দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচনে শীর্ষের তালিকায় বাংলাদেশ: জাতিসংঘ
প্রকাশিত : ১৫:৩৭, ১৩ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ১৬:৫৬, ১৫ জুলাই ২০১৯
বাংলাদেশে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ ‘বহুমাত্রিক’ দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে। এ ধরনের দারিদ্র্যের কারণে মোট জনসংখ্যার ২১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ বিপদগ্রস্ত অবস্থায় বাস করছে। বাংলাদেশের ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছেন।
তবে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গত এক দশকে বড় সাফল্য অর্জন করেছে।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ‘বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই)-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এটি তৈরিতে ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ‘বহুমাত্রিক’ দরিদ্র বলতে বোঝানো হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মানদণ্ডে একটি পরিবারের সার্বিক পরিস্থিতি। এ তিনটি বিষয়ে দশটি সূচক রয়েছে। যদি কোনো পরিবারে দশটি সূচকের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ঘাটতি থাকে, তাহলে তাকে বহুমাত্রিক দরিদ্র বা গরিব বলে বিবেচনা করা হবে।
স্বাস্থ্য সূচকের মধ্যে রয়েছে পুষ্টি, শিশুমৃত্যু। মানবসম্পন্ন জীবনযাত্রার মধ্যে রয়েছে উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন, নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ ও সম্পদের মালিকানা। আর শিক্ষার মধ্যে রয়েছে স্কুলে উপস্থিতি ও প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করা।
প্রতিবেদনে, এগুলোর ভরযুক্ত (ওয়েটেড) গড় নির্ণয় করে দারিদ্র্যের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি দারিদ্র্যের গভীরতাও নির্দেশ করে এমপিআই।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ও সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম বলেন, দারিদ্র্য পরিমাপের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। বিশ্বব্যাংকও তাদের পরিমাপক পরিবর্তন করছে। তবে বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ন্যূনতম ক্যালরি গ্রহণে ব্যয়িত অর্থকে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশের ‘বহুমাত্রিক’ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ১০টি মানদণ্ডের মধ্যে স্কুলে ভর্তির হার ২৫ দশমিক ২ শতাংশ, স্কুলে উপস্থিতির হার আরও কম ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর শিশুমৃত্যুর হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ আর অপুষ্টির হার ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
এদের মধ্যে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ, ৪ দশমিক ৩ শতাংশ নিরাপদ পানি পায়। আর দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ রান্নার কাজে জ্বালানি তেল বা গ্যাস ব্যবহার করে, ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ স্যানিটেসশন সুবিধা পায় ও ২৮ দশমিক ৩ শতাংশের কিছু সম্পত্তি আছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ১২ শতাংশ ছাত্র ‘বহুমাত্রিক’ দরিদ্র পরিবেশে থাকছে। এরা সবাই স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। ছাত্রীদের ‘বহুমাত্রিক’ দরিদ্র পরিবেশে থাকার হার কম, ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহুমাত্রিক দরিদ্রের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসম্ভব সাফল্য অর্জন করেছে। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ ‘বহুমাত্রিক’ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। এমপিআইর দশটি সূচকের মধ্যে ৯টিতে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো। এক বছর আগে তা ছিল প্রায় ১৮ শতাংশের মতো।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক একই শূন্য দশমিক ১৯৮। যদিও পাকিস্তানে অসমতা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশে অসমতা এখন শূন্য দশমিক ০১৬। আর পাকিস্তানে শূন্য দশমিক ০২৩। বিশ্বের ১০১টি দেশের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।