ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বদলে গেছে অর্ধ-কোটি মানুষের জীবন

কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

প্রকাশিত : ১৯:৪৬, ৯ আগস্ট ২০২৩ | আপডেট: ১৯:৫৫, ৯ আগস্ট ২০২৩

কিছুদিন আগেও যাদের ছিল না কোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই, তারা এখন রঙিন টিন আর আধাপাকা বাড়িতে বসবাস করছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক কর্মসূচির বদৌলতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে বদলে গেছে দেশের অর্ধ-কোটি মানুষের জীবন। একটা সময় যারা অন্যের জমিতে দয়া-দাক্ষিণায় থাকা সেই মানুষগুলো আজ আত্মনির্ভরশীল। কৃষি থেকে শুরু করে নানা কাজের মাধ্যমে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন তারা। গৃহহীন এসব হতদরিদ্র মানুষেরা বাড়ির আশ্রয়ণের আঙ্গিনায় শাক-সবজির চাষ করছেন, আবার কেউ কেউ হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, কবুতর লালন পালন করে স্বনির্ভর হয়েছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে ভূমিহীন গৃহহীন মানুষকে দুই শতক জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে। উপকারভোগী ও পুনর্বাসনের পদ্ধতি বিবেচনায় এটি বিশ্বের বৃহত্তম সরকারি পুনর্বাসন কর্মসূচি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬০৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৪১ আলখ ৪৮ হাজার ৩৫ জন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প ইতিমধ্যে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭ পরিবারকে সরাসরি পুনর্বাসন করা হয়েছে। ভুমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা  ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সহ সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির অধিনে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯০ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

১। ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন।

২। প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা।

৩। আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণ।

একটি ঘর কীভাবে সামগ্রিক পারিবারিক কল্যাণে এবং সামাজিক উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন তথা দারিদ্র্য বিমোচনের এই নতুন পদ্ধতি ইতোমধ্যে ‘শেখ হাসিনা মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন এবং পর্যায়ক্রমে সেগুলি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।

এই উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে দারিদ্র্য। জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের সময় বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ। একটানা ৩ মেয়াদে সরকার পরিচালনা করে গত সাড়ে ১২ বছরে তিনি এ হার ২০.৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।

‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন-গৃহহীন ছিন্নমূল মানুষকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের আওতায় আনছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা ঘোষণা দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না।’

প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের ৬৪ জেলার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের তালিকা করা হয়। এই তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির তত্ত্বাবধানে একটি চলমান প্রক্রিয়া।

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী সফরে গিয়ে আশ্রয়ণহীনদের নিয়ে সর্ব প্রথম পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশী ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার পুনর্বাসনের মতো জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো স্থবির হয়ে পড়ে।

বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো পুনরায় শুরু করেন। তাই তিনি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল’ সামনে এনে পিছিয়ে পড়া ছিন্নমূল মানুষকে মূলধারায় আনার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিনে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন এবং একই বছর তিনি সারা দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে শুরু করেন “আশ্রয়ণ প্রকল্প”। যা আজ সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

কেআই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি