ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

অষ্ট্রেলিয়ায় সাইবার বুলিংয়ের শিকার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:০৪, ১৭ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ২২:১৩, ১৭ জুলাই ২০২১

অভিযুক্ত আবু সাদাত সরকার ওরফে হেলাল

অভিযুক্ত আবু সাদাত সরকার ওরফে হেলাল

খোদ অষ্ট্রেলিয়াতে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশি এক তরুণী। যার বিরুদ্ধে লাম্পট্যের অভিযোগ তিনি নিজেও বাঙালি এবং পেশায় ইমিগ্রেশন ও স্টুডেন্ট ভিসা কনসালটেন্সি ফার্মের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ব্যাপারটি নিয়ে ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বাঙালি কমিউনিটিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার নিউ ইস্কাটনের এইচবিডি নামে যে প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার শাখা আছে সিডনির মিউজিয়াম টাওয়ারে। এইচবিডি অস্ট্রেলিয়া নামের এ প্রতিষ্ঠান প্রধানত ইমিগ্রেশন ও স্টুডেন্ট ভিসা কনসালটেন্সি দিয়ে থাকে। এ ফার্মের অন্যতম কর্মকর্তা আবু সাদাত সরকার ওরফে হেলালের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশি এক ছাত্রী। ইতোমধ্যে তিনি অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। যৌন হয়রানির শিকার এ নারী ম্যাকুয়ার ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। সিডনি থেকে টেলিফোনে এই ছাত্রী একুশে টেলিভিশনকে বলেন, গত ১২ জুলাই সন্ধ্যা থেকে তার মোবাইল ফোনে ধারাবাহিকভাবে আপত্তিকর মেসেজ পাঠাতে থাকেন হেলাল। অতপর আমি আবু সাদাত সরকার হেলালকে পাল্টা ফোন দেই। পরবর্তীতে এই কলের ডিজিটাল প্রমাণ সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিই। সেখানে তার কণ্ঠ নিশ্চিত হয়। পরে তাকে সতর্ক করে একটি পাল্টা মেসেজ দিয়ে লিখি যে, আমি পুলিশে অভিযোগ করব। কিন্তু তারপরও সে একই কাজ করতে থাকে। 

অভিযোগকারী তরুণী নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন প্রক্রিয়ার সময় এইচবিডি সার্ভিসের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। সম্প্রতি স্টুডেন্ট ভর্তি সংক্রান্ত কিছু জরুরি বিষয়ে এইচবিডি সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সাদাত সরকার হেলালের সঙ্গেও তার কথা হয়। মোবাইল ফোনে প্রথমবার কথা বলার পর হেলাল তাকে স্মার্টফোনের বিল্ট ইন মেসেজ অ্যাপে (সাধারণ মেসেজ অ্যাপ) আপত্তিজনক ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা পাঠান। এর পর হোয়াটসঅ্যাপে একের পর এক নোংরা ভাষায় যৌনবিষয়ক মেসেজ পাঠাতে থাকেন। কিছু মেসেজ পাঠিয়ে আবার ডিলিটও করে দেন। এই ছাত্রী তাকে এ ধরনের মেসেজ পাঠানোর প্রতিবাদ করেন। তারপরও হেলাল পর পর তিনদিন মেসেজ পাঠান। কথা বলেন অশালীন ভাষায়। উক্ত ছাত্রী পুলিশে অভিযোগের কথা বললে, তিনি কিছু মেসেজ মুছে ফেলেন। ছাত্রীটি তখন সাদাত সরকার হেলালকে হোয়াটসঅ্যাপে ব্লক করে দেন। লোকলজ্জার ভয়ে পুরো ব্যাপারটি প্রথম দিকে চেপে যান ঐ ছাত্রী।  

নিরুপায় মেয়েটি বলেন, হেলালের বিরক্তিপনা বাড়লে তিনি সিডনির ইস্টউট পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ করেন। পুলিশ সেই অভিযোগনামা ফাইল করেন। 

সাদাত সরকার অস্ট্রেলিয়ার বাঙালি কমিউনিটিতে হেলাল নামে অধিকতর পরিচিত। তিনি ইতোপূর্বেও ন্যাক্কারজনক আচরণের কারণে সমালোচিত হয়েছিলেন। তবে হেলাল বারংবারই বলার চেষ্টা করেছেন তার মোবাইল হ্যাকড করে তার প্রতিপক্ষ কেউ এমন মেসেজ পাঠিয়ে সম্মানকানির চেষ্টা করেছে। তবে এমন আচরণের দায় স্বীকার করে সিডনি পুলিশের কাছে মুচলেকাও দিয়েছেন এই আবু সাদাত সরকার হেলাল।

সিডনির এক সংগঠক আমাদের বলেছেন, আবু সাদাত সরকারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগও আছে। ঢাকার ইস্কাটনে এইচবিডি সার্ভিসেস বাংলাদেশ নামে তাদের যে অফিস রয়েছে এখান থেকে হুন্ডিও পরিচালনা হয়ে থাকে।  সিডনির ম্যাকুয়ার ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করছেন এমন বাংলাদেশি বেশ কয়েকজন ছাত্রী ও প্রবাসী নারীদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে মুখ খুলতে শুরু করেছেন সাদাত সম্পর্কে। তারই প্রেক্ষিতে কড়া ভাষায় পুলিশ থাকে শাসন করেছে। লোকাল কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ বলছেন, বিশেষ একজন ব্যক্তির এহেন কর্মকাণ্ডে বিদেশে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী বাঙালির যে খ্যতি তা নস্যাত হচ্ছে। ঘটনাটি নিয়ে আমরা কথা বলি বাংলাদেশের আইনবিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার কামরুজ্জামানের সঙ্গে। তাঁর অভিমত, এমন ঘটনার বিচার দেশের বিদ্যমান আইনেও হতে পারে। 

এদিকে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, এ ঘটনাার পর আবু সাদাত সরকার তাঁকে ম্যাকুয়ার ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল এনগেজমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্টের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর তানভীর শহীদকে দিয়ে ফোন করান। তিনি প্রথম দিকে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। জানতে চান, আবু সাদাত সরকারের অ্যাকাউন্ট আমি দেখছি কিনা যে তার প্রোফাইল হ্যাক হয়েছে। এরপর যখন আমি পুরো ঘটনাটি বলি, তখন তানভীর শহীদ আমাকে বলেন, আবু সাদাত সরকার শুধু তাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে। কারণ পুলিশ অভিযোগের কথা আমাকে বলা হয়নি। পরবর্তীতে তানভীর শহীদ নিজেই উল্টো আমাকে ম্যাকুয়ার ইউনিভার্সিটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে হয়রানি সংক্রান্ত লিগ্যাল অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। এ প্রসঙ্গে ওই ছাত্রী আরও বলেন, প্রতিটি ঘটনার পরই লম্পট আবু সাদাত সরকার সংশ্লিষ্টদের বলেন, তার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। এটা তার ভণ্ডামির একটা কৌশল মাত্র। মানসম্মানের ভয়ে ইতোপূর্বে অনেক মেয়ে চেপে গেছেন। আমি সাহস করে প্রতিবাদ করেছি, এবং করবো। আমি একজন দুষ্টু লোকের মখোশ খুলে দিতে চাই। 

সিডনির বাঙালি কমিউনিটির নেতারা বলছেন, আবু সাদাত সরকার পুলিশের কাছে যৌন হয়রানির অপরাধ স্বীকার করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি মুচলেকাও দিয়েছেন।  

ম্যাকুয়ার ইউনিভার্সিটির ওই ছাত্রী আরও বলেন, এই ঘটনার পরের দিন সকালে লম্পট আবু সাদাত সরকার আমাকে মেসেজ পাঠিয়ে বলেন- তার সবকিছু হ্যাক হয়েছিল। ঘটনার ব্যাখ্যা করে আমার ফেসবুক আইডিতে সচেতনতামূলক লেখাও পোস্ট করেছি। ফলে অনেকেই পুরো ঘটনা জানতে পেরেছেন। তখন ম্যাকুয়ার ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন থেকে আমাকে জানানো হয় যে, তারা আমার পুলিশে দেওয়া অভিযোগ ভেরিফাই করেছে। ভূক্তভোগী ঐ নারী আরও বলেন, ঘটনার পর থেকে আবু সাদাত সরকার আরও বহুবার কল দিয়েছেন। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে আবু সাদাত সরকার আমাকে মেসেজ পাঠিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার কারণে আইনজীবী দিয়ে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি