ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:১৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ইমার্জেন্সি পিল হলো জন্ম নিরোধক বড়ি, ট্যাবলেট, কিংবা ক্যাপসুল। কিন্তু ওষুধটি সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণা বেশ কম। অনেকেই আছেন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কিংবা অপরিকল্পিত শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তখন ইমার্জেন্সি পিলের দরকার হয়ে পড়ে। এটি নারীদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

ইমার্জেন্সি পিল সেবনের নিয়ম

ইমার্জেন্সি পিলকে অনেক সময় মর্নিং আফটার পিল বলা হয়। এর মানে এই নয় যে এটি সকালেই সেবন করতে হবে। অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের ১২০ ঘণ্টা বা পাঁচ দিনের মধ্যে এটি সেবন করা যায়। তবে এটি ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনের মধ্যে সেবন করা উত্তম। ইমার্জেন্সি পিল সাধারণত তিন, পাঁচ ও ২১ দিনের হয়। তবে সেবনের আগে প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশাবলী অবশ্যই পড়ে নিতে হবে।

ইমার্জেন্সি পিল সেবনের উপকারিতা

ইমার্জেন্সি পিল ডিম্বস্ফোটনের সময় পিছিয়ে দিয়ে গর্ভধারণের ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করে। এই পিল দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে থাকে। পরিবার পরিকল্পনায় সাহায্য করে। স্বল্প মাত্রায় এই পিলের ব্যবহারে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। অতীতের কিংবা ভবিষতের গর্ভধারণেও সমস্যা সৃষ্টি করে না।

ইমার্জেন্সি পিল সেবনে ওজন বেড়ে যায়, এমন ধারণাও ঠিক নয়। এই ওষুধের সঙ্গে ওজন বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো ওষুধই গর্ভধারণ রোধ করার শতভাগ প্রতিশ্রুতি দেয় না।

ইমার্জেন্সি পিল বেশি সেবনের ঝুঁকি

ইমার্জেন্সি পিল স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। তাই চিকিৎসকরাই বলে দেন এটি দীর্ঘদিন সেবন না করতে। নিয়মিত ও দীর্ঘদিন এই পিল সেবন করলে গর্ভধারণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। হ্রাস পায় পিলের কার্যকারিতা। তাই যতটুক পারা যায় এই পিল বেশি মাত্রায় সেবন করা এড়িয়ে যেতে হবে।

ইমার্জেন্সি পিল সেবনের পর যেসব সমস্যা হতে পারে

কিছু ক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি পিল সেবনের পরও প্রেগন্যান্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সাধারণত ইমার্জেন্সি পিল সেবন করলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের হয়ে জরায়ুতে পৌঁছাতে দেরি হয়। এ সময়ের মধ্যে জরায়ুতে থাকা শুক্রাণুগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ডিম্বাণু শুক্রাণুর সাথে সফলভাবে নিষিক্ত হতে পারে না। গর্ভধারণ হওয়া থেকে বিরত থাকে।

আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে এই পিল সেবনের পরেও গর্ভধারণ হয়ে যায়। যদিও এটি খুব কম মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে। এই ওষুধ সেবনের কারণে পিরিয়ড সাইকেল অনিয়মিত হতে পারে। এছাড়া মাথা ঘোরা, বমির মতো সমস্যা হতে পারে। মাঝে মাঝে চর্ম ও যৌনরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ইমার্জেন্সি পিল। এই পিল সেবন করলে অবিবাহিত মেয়েদের সাদা স্রাব দেখা দিতে পারে। জরাযু দিয়ে যেতে পারে ফোটা ফোটা রক্ত। তাই ইমার্জেন্সি পিল সেবনে সতর্ক থাকাটা জরুরি।

ইমার্জেন্সি পিল নিয়ে যত ভুল ধারণা

এই পিল সবেন নিয়ে রয়েছে অনেক ভুল ধারণা কুসংস্কার, সচেতন হলেই যেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া সম্ভব।

১. অনেকেই মনে করেন, ইমার্জেন্সি পিল সকাল ছাড়া অন্য সময় খেলে কাজ হবে না। সত্যিটা হলো, তিন দিনের পিল গুলো ৭২ ঘন্টা এবং ৫ দিনের পিলগুলো ১২০ ঘন্টার যে কোনো সময় সেবন করা যায়। তবে অরক্ষিত যৌন মিলনের পর যত তাড়াতাড়ি এই পিল সেবন করা যায়, ততই এটি কাজ করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

২. অনেকেই মনে করেন ইমার্জেন্সি পিল কিনতেও ডাক্তারের প্রেসকিপশন দরকার। জেনে রাখুন, আপনি চাইলে যেকোনো সময় কাছের ওষুধের দোকানে গিয়ে চাইতে পারেন ইমার্জেন্সি পিল। এর জন্য কোনো লিখিত অনুমোদনের দরকার নেই।

৩. ইমার্জেন্সি নিয়ে সবচেয়ে বড় ভুল ধারণাটি হলো, এটির সেবন আর গর্ভপাত একই কথা। এটা পুরোপুরি একটি কুসংস্কার। কারণ ডিম্বাণুর সঙ্গে শুক্রাণুর মিলনের মাধ্যমে ভ্রূণের নিষিক্ত হতে কমপক্ষে ৫ দিন সময় লাগে। ইমার্জেন্সি পিলের কাজ এই সময়ের মধ্যে ডিম্বাণুর উর্বরতা কমিয়ে দেওয়া অথবা উর্বর ডিম্বাণুকে শুকাণুর সঙ্গে মিলনে বাধাগ্রস্ত করা। অর্থাৎ ভ্রূণ নিষিক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া থামানোই এর মূল কাজ। সুতরা!- যেখানে ভ্রুণই তৈরি হয়নি, সেখানে ভ্রুণ হত্যার প্রশ্ন তো আসবেই না! 

আজ মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব জন্মনিরোধ দিবস। অন্যান্য বছরের মতো এবারও সারা দেশে পালন করা হচ্ছে দিবসটি। প্রতিটি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষে ২০০৭ সাল থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর এটি পালন করা হয়।

এসবি/ 
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি