাস মহামারির সময় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী, অর্থদাতা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তা স্থগিত করা হয়।
জানা গেছে, গত রমজান মাসের পুরোটা সময় দবিরুল ইসলাম চৌধুরী রোজা রেখে প্রতিদিন তার বাড়ির পেছনের ৮০ মিটার বাগানে পায়ে হেঁটে মোট ৯৭০ বার চক্কর দিয়েছেন।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন টম মুর তার বাড়ির বাগানে পায়ে হেঁটে স্বাস্থ্য-কর্মীদের জন্য যেভাবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি পাউন্ড চাঁদা তুলেছিলেন তা দেখে উৎসাহিত হয়েছিলেন দবিরুল। রোজার মাসের পুরোটা সময় তিনি একইভাবে পায়ে হেঁটে মোট চার লক্ষ ২০ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করেন।
তার প্রাপ্ত অর্থ থেকে এক লক্ষ ১৬ হাজার পাউন্ড দেয়া হয় স্বাস্থ্য বিভাগ (এনএইচএস)কে। বাকি অর্থ ৫২টি দেশের ৩০টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করা হয়।
তার এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বিরোধীদল লেবার পার্টির প্রধান স্যার কিয়ার স্টার্মার বলেছেন, ‘আমাদের সবার কাছে তিনি প্রেরণার এক উৎস।’
বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে দবিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘তিনি ব্রিটেনের বাঙালি সমাজ, বয়স্ক সমাজ এবং অভিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে এই ওবিই পদক গ্রহণ করছেন। সপ্তাহ দু’য়েক আগে রানির দফতর থেকে ওবিই পদক প্রাপ্তির চিঠি পেয়ে তিনি বেশ অবাকই হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন কোন একটা ভাল কাজ করি তখন বিশেষ কোন প্রাপ্তির কথা মাথায় রাখি না। তবু এই স্বীকৃতির জন্য আমি খুবই আনন্দিত।’
তবে তার এই পদক জীবনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ কোন পরিবর্তন আনবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তার কাজ যদি অন্য কাউকে উৎসাহিত করে তবেই তিনি খুশি।
তার ছেলে আতিক চৌধুরী বলেন, ‘দবিরুল ইসলাম চৌধুরী তার জন্মস্থান সিলেটের দিরাইয়ে বাংলা ফিমেল অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি চ্যারিটির সাথে যুক্ত রয়েছেন।’
জন্ম সিলেটে কর্ম বিলেতে
দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর জন্ম ১৯২০ সালে সিলেটের দিরাইতে। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে উচ্চশিক্ষার আশায় ১৯৫৭ সালে তিনি বিলেতের পথে পাড়ি জমান। এরপর তিনি সেন্ট অলবান্স শহরে বসবাস করেন এবং সেখানে একজন কমিউনিটি লিডার হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
এখানে আরও উল্লেখ্য যে- ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়েও তিনি অর্থ সাহায্য সংগ্রহ করেছিলেন।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
এসএ/
আরও পড়ুন