আমেরিকায় সন্দ্বীপের কলম্বাসখ্যাত হাদীর প্রয়াণ
প্রকাশিত : ১৩:৩৪, ২২ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৪:৩২, ২২ মার্চ ২০২০
কোলকাতায় গেছেন জাহাজে চাকরির সুবাদে। সমুদ্রগামী জাহাজ। সেখানেই পেলেন ‘সোনা’র খোঁজ। কেউ একজন তাকে শোনালেন- ‘সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দেয়ার পর যে অতলান্ত মহাসাগর, তার ওপারে সোনা মেলে। সোনা।’
খুব অল্পবয়সীই আব্দুল হাদী নেমে পড়লেন সোনার খোঁজে। সেই উনিশ শ’ চল্লিশের দশকের শেষার্ধে (তাঁর কথা- উনিশ শো পঁয়তাল্লিশ কি ছেচল্লিশ সাল)।
আমেরিকায় সন্দ্বীপীদের আধিক্যের মূলে যে ক’জন মানুষ রয়েছেন, আব্দুল হাদি তাদের একজন। অনেকে তাকে সন্দ্বীপের কলম্বাস বলেন। তার সমসাময়িকদের সবাই গত হয়েছে অনেক আগেই। শেষ প্রদীপটা ছিলেন তিনি। গত শনিবার রাতে তিনি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন।
বার্ধক্য বললে ভুল হবে। মহা বার্ধক্য। আমি যখন নিউ ইয়র্কে আসি, সেই সাড়ে চারবছর আগে, তখনও শুনেছি তিনি নিজে নিজের কাজ করেন। কাপড়চোপড় ধোয়া থেকে শুরু করে সব। বয়স তাঁর একশো বছর ছাড়িয়েছে তখনও। সতেরোতে একটা পিকনিকে গিয়ে তাকে বেশ প্রাণবন্ত পেয়ে কথা বলেছিলাম, দীর্ঘ ত্রিশ মিনিটের একটা ইন্টারভিউ। অনেক কিছু বলেছিলেন সেদিন। অনেক ইতিহাস তুলে দিয়েছিলেন। এরপর, আরো একবার তাঁর সাথে আলাপ হয় ফেসবুক লাইভে।
বছর খানেক ধরে ভালো যাচ্ছিলো না আব্দুল হাদীর শরীর। একারণে, তাঁকে সামনে রেখে নিউ ইয়র্কে বাঙালিদের অভিবাসনের ইতিহাস নিয়ে একটা প্রামাণ্যচিত্র বানানোর পরিকল্পনাও শ্লথ হয়ে যায়। শুক্রবার তাঁর ছোট ছেলে, সন্দ্বীপ সোসাইটি ইউএসএ’র সভাপতি আব্দুল হান্নান পান্না জানালেন, ‘আব্বা অসুস্থ। হাসপাতালে।’ আর, শনিবার রাতে তিনি চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে।
আব্দুল হাদী কিংবদন্তি। অভিবাসনের অগ্রপথিক। অভিবাসীদের নিয়ে প্রামাণ্যচিত্রটি বানানোর আলোচনা করছিলাম নিউ ইয়র্ক সিটির কর্মকর্তা শাহানা হানিফের সাথে।
তিনি বললেন, এমন একজন মানুষকেতো সিটি থেকে ‘সম্মাননা’ দেয়া উচিত। এরপর, শাহানার উদ্যোগে গতবছরের মার্চে সিটি সম্মানিত করে এই অগ্রদূতকে। চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউ এলাকায় ডিস্ট্রিক্ট থার্টি নাইনের কাউন্সিলমেম্বার ব্র্যাড লেন্ডার আব্দুল হাদীর হাতে তুলে দেন সম্মাননাপত্র।
আব্দুল হাদীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটা যুগের অবসান হলো। আট দশক আগে, তিনি যে মশাল হাতে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেছেন, কালের বিবর্তনে সেটি আমেরিকার বুকে একটা জনগোষ্ঠী মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছে। আব্দুল হাদীদের কল্যাণে আমেরিকায় এখন বাংলাদেশীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর প্রভাবশালী জনগোষ্ঠী সন্দ্বীপের। যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব সরকারী বিভাগ আর পেশায় সন্দ্বীপীদের পদচারণা।
লেখক : প্রবাসী সাংবাদিক
এসএ/
আরও পড়ুন