ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ব্রেস্ট ফিডিং’ নিয়ে ভোগান্তির শিকার আইনজীবীর আত্মকথা

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ১৭:১৩, ১৫ নভেম্বর ২০২১

তরুণ আইনজীবী অ্যাড. মাহিয়া মেহজাবিন রিফা

তরুণ আইনজীবী অ্যাড. মাহিয়া মেহজাবিন রিফা

সন্তান জন্মের পর প্রথম ছয় মাস তাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো খুবই দরকারী। কারণ প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ থেকেই শিশু যাবতীয় পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকরাও তাই সদ্যপ্রসূত মা-দেরকে প্রথম ৬ মাস বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাতে বলেন। কিন্তু অনেক মায়েরা কিছু পারিপার্শ্বিক কারণে তাঁদের সন্তানকে ‘ব্রেস্ট ফিডিং’ বা বুকের দুধ পান করাতে সমস্যায় পড়েন।

এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার কথা জানান সম্প্রতি একইসঙ্গে মাতৃত্ব রক্ষা ও আইনজীবী হয়ে ওঠা রংপুরের মেয়ে মাহিয়া মেহজাবিন রিফা। ঢাকা জজ কোর্টের তরুণ এই অ্যাডভোকেট তাঁর ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে লেখেন,  

‘প্রতিদিনই কোন না কোন মা-কে নিরবে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একজন মা-কে তার সন্তান নিয়ে যে কী পরিমাণ ভোগান্তির শিকার হতে হয়, তা শুধু একজন মায়ের পক্ষেই বোঝা সম্ভব। নারী হিসেবে আমি হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে গিয়েছি। কিন্তু মা হিসাবে আমি এখনো অনেকখানি পিছিয়ে। কারণ এদেশের সব 'মা' নারী হলেও সব নারী কিন্তু 'মা' হতে পারে না। তাই হয়তো বিষয়টি সবার দৃষ্টিগোচরে আসেনি।

কিন্তু যখন আপনি একজন মা, তখন আপনি কর্মজীবী বা গৃহিণী- যেই হোন না কেন, কমবেশি সব মাকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবেই। ঠিক তেমনি আমিও 'মা' হওয়ার আগে এই বিষয়টি অনুভব করতে পারিনি। কিন্তু মা হওয়ার পর হর-হামেশায় এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। আমি যখনই আমার সন্তানকে নিয়ে বাইরে কোথাও গিয়েছি, তখনই বিষয়টি আমাকে খুব ভাবিয়েছে। সেটা হোক না কেন হাসপাতাল, মার্কেট, কিংবা রেস্টুরেন্ট- সবখানেই একই সমস্যা। কোথাও ‘ব্রেস্ট ফিডিং’-এর ব্যবস্থা নেই।

যেহেতু আমি একজন 'মা', আর আমার বাচ্চাটা এখনও ছোট, তাই বাইরে আমার যত গুরুত্বপূর্ণ কাজই থাকুক না কেন, আমার বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়েই যেতে হয়। আর সেই গন্তব্যের স্থানে ‘ব্রেস্ট ফিডিং’-এর ব্যবস্থা না থাকায় কী পরিমাণ যে বিপাকে পড়তে হয়, তা শুধু একজন মায়ের পক্ষেই বোঝা সম্ভব। যেহেতু আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা যেমন খাবার, পোশাক, চাল-চলন, কাজে-কর্ম, অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সবকিছুতেই আধুনিক হচ্ছি। ঠিক তেমনি ‘ব্রেস্ট ফিডিং’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।’

যদিও ২০১৯ সালে নয় মাস বয়সী এক শিশুর মা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত অফিস বা কর্মস্থল এবং জনসমাগমস্থলে ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো নির্ধারিত জায়গা স্থাপনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেন।

নয় মাস বয়সী শিশু উমায়ের বিন সাদী ও তার মা ইশরাত জাহানের করা সেই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৭ অক্টোবর ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনে রুলও জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

যার প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশের সকল গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানায় ব্রেস্ট ফিডিং বা বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। শ্রম সচিব ও শ্রম অধিদফতরের চেয়ারম্যানকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশও দেয়া হয়।

বছর দুয়েক আগে পার্লামেন্ট অধিবেশন চলাকালেই প্রকাশ্যে তার শিশুকে বুকের দুধ খাইয়ে অনেক বাহবা কুড়িয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান এক পার্লামেন্ট সদস্য। কিন্তু বাংলাদেশের মতো সমাজে প্রকাশ্যে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর বিষয়টি খুব একটা ভালো চোখে দেখা হয় না। 

ফলে যে কোন কারণে ছোট শিশুকে নিয়ে বাইরে বের হওয়া মায়েদের জন্য বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়টি দারুণ এক অস্বস্তিকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় কখনো কখনো। তাই পৃথিবীর অনেক দেশের মতোই আমাদের সমাজেও পাবলিক প্লেসে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন হতে পারে এই সমস্যার এক মোক্ষম সমাধান।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি