ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

করোনা সংকটে সতর্কতায় সুস্থতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৫৩, ২ এপ্রিল ২০২০

পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই এখন করোনা ভাইরাস নয়, করোনা-আতঙ্কে আক্রান্ত। বিশ্বের জনসংখ্যা এখন ৭৫৩ কোটি। আর নিবন্ধটি যখন লেখা হচ্ছে (২ মাচ, ২০২০ রাত ১০টায়) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় পৌনে ১০ লাখ। তার মানে পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র ০.০০৩৩% মানুষ এ রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৫০ হাজার ৩০০ জন। যাদের মধ্যে প্রায় দুই লাখ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অসুস্থরা দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন। 

কারণ পরিসংখ্যান বলছে, এ রোগটিতে আক্রান্তের ৯৫ ভাগই মাইল্ড বা ‘মৃদু’ আক্রমণের কবলে পড়েন। লক্ষণ প্রকাশের দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন বলে জানাচ্ছে ওয়াল্ডওমিটার। একই সঙ্গে সাইকোলজি ডুডে বলছে, আর লক্ষণ বলতেও জ্বর, কাশি, গলাব্যাথা আর সামান্য দুর্বলবোধ। মাত্র ৫% মানুষ সংকটাবস্থায় যান। তারা সুস্থ হতে পারেন, আবার ভিন্ন কিছুও হতে পারে। কিন্তু পৃথিবীর জনসংখ্যার তুলনায় হারটা কত? মাত্র ০.০০০০২৫%!

আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্র মতে, পৃথিবীতে প্রতিবছর সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় ১২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। হৃদরোগে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর মারা যায় ৮ লাখ মানুষ। আর প্রতি ৪০ সেকেন্ডে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। 

করোনা মারাত্মক প্রাণঘাতী কিছু নয়। তবে খুবই সংক্রামক। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে খুব সহজেই এটি অন্যদের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। সাথে সব সময় এক বা একাধিক রুমাল রাখবেন যেন হাঁচি-কাশি আসার সাথে সাথে এটা ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ঘন ঘন হাত ধৌত করবেন। পরীক্ষায় দেখা গেছে ভালোভাবে হাত ধুলে এই জীবাণু সংক্রমিত হওয়ার অনেকটাই কমে যায়। হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজার না হলেও চলবে। বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান (বাংলা সাবান) বরং আরও ভালো। কাউকে হাঁচি-কাশি দিতে দেখলে তার থেকে দু-তিনফিট দূরত্বে চলে যান। আপনি অসুস্থ না হলে মাস্ক ব্যবহার না করলেও চলে। কিন্তু যদি করেন তবে সেটা যথাযথ নিয়ম মেনেই করতে হবে। জ্বর বা এজাতীয় লক্ষণ দেখা দিলে কোয়ারেন্টিনে থাকুন। এ সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ইতিবাচকতার শক্তি বাড়ানোর জন্য নিয়মিতভাবে মেডিটেশন করুন।

এদিকে করোনায় আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানাচ্ছে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হলে করোনা ভাইরাসের আক্রমন থেকে মুক্তি মিলবে। সম্প্রতি দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে এক সাক্ষাৎকারে ভারতে হায়দরাবাদে অবস্থিত এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজির (এআইজি) চেয়ারম্যান জি পি নাগেশ্বর রেড্ডি বলেছেন,  ভাইরাসকে জয় করা সম্ভব। ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং বা জীবন রহস্যের উন্মোচন এবং এর ওপর তাপমাত্রার প্রভাব রয়েছে। এ ভাইরাসকে ঘিরে নানা কাহিনি আর মিথ্যা সংবাদ তৈরির মাধ্যমে মানুষকে আতঙ্কিত করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ ভাইরাসের কারনে আমাদের ভীত হওয়া যাবে না। এমন কোনো ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়নি যে আমাদের ভীত হতে হবে। তবে এটা মনে করে করার কারন নেই যে, ইতালি ও ফ্রান্সের মতো দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থা এমনটি হবে। 

মানুষের কাছে ইতিবাচক বার্তা যাওয়া উচিত উল্লেখ করে এ গবেষক বলেন, ‘ভারতে তিন সপ্তাহ ধরে লকডাউন চলছে। এ লকডাউন আর বাড়ানোর দরকার নেই।’ তাপমাত্রা এ ভাইরাস বাঁচতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে নাগেশ্বর রেড্ডি বলেন, ‘এটা নিয়ে এখনো বিস্তর বিতর্ক আছে। কিন্তু এমআইটির যে গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে এই ভাইরাসের তাপ-সহনশীলতার বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে এটি দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারবে না। এখানে ভারতের ক্ষেত্রে বলা যায়, মে মাসে যখন তাপ আরও বাড়বে, তখন ভাইরাসের সংক্রমণের হার কমে যেতে পারে। তাপমাত্রার একটা ভূমিকা থাকতে পারে। কিন্তু তা হবে মে মাসের পর।’

ভাইরাসের জিনগত কিছু বৈশিষ্ট পরিবর্তন হচ্ছে বলে জানান নাগেশ্বর রেড্ডি। তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাস যখন ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতে ছড়িয়েছে, তখন এর জিনগত কিছু বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়েছে। চারটি দেশ—প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র, পরে ইতালি, এরপর চীন এবং চতুর্থত, ভারতে এর জিনগত বৈশিষ্ট্য উন্মোচন করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, ইতালিতে ছড়ানো ভাইরাসের সঙ্গে ভারতে ছড়ানো ভাইরাসের ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর গুরুত্ব অত্যধিক হতে পারে। কারণ, ভারতের ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে কিছু কিছু জিনগত পরিবর্তন হয়েছে। স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমেই ভাইরাসটি মানবশরীরের কোষে সংযুক্ত হয়। ভারতের ক্ষেত্রে কম যুক্ত হয়েছে, যার অর্থ, এটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এটা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে।’ ইতালিতে বেশি মারা যাওয়ার কারণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইতালিতে এ ভাইরাসের আরএনএতে তিনটি নিউক্লিওটাইড পরিবর্তন হয়েছে। আর এর ফলে এটি মানুষের জন্য আরও মারাত্মক হয়ে পড়েছে। ইতালিতে অন্য কিছু বিষয় কাজ করেছে। সেখানে মারা যাওয়া বেশির ভাগ মানুষের বয়স ৭০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস একটি বিষয়। এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপেরও আধিক্য আছে। এসব মিলিয়ে সেখানে মৃত্যুর হার সাধারণের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতে এ হার ২ শতাংশ।’

এমএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি