ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

নিউজিল্যান্ডের ‘লোকাল হিরো’ পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশি ফার্মাসিস্ট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:০৯, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০

পুরষ্কার নিচ্ছেন ড. শ্যামল দাস।

পুরষ্কার নিচ্ছেন ড. শ্যামল দাস।

নিউজিল্যান্ডের ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশি ফার্মাসিস্ট ড. শ্যামল দাস। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি নাগরিক, যিনি নিউজিল্যান্ডের সম্মানজনক এ পুরস্কার পেলেন। নিউজিল্যান্ডে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্ব-উদ্যোগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির নেতৃত্ব দিয়ে এ পুরস্কার জিতে নেন দেশটির ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক ড. শ্যামল দাস।

গত ২৩ ডিসেম্বর ডুনেডিনের কিউই ব্যাংকের লোকাল ম্যানেজার ম্যারি সুটোন (Marie Sutton) ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার তুলে দেন ড. শ্যামল দাসের হাতে। করোনার কারণে এ বছর সবাইকে একত্রিত করে একসঙ্গে পুরস্কার দেয়ার পরিবর্তে প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্নভাবে সম্মানিত করা হয়।

নিউজিল্যান্ডে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চলার সময় ইথানলকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানিয়ে সেই সময়ই গণমাধ্যমের নজর কাড়েন দেশটির সবচেয়ে প্রাচীন ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শ্যামল দাস। প্রায় ১ হাজার ২০০ লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির নেতৃত্ব দিয়ে প্রশংসা কুড়ান এই বাংলাদেশি। এবার তাঁর সেই উদ্যোগের প্রশংসা করলো নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। পেলেন কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো পুরস্কারও।

নিউজিল্যান্ডের কিউই ব্যাংক প্রতিবছর ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার প্রদান করে থাকে। যারা নিঃস্বার্থভাবে নিজেদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে নিউজিল্যান্ডের উন্নয়নে গত এক বছর কাজ করেছেন এমন কিউইদের এ পুরস্কারের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়। 

প্রসঙ্গত, কিউই কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর ছয়টি ক্যাটাগরিতে নিউজিল্যান্ডার অব দ্য ইয়ার পুরস্কার দিয়ে থাকে। সেই ছয়টি ক্যাটাগরির একটি হলো- ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার।

নিউজিল্যান্ডে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হবার পর যখন হ্যান্ড স্যানিটাইজার চাহিদার তুলনায় কম পাওয়া যাচ্ছিলো, তখন নিজের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি ল্যাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা শুরু করেন শ্যামল দাস। ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী ড. শ্যামল দাসের নেতৃত্বে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ইথানল দিয়ে ৬০০ লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে ফেলেন।

মূলত: ড. শ্যামল দাসের নেতৃত্বে এ দলটি নিউজিল্যান্ডে যখন লকডাউন চলছিলো, যখন সবাই ছিলো বাসায় বন্দি, তখন ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় অনুমতি নিয়ে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তৈরি করেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এ সময় মোট ১ হাজার ২০০ লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা মিটিয়ে দেশটির পুলিশ বাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য অপরিহার্য কর্মীদের (Essential workers) মাঝে বিতরণ করেন।

উল্লেখ্য, নিউজিল্যান্ডে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর করোনায় কোনও প্রাণহানি ঘটার আগেই গত ২৫ মার্চ দেশটিতে লকডাউন জারি করা হয়। টানা ৭ সপ্তাহ অত্যন্ত কঠোরভাবে পালিত হয় এই লকডাউন। আর করোনা প্রাদুর্ভাব চলাকালে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক ছিল দেশটিতে। এখন অনেকটাই করোনামুক্ত নিউজিল্যান্ড। ৫০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৭২ জন, বিপরীতে মারা গেছেন মাত্র ২৫ জন।

করোনাকালীন হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে কিউইদের সহযোগিতা করায় ধন্যবাদ জানিয়ে ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চিঠিও দিয়েছেন ড. শ্যামল দাসকে। আর ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার প্রাপ্তির পর ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারলিন হায়েন (Harlene Hayne) এক চিঠিতে ড. শ্যামল দাসকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখেন, ‘আপনার ও আপনার ছাত্রদের স্বেচ্ছাসেবকমূলক কাজে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গর্বিত।’ 

উপাচার্য হারলিন ছাড়াও ড. শ্যামল দাসকে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান স্থানীয় এমপি ইনগ্রিড লিয়ারি (Ingrid Leary)। 

ফার্মাসিস্ট ড. শ্যামল দাস অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে পিএইচডি শেষ করে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েই ৫ বছর গবেষণা ফেলো হিসাবে কাজ করেন। এরপর ২০১৩ এর জুলাইতে নিউজিল্যান্ডের ডুনেডিন শহরের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে যোগদান করেন। অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ফেলো হিসাবে যোগদানের আগে তিনি বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। এর আগে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে ফার্মেসিতে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন।

শিক্ষকতার দীর্ঘ এ কর্মজীবনে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ড. শ্যামল দাস। তিনি ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে এক্সিলেন্স ইন টিচিং অ্যাওয়ার্ড (Excellence in Teaching Award), ২০১৭ সালে সুপারভাইজার অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড (Superviosr of the Year Award) এবং ২০১৯ সালে এক্সিলেন্স ইন রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড (Excellence in Research Award)-এ ভূষিত হন। সর্বশেষ মানব কল্যাণে অবদান রাখায় পেলেন ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার।

নিউজিল্যান্ডের লোকাল হিরো পুরস্কার পাওয়ায় ড. শ্যামল দাস তার বিভাগের সকল শিক্ষার্থী বিশেষ করে যারা তার নেতৃত্বে লকডাউনের সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে সহায়তা করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ যারা তাঁর এ স্বেচ্ছাসেবকমূলক কাজে সহযোগিতা ও সাহস জুগিয়েছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশে ড. শ্যামল দাস-এর বাবা সাবেক প্রধান শিক্ষক গোপাল চন্দ্র দাস ও তার মা পুষ্প রানী দাস-এর সাথে কথা হলে তারা বলেন- ছেলের এমন কৃতিত্বে সত্যিই আমরা আনন্দিত। আমাদের ছেলে দেশের হয়ে বিদেশের মাটিতে দেশের জন্য সম্মান নিয়ে এসেছে। সন্তানের অর্জনে পিতা মাতা হিসেবে আমরা গর্বিত। এটা শুধু আমাদের গর্ব না, এটা সমগ্র বাংলাদেশের গর্ব।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি