ঢাকা, শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পর্তুগালের কৃষি খাতে বাংলাদেশিদের অবস্থান

এনামুল হক, পর্তুগাল

প্রকাশিত : ২২:০৯, ২৪ অক্টোবর ২০২১ | আপডেট: ২২:১১, ২৪ অক্টোবর ২০২১

পর্তুগাল দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশ। এটি আইবেরীয় উপদ্বীপের পশ্চিম অংশে, স্পেনের দক্ষিণে ও পশ্চিমে অবস্থিত। এই দেশটির তিনদিক দিয়ে ঘেরা আটলান্টিক মহাসাগর। পর্তুগালের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর লিসবন।

পর্তুগালের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান আয়ের একটি উৎস হলো কৃষি উৎপাদন। ২০১৭ সালে পর্তুগালের মূল ভূখন্ডের ২৬ শতাংশ অঞ্চল কৃষি এলাকায় দখলকৃত। সেই হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে ২৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৯১৪ হেক্টর জমি কৃষি কাজে ব্যবহার হচ্ছে। গত ২০২০ সালের করোনা মহামারীতে বিশ্ব শ্রম বাজারে আতঙ্ক ও অস্থিরতা প্রতিফলন পর্তুগালেও বিরাজমান। 

গত দেড় বছর করোনার মহামারির প্রভাব পড়েছে পর্তুগালের পর্যটন এবং কৃষি শিল্পে। যার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল হোটেল, রেষ্টুরেন্ট ও ট্যুরিজম রিলেটেড অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই দুর্যোগ কালিন সময়ে চাকরি হরিয়েছে কয়েক হাজার প্রবাসী। করোনা পরবর্তীতে পর্তুগালের অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পর্তুগাল সরকার বর্তমানে অগ্রাধিকার দিচ্ছে কৃষি শিল্পে। এমন মুহূর্তে বাংলাদেশিরা জায়গা করে নিয়েছে কৃষি কাজ, কন্সট্রাকশন, ডেইরি ফার্ম, মিল্কিং ফার্ম, পোল্ট্রি ফার্ম এবং গ্রিন হাউজসহ বিভিন্ন সেক্টরে।

বর্তমানে পর্তুগালের কৃষি শিল্পে বিশ্বের অনেক দেশের শ্রমিক কাজ করছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দক্ষিন এশিয়ার বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, ব্রাজিল, রোমানিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশ। অতিতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কৃষি কাজে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেতো নেপালি শ্রমিকগণ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নেপাল তাদের সেই সুনাম আর ধরে রাখতে পারেনি এই সেক্টরে। সেই সুবাদে কৃষি সেক্টরে নতুন করে স্থান দখল করে নিয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশীরা। বর্তমান সময়ে পর্তুগালে কৃষি শ্রমিক হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বেশ ভালো সুনাম রয়েছে।

পর্তুর গিমারেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক হাবিবুল্লাহ বলেন, আমরা এখানে প্রায় ২৫ জন বাংলাদেশি কাজ করছি। আমাদের সাথে আরও নেপালী ও ভারতের কিছু শ্রমিক আছে। আমাদের এই এগ্রিকালচার কোম্পানিতে প্রায় ৩৫/৪০জন শ্রমিক কাজ করে। শনিবার ও রবিবার দুই দিন সরকারি ছুটি থাকে। এই কোম্পানিতে আমি যখন প্রথম আসি তখন বাংলাদেশি শ্রমিক ছিল মাত্র ৮জন। কিন্তু এখন প্রায় সব শ্রমিকই বাংলাদেশী। কোম্পানিতে যদি নতুন কোন লোকের প্রয়োজন হয়। প্রথমে প্রাধান্য পায় বাংলাদেশি শ্রমিক।    

মিলফনতেছ থেকে দুলাল আহমেদ বলেন, বর্তমানে এখানে রোস বেরি, স্ট্রবেরি, ব্লোবেরি, কিউ ভি, আংগুর, জয়তুন, আপেল, মাল্টা জাতীয় বিভিন্ন এগ্রিকালচার কোম্পানিতে কাজ করছে প্রবাসীরা। গাছের পরির্চচা, ঔষুদ ছিটানো, পচা ও মরা ফল বাছাই করার এবং ফল গাছ থেকে সংগ্রহ করে প্যাকেট জাত করার কাজ করে থাকি। এই কাজ শুরু হয় মার্চ মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মোট নয় মাস। বাকী তিন মাস আর কোন কাজ থাকেনা। এই সময়ে অনেক প্রবাসী ছুটি নিয়ে চলে যায় দেশের উদ্দেশ্যে।  

তবে উল্লেখ্য পর্তুগালের কৃষি সেক্টর গুলি রাজধানী লিসবন থেকে বেশ কয়েকশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরগুলো হলো মিলফনতেছ, ফারো তাবিরা, গিমারিশ, ব্রাগা, লেরিয়া, কিইমব্রা ও এবেইরো অঞ্চল। প্রত্যেক কোম্পানিতে শ্রমিকদের জন্য থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু কাজের মধ্যে ঝুকিঁপূর্ণতা রয়েছে তাই প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক করতে হয়। 

বর্তমান পর্তুগালের আইন আনুযায়ী একজন শ্রমিকের মাসিক বেতন নূন্যতম ৭৪০.৮৩ ইউরো। এগ্রিকালচারে যারা কাজ করে তাদের বেতন কাঠামো কম্পানি অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তবে নূন্যতম প্রতিঘন্টায় ৪.৫০ ইউরো প্রতিদিন ৮ঘন্টা করে মাসে ২২দিন কাজ করতে পারে একজন শ্রমিক। যা মাসিক বেতন দাড়াঁয় (৮X২২=১৭৬) ঘন্টায় ৭৯২ইউরো। এই বেতনের ১১% টেক্স সরকারকে দিতে হবে। এছাড়াও প্রতিটি কোম্পানি তাদের শ্রমিকদের খাবারের জন্য প্রতিদিন ৪.৫০ ইউরো করে দিতে হয়।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি