ঢাকা, শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জীবন্ত সাক্ষী কলকাতার হাওড়া ব্রিজ

তানভীর সুমন

প্রকাশিত : ১২:৩০, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | আপডেট: ১৩:২৭, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

হুগলি নদীর উপর অবস্থিত কলকাতা এবং হাওড়া শহরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সেতুগুলির মধ্যে অন্যতম হাওড়া ব্রিজ। ১৮৭৪ সালে কোন নাট- বল্টু ছাড়াই প্রথম হাওড়া সেতু নির্মিত হয়। পরে ১৯৪৫ সালে পুরনো সেতুটির বদলে বর্তমান বহির্বাহু সেতুটির উদ্বোধন হয়। ১৯৬৫ সালের ১৪ জুন সেতুটির নাম পরিবর্তন করে হয় রবীন্দ্র সেতু।

কলকাতা অনেক ব্যস্ত নগরী হওয়ার কারণে এই সেতু দিয়ে দৈনিক ৮০,০০০ যানবাহন এবং প্রায় ১০ লক্ষ পথচারী চলাচল করেন। এই জাতীয় সেতুগুলির মধ্যে রবীন্দ্র সেতু বিশ্বে ষষ্ঠ বৃহত্তম। নাট-বল্টু ছাড়াই ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই সেতু আজও কলকাতার গর্ব । ইংরেজরা নিজেদের বাণিজ্যিক সুবিধার স্বার্থেই হাওড়া ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল। প্রথমে তা ব্যবহার করা হত বাণিজ্যিক কারণেই। মালবাহী গাড়ি যাতায়াত করত সেতু দিয়ে। সেই সময় গঙ্গা নদীতে জাহাজ স্টিমারের যানজট ইংরেজ ব্যবসায়ীদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই সমস্যা মেটাতেই গঙ্গার উপরে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। কলকাতার অতীত ইতিহাসের নানা গল্পের সাক্ষী হয়ে আছে এই ব্রিজটি।

হাওড়া ব্রিজ  একটি ঝুলন্ত সেতু। প্রথমে সেতুটির নাম ছিল নিউ হাওড়া ব্রিজ। কারণ এই সেতুর নির্মাণের আগে এই স্থানে এবং হাওড়া জেলার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী একটি ভাসমান সেতু ছিল। সেই সেতুর পরিবর্তেই এই নতুন সেতু নির্মাণ করা হয় ৷ নাম রাখা হয় নিউ হাওড়া ব্রিজ।

সেতু নির্মাণের ভাবনা শুরু হয়েছিল ১৮৫৫-৫৬ সালে। সেতু নির্মাণের জন্য একটি কমিটিও তৈরি হয়। কারণ তত দিনে গঙ্গার দুই পাড়েই জাঁকিয়ে বসে ইংরেজদের কারবার। তৈরি হয়েছিল নতুন নতুন কারখানা। তাই হাওড়া-কলকাতার জন্য একটি সেতুর দরকার পড়ে। সেতু নির্মাণ নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও প্রায় বছর  পর ১৮৫৯-৬০ সালে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।

এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। অবশেষে সেতুর প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব বুঝে ১৮৭১ সালে তৈরি হয় একটি ট্রাস্ট। সেই ট্রাস্টের অধীনেই হাওড়ার প্রথম ভাসমান সেতু নির্মাণের ভার দেওয়া হয়। নদীর ওপর ছিল পন্টুন ব্রিজ বা ভাসমান সেতু। নীচে নৌকা। উপরে পাটাতন। মাঝ বরাবর খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা। জাহাজ-স্টিমার চলাচলের জন্য সেতুর মাঝখানে ২০০ ফিট খুলে দেওয়া যেত। স্টিমার এলেই সেতু বন্ধ। ১৮৭৪ সালে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় সেই সেতু। অর্থাৎ ১৮৫৫ সালে ব্রিটিশ প্রশাসন যা পরিকল্পনা করেছিল, তা রূপায়িত হয় ১৯ বছর পর।

শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সুবিশাল হাওড়া ব্রিজটি তৈরি করতে একটি নাট-বল্টু ব্যবহৃত হয়নি। প্রায় ২৩ হাজার টন ইস্পাতের পাত উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে জুড়ে এই সেতু তৈরি হয়েছে। সমস্ত  ইস্পাত দিয়েছিল টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি। এই সেতুই সম্ভবত ভারতের প্রথম মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প। হাওড়া ব্রিজ একটি ঝুলন্ত সেতু। কোনও রকম অবলম্বন ছাড়াই খিলানযুক্ত এই সেতু দাঁড়িয়ে রয়েছে। এধরনের প্রযুক্তিযুক্ত প্রাচীন সেতুগুলির মধ্যে এই সেতু অন্যতম। বঙ্গোপসাগরীয় প্রবল ঝড়ঝঞ্জাগুলি সহ্য করতে সক্ষম এটি। এই জাতীয় ঝুলন্ত এবং দৃঢ় সেতুগুলির মধ্যে রবীন্দ্র সেতু বিশ্বে ষষ্ঠ বৃহত্তম। 

প্রায় সাত দশক ধরে নানা ঘটনার সাক্ষ্য বহু করে চলেছে এই সেতু। ইংরেজ উপনিবেশ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভারতবর্ষ স্বাধীনের মতো অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই হাওড়া ব্রিজ।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি