লিসবনে শত প্রভাবশালীর একজন মেরিনা তাবাসসুমের প্রদর্শনী
প্রকাশিত : ১৯:২৯, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | আপডেট: ১৯:৩৯, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
বাংলাদেশের স্থপতি মারিনা তাবাসসুম লিসবন ট্রিয়েনাল ক্যারিয়ার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন। স্বল্প খরচে ও সহজে স্থানান্তর যোগ্য একটি আবাসন তৈরির জন্য তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। তিনি প্রায় নয় হাজার কিলোমিটার দূরে পর্তুগালের মাটিতে লাল সবুজের পতাকা তুলে ধরেছেন।
মারিনা তাবাসসুম বাংলাদেশের একজন গর্বিত স্থপতি। পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের প্রাণকেন্দ্র বেলেম কালচারাল সেন্টারের প্রদর্শনী হলে মেরিনা তাবাসসুমের একক স্থাপত্যে নকশার প্রদর্শনী শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল)। এই প্রদর্শনী চলছে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
ছুটির দিন ছাড়া প্রদর্শনী প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে। প্রদর্শনীতে মেরিনা তাবাসসুমের নকশা ছাড়াও বাংলাদেশের গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি, তালগাছের ডোংগা নৌকা, মাছ ধরার সরঞ্জামসহ নানা উপকরণ প্রদর্শিত হয়েছে।
স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম ১৯৪৭ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। হলিক্রস স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা শেষ করে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরের বছরই তিনি স্থপতি কাশেফ চৌধুরির সাথে গঠন করেন আরবানা। ২০০৫ সালে তার একক প্রচেষ্টায় তৈরি করেন স্থাপত্য ফার্ম মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্ট।
২০১২ সালে মেরিনা তাবাসসুমের নান্দনিক স্থাপত্য নকশায় আবদুল্লাহপুরের ফায়েদাবাদে নির্মিত হয় বায়তুর রউফ মসজিদ। এই মসজিদের স্থাপত্যশৈলী তাকে আন্তর্জাতিক পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসে। বায়তুর রউফ মসজিদের শৈল্পিক স্থাপত্যের জন্য তিনি ২০১৬ সালে আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার পুরস্কার পান। ২০১৮ সালে পান জামিল প্রাইজ।
সুলতানি আমলের স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত বায়তুর রউফ মসজিদে নেই কোন গম্বুজ। কৃত্রিম কোনকিছু ছাড়াই মসজিদের ছাদ ও দেয়ালের ছিদ্র দিয়ে ভেতরে প্রাকৃতিকভাবে আলো ও বাতাস প্রবেশ করতে পারে। ২০২০ সালে ব্রিটিশ সাময়িকী প্রসপেক্ট এর ৫০ চিন্তাবিদদের মধ্যে শীর্ষ ১০ জনের মধ্যে মেরিনা তাবাসসুম ছিলেন তৃতীয়।
২০২১ সালে মর্যাদাপূর্ণ সন পদক পান তিনি। ২০২২ সালে লিসবন আর্কিটেকচার ট্রিয়নালে মিলেনিয়াম লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন।
সম্প্রতি বিশ্ববিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় উদ্ভাবক শ্রেণিতে স্থান পান মেরিনা তাবাসসুম। তালিকায় তাবাসসুমের সাথে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ইরানের মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মাদী, রাশিয়ার ইউলিয়া নাভালনায়া, অ্যানিমেটর হায়াও মিয়াজাকি, ফরমুলা ওয়ান রেসার ম্যাক্স ভাঙাপেন, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই ব্রিটিশ পপ তারকা জুয়া লিপা, পোলান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কসহ পরিচিত অনেক মুখ।
মেরিনা তাবাসসুমের প্রদর্শণীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পর্তুগীজদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশী কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। তাদের মধ্যে ছিলেন পর্তুগাল বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এসোসিয়েশনের সভাপতি রানা তাসলিম উদ্দেন, ব্যবসায়ী, তরুণ উদ্যোক্তা রনি হোসাইন, মাছুম আহম্মেদ, পর্তুগাল সাহিত্য সংসদের সভাপতি মো: এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন আসাদসহ আরও অনেক প্রবাসী তার এই কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানান।
কমফোর্ট রিভেরি, ফরিদাবাদের অবকাশ বাড়ি, পানিগ্রাম ইকো রিসোর্ট ও স্পা, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে নির্মিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা জাদুঘর ও স্বাধীনতা স্বত্ব মেরিনা তাবাসসুমের উল্লেখযোগ্য কীর্তি।
এএইচ
আরও পড়ুন