সন্তানকে পরিশ্রমী করে গড়ে তুলুন
প্রকাশিত : ১৬:১৭, ৩১ জানুয়ারি ২০২১
সন্তান জীবনে কতটা সফল হবে, তার মধ্যে কতটা ভালো-মন্দের সঞ্চার হবে সেটা নির্ভর করছে তার বাবা-মায়ের লালন পালনের উপরে। বাবা-মা চান তার সন্তানকে সেরা উপায়ে গড়ে তুলতে। কিন্তু কখনও কখনও কিছু ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সব সন্তানই সেরা হয়ে উঠে না। অধিকাংশ বাবা-মায়ের প্রবণতা হচ্ছে ননীর পুতুলের মতো সন্তানকে আগলে রাখা, অতিরিক্ত আরাম-আয়েশের মধ্য দিয়ে তাকে বড় করে তোলা। কিন্তু এতে তার সন্তান পরিপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, এটা বাবা-মায়েরা জানলেও মানতে চান না।
বাবা-মা চান ছেলেমেয়েকে সারাক্ষণ লেখাপড়ার জগতে আটকে রাখতে। এর ফলে আজকালকার ছেলেমেয়েরা বেড়ে উঠছে বাস্তবজ্ঞানবর্জিত জীবন-জগৎ সম্পর্কে অনভিজ্ঞ একটা আবহে। যারা পরিশ্রম করতে জানে না। যারা সেই পরিতৃপ্তি সম্বন্ধে জানতে পারে না, যা কঠোর পরিশ্রম থেকে আসে। যারা সেই আত্মবিশ্বাস সর্ম্পকে জানতে পারে না, যা একজন মানুষ সমস্যা মোকাবিলা ও সমাধানের মধ্য দিয়ে অর্জন করে। যারা সেই শারীরিক শ্রম করতে অভ্যস্ত হয় না, যার ফলে সে আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে উঠবে। তাই এটা একজন বাবা-মায়ের প্রকৃত দায়িত্ব তার অল্পবয়সী সন্তানকে এমন কাজের সুযোগ করে দেয়া, যা তাকে কষ্টসহিষ্ণু ও পরিশ্রমী করবে। ফলে তার মধ্যে গড়ে উঠবে এমন গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি, যা তার সারা জীবনের জন্যে সুফল নিয়ে আসবে। তাকে পরিচিত করবে ননীর পুতুল নয় বরং লৌহ মানুষ হিসেবে।
সন্তানকে তাই ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রমে অভ্যস্ত করে তুলুন। একটু একটু করে দায়িত্ব দিয়ে তাকে স্বাবলম্বী করে তুলুন। তার কাজ যতটা সম্ভব তাকেই করতে উদ্বুদ্ধ করুন। আসলে মা-বাবা যা বলেন সেটা নয়, মা-বাবা যা করেন সন্তান তাই শেখে। যেমন, সন্তান যদি ছোটবেলা থেকে দেখে যে ঘর গুছিয়ে রাখা হয়, সেও জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে শিখবে। যদি দেখে ঘরে জুতোটাকে এইভাবে রাখা হয়, সেও তাই রাখবে। কিন্তু সে যদি দেখে বাবা হয়ে আপনি ঘরে ঢুকে জুতো একটা এইদিকে ছুঁড়ে মারলেন, আরেকটা ওইদিকে কিংবা শার্ট খুলে বিছানায় দলা পাকিয়ে রাখলেন, সেও তাই করবে। তাই শুরুতইে আপনি তার রোল মডেল হতে চেষ্টা করুন।
অল্প বয়সে বাচ্চারা ঘরের কাজ করার মত সমর্থ্য না হলেও তাদের কিন্তু এ ব্যাপারে উৎসাহের কমতি থাকে না। এজন্যে তারা কিন্তু সুযোগ পেলেই মা-বাবার কাছে ঘুর ঘুর করতে থাকে তাদের কাজে হাত বাড়িয়ে দেবার আশায়। তাই সন্তানকে আপনার ছোট্ট সহকর্মী হবার সুযোগ দিন। গল্প ও খেলাচ্ছলে তাকে উদ্বুদ্ধ করুন। তাকে বয়স অনুযায়ী কাজ দিন। তার ছোট ছোট কাজগুলো যে পরিবারের জন্যে কতটা গুরুত্ব বহন করে সেটা তাকে অনুভব করতে দিন।
আসলে এই কাজটা কিন্তু তার কাছে একটা টিকেটের মতো, যে টিকেট দিয়ে সে প্রবেশ করে বেড়ে উঠার জগতে। যেখানে সে দায়িত্ব নিতে শেখে, কর্মদক্ষতার কৌশল শেখে এবং নিজের ও অন্যের প্রতি যত্নশীল হতে শেখে। পরিশেষে যোগ্যতা প্রমাণের মাধ্যমে সামনে এগুনোর সাহস অর্জন করে। আর ছোটবেলা এজন্যে উৎকৃষ্ট সময়।
এএইচ/