তালাক দেওয়া স্ত্রীকে আবার বিয়ে করবেন যেভাবে
প্রকাশিত : ২৩:৩৮, ১৪ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১১:০৮, ২৯ এপ্রিল ২০১৮
সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় পরিবার সমাজের মৌলিক কেন্দ্রীয় একক। আর এই পরিবারের আইনগত স্বীকৃতি আসে বিয়ের মাধ্যমে। বিয়ে শুধু দুই জন মানুষের মধ্যেই হয় না। বরং বর এবং কনের আত্মীয় স্বজন মিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই বিয়ে হয় দুই পরিবারের মধ্যেও।
তবে জীবন পথে চলতে নানা প্রতিকূলতায় অনেক সময়ই এই বিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক হতেও দেখা যায়। আবার অনেক সময় তালাকপ্রাপ্ত দম্পতি নিজেরাও নিজেদের সাথে আবারও বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হতে চান। বাংলাদেশে বলবত থাকা এই আইনে এই সুযোগও আছে।
এ লেখা থেকে জেনে নিন তালাক এবং তালাক পরবর্তী বিভিন্ন বিষয়।
জীবনে চূড়ান্ত বিপর্যয় থেকে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে রক্ষার জন্য ইসলামে তালাকের বিধান রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন চরমভাবে বিরোধ দেখা দেয়, পরস্পর মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ ও মাধুর্যমণ্ডিত জীবনযাপন যখন একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখনই আসে তালাকের প্রশ্ন।
তালাক কী?
সাধারণ অর্থে স্বামী-স্ত্রীর একে অপর থেকে পাকাপোক্তভাবে আলাদা হয়ে যাওয়াই তালাক। ইসলামে একদম শেষ উপায় হিসেবে তালাকের বিধান রাখা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার সম্পর্ক যখন একেবারেই তিক্ত আকার ধারণ করে আর সকল মিমাংসা প্রক্রিয়াও যখন ব্যর্থ হয়ে যায় তখন তালাকের অনুমতি দেওয়া আছে ইসলাম ধর্মে।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭ ধারায় বলা আছে, “কোনো পুরুষ যদি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চান তাকে মুসলিম আইনে অনুমোদিত যে কোনো পদ্ধতিতে ঘোষণার পরই তিনি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন, এ মর্মে চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে নোটিশ প্রদান করবেন এবং স্ত্রীকেও তার নকল দিবেন”।
মুখে তালাক দিলেই কী হয়ে যাবে?
অনেকেই ভুল ধারণা পোষণ করেন যে, স্ত্রীকে মৌখিকভাবে তালাক দিলেই হয়তো বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়ে যাবে। বিষয়টা মোটেও এমন নয়। বরং উপরের আইন থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, তালাকের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। অবহিত করতে হবে স্ত্রীকেও।
এরপরেও কিন্তু তালাক হয়ে যায় না। এরপরেও আরও কিছু ধাপ অবশিষ্ট থাকে।
নোটিশের পরে কী হবে?
স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর স্বামী চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে নোটিশ প্রদান করবেন এবং স্ত্রীকেও তার নকল দেবেন। একই আইনের ৭ ধারার উপধারা ৪-এ বলা আছে, স্ত্রী হাতে চিঠি পৌঁছানোর পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান একটি সালিশি বৈঠক আয়োজন করবেন। এ বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য দম্পতিদের মধ্যে মিমাংসা করা। যদি শেষ পর্যন্ত মীমাংসা না হয় তবে চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশের ৯০ দিন অতিবাহিত হলে তালাক নিজে থেকেই কার্যকর হয়ে যাবে।
তবে উপধারা- ৫ অনুযায়ী, তালাক দেওয়ার সময় স্ত্রী যদি গর্ভবতী থাকেন তাহলে সন্তান জন্ম না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না।
তালাক দেওয়া স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে
তালাকের নোটিশের পর পুনরায় বিয়ের ক্ষেত্রে দুই ধরনের অবস্থা হতে পারে। এক, তালাকের নোটিশ দেওয়া হয়েছে কিন্তু তালাক কার্যকর হয়নি। অথবা দুই, তালাক কার্যকর হয়েছে।
তালাকের নোটিশ দেওয়ার পর যে, ৯০ দিন সময় থাকে সেই সময়ের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী যদি চান যে তারা আবার সংসার জীবন (conjugal life) শুরু করবেন তাহলে কোন আইনী বাঁধা নেই।
শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ করতে হবে। স্বামী একটি আবেদনপত্রে বিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে নিজের ভুল স্বীকার করে নিলে পুনরায় তালাক দেয়া স্ত্রীকে গ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না। আগের মতো সংসার করতে পারবেন।
আর যদি তালাক কার্যকরের পর স্বামী-স্ত্রী আবার বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হতে চান তাহলে তারা নতুন করে বিয়ে করে নিলেই হবে। একটি নতুন সাধারণ বিয়ে যেভাবে হয় সেভাবে বিয়ে করে নিলেই হবে।
হিল্লা বিয়ে
অনেক মুসলিম সমাজেই হিল্লা বিয়ে নামক এক পদ্ধতির কথা বলা আছে। এ পদ্ধতি অনুযায়ী, তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে যদি স্বামী আবার বিয়ে করতে চান তাহলে ঐ স্ত্রীকে স্বামী ব্যতীত অন্য আরেকজন ব্যক্তির সাথে আগে বিয়ে দিতে হবে। সেই বিয়ে কার্যকর করা হবে অর্থ্যাত স্বামী-স্ত্রী ‘কনজুগাল লাইফে’ প্রবেশ করবেন। তারপর পূর্বের ডিভোর্স দেওয়া স্বামীকে বিয়ে করতে পারবেন।
তবে ইসলাম ধর্ম মতেও, হিল্লা বিয়েকে সমর্থন করা হয় না। অনেক ইসলামিক মনীষী এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন। মূলত, তালাক দেওয়া স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করতে ঐ স্বামীর কোন আইনী বাঁধা নেই।
মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের ৭ (৫) ধারায় বলা আছে, কোন আইনই স্ত্রীকে একই স্বামীকে, যার সাথে তালাক হয়েছে, বিয়ে করা থেকে বিরত করবে না। তবে তিনবার এমন কাজ করা যাবে। অর্থ্যাত সর্বোচ্চ তিনবার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে একই স্বামী বিয়ে করতে পারবেন।
এখানে বলে রাখা ভাল যে, তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে পুনরায় স্বাভাবিকভাবে বিয়ে করলেও নতুন এই বিয়েও বিবাহ রেজিস্ট্রারের অফিসে রেজিস্টার করা লাগবে।
টিকে