ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশি মার্কিন বিজ্ঞানী ড. জাহিদের সফলতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:০৭, ১ মে ২০২০ | আপডেট: ১৬:১৪, ১ মে ২০২০

আমেরিকান একাডেমি অব সায়েন্সেস নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশ্ভুত মার্কিন বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক এম. জাহিদ হাসান তাপস।

গত ২৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টির অফিসিয়্যাল পেজে এ তথ্য জানানো হয়। এই অনুষদে তিনিসহ মোট ১২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। ২৭৬ স্কলার্স, বিজ্ঞানী, চিত্র শিল্পী এবং জনপ্রতিনিধিকে অলাভজনক ও প্রাইভেট খাতে অবদানের জন্য এ স্বীকৃতি দেয়া হয়। 

জাহিদ হাসান পদার্থ বিজ্ঞানে ইউজিন ও হিগিংস অধ্যাপক। ২০০২ সালে তিনি এ অনুষদে যোগদান করেন। সে সময় থেকেই তিনি গবেষণা দলকে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন। ২০০৯ সালে তিনি স্লোয়ান রিসার্চ ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০১৩ সালে আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে উত্তীর্ণ হন। 

চার বছর আগে গোটা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি এই বিজ্ঞানী। এ সময় ‘ভাইল ফার্মিয়ন’ নামে এক অধরা কণার অস্তিত্ব আবিস্কার করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক। 

যে ‘ভাইল ফার্মিয়ন’ কণার কথা ১৯২৯ সালে প্রথম কল্পনা করেছিলেন বিজ্ঞানী হারম্যান ভাইল। এর ঠিক ৮৫ বছর পর সেই ‘ভাইল ফার্মিয়ন’ কণার অস্তিত্ব আবিস্কার করে সাড়া ফেলে দেন ড. জাহিদ। 

অন্যদিকে, ১৯২৪ সালে ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু ‘বোসন’ নামে যে কণা আবিস্কার করেন, তার ৯১ বছর পর আরেক বাঙালি ড. জাহিদের নেতৃত্বে আবিস্কৃত হয়েছে নতুন গ্রুপের এই কণা।

ফার্মিয়ন কণা আবিস্কারের পথ ধরে এবার তিনি নিয়ে এসেছেন আরও এক চমক! বিশ্ববাসীকে অবাক করে দেয়ার মতো তার নতুন চমকের নাম ‘টপোলজিক্যাল ক্যাগোমে কোয়ান্টাম চুম্বক’। তার এই আবিস্কারটির কথা প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘নেচার’-এ। ক্যাগোমে কোয়ান্টাম চুম্বক আবিস্কারের ফলে কম্পিউটার বর্তমানের চেয়ে শতগুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন হবে এবং মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে যুক্ত হবে অধিকতর প্রযুক্তি।

অধ্যাপক ড. জাহিদ হাসান তাপসের নেতৃত্বে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ২২ সদস্যের একদল গবেষক দীর্ঘদিন গবেষণার পর আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছেন ‘ক্যাগোমে কোয়ান্টাম চুম্বক’। 

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান অধ্যাপক ড. জাহিদ। তিনি শ্রীপুর আসন থেকে ছয়বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলীর পুত্র। ড. জাহিদের মা নাদিরা আলী তালুকদার। ১৯৭০ সালের ২২ মে ঢাকার সেন্ট্রাল রোডের নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন জাহিদ হাসান তাপস। 

১৯৮৬ সালে ধানমণ্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এসএসসিতে ঢাকা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। আর ১৯৮৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে এইচএসসি পাস করেন। এরপর গণিতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। চার দিন ক্লাস করার পর আর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়েই যাননি। 

তখন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রায় সময়ই মারামারি হতো বলেই জানা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির এই বিষয়টা জাহিদ একদমই পছন্দ করতেন না। ওই বছরই স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান আমেরিকা। অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন পদার্থবিজ্ঞানে। সুযোগ হয় নোবেল বিজয়ী তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন ভাইনভার্গের কাছে শিক্ষা গ্রহণের। এরপর মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে চলে যান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

মূলত তখন থেকেই পদার্থবিজ্ঞানের জগতে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। কাজ করেন অসংখ্য খ্যাতিমান ও নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানীর সঙ্গে। এরই মধ্যে বিশেষ আমন্ত্রণে গেস্ট হয়ে লেকচার দিতে যান প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার লেকচার শুনে মুগ্ধ হন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি। অতঃপর প্রস্তাব আসে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের।

এআই/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি