ঢাকা, শুক্রবার   ১১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

হায়রে স্বপ্নের আমেরিকা!

প্রকাশিত : ২১:২৮, ৫ জুন ২০১৯ | আপডেট: ২১:০৩, ১০ জুন ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

হায়রে স্বপ্নের দেশ! ওদের ঈদ ছিল সাদা-মাঠা। ওরা চার বন্ধু। নিউ ইয়র্কে থাকেন। ইয়েলো চালান। কেউ এসেছে ১২ আবার কেউ এসেছে ১৮ বছর আগে। ওরা এখন আমেরিকার নারীর ক্ষমতায়নের লাল ফিতায় বন্দী। চোখ আছে, কিন্তু তাকাতে পারে না। মুখ আছে, কথা বলা যায় না। হাত আছে আঙ্গুল ঊঁচু করে দেখাতে পারে না। পা আছে নিদৃষ্ট সীমানায় ঢুকতে পারে না। কারণ মহামান্য আদালত অনির্দিষ্টকালের জন্য (অনিসপনন মামলার কারণে) ওরা সীল গালা। কিন্তু স্বপ্নের দেশে স্বপ্ন ভঙ্গ করে কিভাবে বাংলার করিডোরে যাবে? গিয়েও বা কী করবে? তাই শয়নে স্বপ্নে যদি সলিল সমাধী ঘটে এ দেশে, তা হলেও খারাপ কী?

চার জনের মধ্যে ওদের দু’জন বৈধভাবে প্রবেশ করে। বাকী দুজন লটারী ভিসায়। তারা ঘুরেছে বিভিন্ন রাজ্যে। আয়ের পথ ছিলো সুপ্রশস্ত। আয় করেছে তেমন। তাদের সবার পরিবার এখানে থাকে। তবে বর্তমানে কেউ ২ আবার কেউ ৩ বছর ধরে বিভিন্ন কারণে পরিবার থেকে বিছিন্ন। সবার স্ত্রী ছাড়াও ১ থেকে ৩টি করে সন্তান রয়েছে। চার জনের মধ্যে মৌখিকভাবে পরিচিত থাকলেও ডিভোর্সির কারণে সবাই বর্তমানে ব্রুকলীনে একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে থাকে। আমেরিকায় স্ত্রী বা পরিবারের মামলায় পুলিশ খুবই কঠর অবস্থান নিয়ে থাকে। অপরাধির চলা ফেরাতেও থাকে কঠরতা।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের কানুন বলে কথা। স্ত্রী ‘ সাথে অনাকাঙক্ষিত, অনভিপ্রেত, অপ্রত্যাশিতভাবে আচরন. ছোটখাট বিবাদ, কিংবা মারধরের হুমকি প্রদান করলে, স্ত্রীর (৯১১) কল করার অভিযোগে পুলিশ সবামী / হয় বন্ধুকে আটক করে কোটে চালান দেয়।

ঘটনার ধরন অনুযায়ী মহামান্য আদালত জেল জরিমানা প্রদান করে। তবে যদি ছোটখাট ঘটনা হয়ে থাকে তাতে আর কোন দিন মাননীয় স্ত্রীর সাথে অপ্রত্যাশিতভাবে কোন ঘটনা ঘটাবে না মর্মে কোটে মুচলেকার পর স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে আসে। কিন্তু বিধি বাম এতে শান্তি নেই।

কারণ কোট মুচলেকার সময় বলে দেয় আসামী (স্বামী বা বন্ধু ) অন্তত এক বছর বিনা বেতনে প্রতি শনিবার সিটির নির্ধারিত সড়কের দু ধারে/ না হয় খেলার মাঠ / বাগান বাডী নতুবা সিটির সৌন্দর্যবর্ধনকারী স্থানগুলোতে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ময়লা আবর্জনার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে থাকবে।

আর এটি নিয়নত্রণ করবে সিটি পরিচ্ছন্নতা বিভাগ। ৩ থেকে ৬ মাস অপরাধী ডিউটি সুসম্পন্ন করেছে মর্মে সংস্থা প্রদত্ত কাগজ কোটে জমা দিতে হবে। এভাবে এক বছর সুন্দরভাবে শনিবারের কার্যদিবস পালন করলে আপনি মুক্তি পাবেন কোট তথা আইনশৃঙ্খলা বাহীনির কাছ থেকে।

বিপরীতে বাংলাদেশে অধিকাংশ পরিবারে নারীর মর্যাদা বিষয়ে বল ছিনা। তবে কতিপয় মৌলাভী সাহেবরা নারী সমাজ নিয়ে ওয়াজ মাহফিলে যা বয়ান করে শ্রী/ বিশ্রী এ নিয়ে আই সিটি এ্যাক্ট এ কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে কী না আমার জানা নেই । না থাকলে নীতি মালা করা প্রয়োজন ।

গেল ঈদের জামাতে চার বন্ধু বিড়ালের মত গা ঘেষে খোলা ময়দানে বসলো। হুজুরের বয়ান শুনল। আকাশে কালো মেঘ যেন বৃষ্টি আসবে। কিন্তু মনে অস্থিরতা। মুখে মলিনতার ছাপ। কোথাও কী যেন হারিয়ে গেছে!
নামাজ শেষ করে চার বন্ধু কোলাকুলি করে। অতপর চোখ দিয়ে কষ্টের পানি টুপটাপ করে পড়ে বৃষ্টির মত। একজন অন্যজনকে শান্তনা দেয়। শেষে রাঁধুনীতে ঢুকে পোলাও কোমরার অর্ডার করল। ৪ জনের মধ্যে সবাই সমসাময়িক এবং আমার একই জেলায় বাসিন্দা। ঈদ হিসেবে রেস্টুরেন্ট আমার সঙ্গে দেখা। আমি তখন নিজেকে মন্ত্রীর পদমর্যাদার মনেকরি। কেননা সাদা দবদবে পাজামা-পাঞ্জাবী, তার উপর মুজিব কোট। মাথায় বাহারী টুপি। ওদের চার জনের সঙ্গে এক এক করে আমার কোলাকুলির পর্ব চলে। দোকানের অন্যান্যরা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ ফিস করে বলছে মনে হচ্ছে মন্ত্রী পদমর্যাদার কেউ। হাসি ঠাট্টা করলাম। চার জনের একজন বলল, তসলিম ভাই, আজ ঈদ, মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দ।
আমি বললাম, মিথ্যা কথা।
তারা বললো, : কেন?
আমি বললাম : না মদিনার নয়, মুসলমানের ঘরে ঘরে আনন্দ।
ওরা বলল : তা অবশ্যই ঠিক।
: কী ঠিক?
ওরা বললো : না কিছুই না।
আমি বললাম, শুনেন ভাই, মদিনায় কখন যে কার সঙ্গে চলে গেছে। এ ঈদে মধুচন্দ্রিমার উৎযাপন করছে কে জানে। এটা নিয়ে ঈদের আনন্দের সময়ে চিন্তা করার দরকার আছে?
সবাই হাসল। রাত্রে তাদের বাসায় দাওয়াত দিল। দাওয়াত গ্রহণ করে আমি বিদায় নিলাম।
এদিকে চার বন্ধু সারা দিন ঘুরে ফিরে সন্ধ্যায় ডজন খানেক কাচের বোতল ভর্তি স্বচ্ছ পানি কিনে বাসায় গেল। ঘড়ির কাটা তখন ১১টা। আমি রোকন, আসলাম, আমরাও ঘুরে ফিরে চার বন্ধুর বাসায় কলিংবেল টিপতেই এক বন্ধু এসে দরজার খুললো। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখি চার জনের চোখ লালচে হয়ে গেছে। স্বচ্ছ পানি এখন ঘোলাটে হয়ে গেছে।
আমাদের তিন জনের অনুরোধে একজনে গান ধরল।
‘জীবনটাই এক মোমের বাতি/
গলে গলে পরে হায়
কেউ বুঝে তো কেউ
বোঝে না!
কেমনে যে বুঝাই।
গান শেষ করে চারজনের এক বন্ধু বললো, ভাই- প্লিজ কিছু মনে করবেন না। উই আর নো অথেনটিক গ্যাসটিফাই। প্লিজ।
সেখানে কেউ পড়েছে হাফ প্যান্ট, কেউ আবার ঐতিহ্যের লুঙ্গি। এভাবে গাদাগাদী করে চার জনেই ঘুমের ঘরে ঢলে পড়েছে। এই তো জীবন!

এসএ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি