জাতীয় পরিচয়পত্র লক: যেসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন শেখ হাসিনা
প্রকাশিত : ২০:১৫, ২১ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ২০:২৬, ২১ এপ্রিল ২০২৫

রাষ্ট্র ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এবং বর্তমানে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অবরুদ্ধ (লক) করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। ফলে ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও তিনি এনআইডি-নির্ভর সরকারি-বেসরকারি কোনো সেবা গ্রহণ করতে পারবেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু শেখ হাসিনা নন— শেখ পরিবারের আরও ৯ সদস্যের এনআইডিও একইভাবে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের মৌখিক নির্দেশে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যাদের এনআইডি লক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন সজীব ওয়াজেদ, সায়মা ওয়াজেদ, শেখ রেহানা, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক, শাহিন সিদ্দিক, বুশরা সিদ্দিক, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও তারিক আহমেদ সিদ্দিক।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীরের মৌখিক নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এনআইডি লক থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নাগরিকত্ব হারান না এবং ভোটার তালিকাতেও থাকেন, তবে এনআইডি-নির্ভর ২২টি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হন।
এই সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে: আয়কর শনাক্ত নম্বর (টিআইএন), ব্যাংক হিসাব খোলা, শেয়ার বাজারে বিও হিসাব, পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করা ও নবায়ন, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, সরকারি ভাতা ও অনুদান, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সংযোগ, টেলিকম সংযোগ, ভূমি ক্রয়-বিক্রয়, বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন, চাকরির আবেদন, সরকারি সেবা ও ই-টিকেটিং সুবিধা, এমনকি আসামি বা অপরাধী শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াও এতে অন্তর্ভুক্ত।
আইন অনুযায়ী, কেউ যদি জন্মসনদ বা এনআইডিতে মিথ্যা তথ্য দেন, রাষ্ট্র বা সংবিধানবিরোধী কাজে যুক্ত হন কিংবা আন্তর্জাতিক অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন— তাহলে তার নাগরিক অধিকার সীমিত করা বা বাতিল করার বিধান রয়েছে।
গণঅভ্যুত্থান দমন ও সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ৩২৪টি। এর মধ্যে ঢাকায় ২৯৭টি এবং ঢাকার বাইরে ২৭টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে বলপ্রয়োগ ও সহিংসতা চালানো হয়।
২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে। এরপর ১৮ নভেম্বর তাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান এবং এখনো সেখানে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারত সরকারের কাছে বন্দি প্রত্যর্পণের আবেদন করেছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ এবং সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলোর আওতায় আন্তর্জাতিক অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে কেউ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। এছাড়া ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, এ ধরনের অপরাধে দোষী ব্যক্তির ভোটার নামও তালিকা থেকে কাটা যেতে পারে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্যরা জানান, আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গৃহীত হয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তারা আজীবন নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সম্প্রতি জানিয়েছেন, জুলাইয়ের গণহত্যা-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কয়েকটির রায় আগামী অক্টোবরের মধ্যে ঘোষণা হতে পারে। এসব মামলায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারাও আসামি হিসেবে আছেন।
এসএস..
আরও পড়ুন