বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তি
প্রকাশিত : ১১:৩৮, ২১ জুলাই ২০২০
মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে দমকা ও ঝড়োহাওয়াসহ থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টার আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকাতে ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মুষলধারে এই বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীবাসী।
গত সোমবার (২০ জুলাই) ভোর ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বেকর্ড করা হয়েছে রংপুরে ১৯৫ মিলিমিটার।
আজ মঙ্গলবার (২১ জুলাই) সকালে আবহাওয়া অফিস থেকে ঢাকার ভারী বৃষ্টিপাতের তথ্য পাওয়া যায়। ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সময়ের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দক্ষিণ/দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে, যা দমকা আকারে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পযর্ন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮৭ মিলিমিটার।
অন্যদিকে আজ ২১ জুলাই দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালি, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের উপর দিয়ে পশ্চিম/দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর কারওয়ানবাজার, গ্রিনরোড, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, রামপুরা, বাড্ডা, শান্তিনগর, মালিবাগ এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে অফিসগামী এবং শ্রমজীবী মানুষ। অনেককেই বৃষ্টির মধ্যে ভিজে অফিসে যেতে দেখা গেছে।
অপরদিকে, দেশের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। অনেক জেলায় ডুবে গেছে প্রধান সড়ক। তলিয়ে গেছে ফসলী জমি ও মাছের ঘের। ত্রাণ না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন দুর্গতরা।
এখনো অনেক নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষের। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। দুর্গত এলাকায় খাদ্য, জ্বালানি ও বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। আছে গবাদি পশুর খাবার সংকট।
প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে বেড়েছে নদনদীর পানি। তলিয়ে গেছে শরীয়তপুর-মাওয়া সড়কের বিভিন্ন অংশ।
পানি আরো বেশী হলে ঢাকার সাথে সড়ক পথে শরীয়তপুরের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানায় স্থানীয়রা। ডুবে গেছে নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা। খোলা আকাশের নীচে দিন কাটছে অনেকের।
ফেনীর সোনাগাজীর ছোট ফেনী নদীর ৮ টি স্থানের ভাঙনে রাস্তা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রতিবছর বর্ষা এলেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এসে ছবি তুলে নিয়ে যান, বাঁধের আশ্বাস দেন কিন্তু বাস্তবায়ন নেই।
রাজবাড়ীতে বাড়ছে পদ্মার পানি। জেলার অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট ও শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা পরেছেন বিপাকে। বন্যায় শতশত বিঘা জমির ধান,পাট,বাদাম ,বোরো ধানের বীজতলা পানিতে ডুবে যাওয়ায় চিন্তিত কৃষক
কুড়িগ্রামে অবিরাম বৃষ্টির কারণে ধরলা নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। ব্রহ্মপূত্র নদের পানি অপরিবর্তিত থাকলেও বিপদসীমার উপরে। বন্যার পানি প্রবেশ করে চিলমারী উপজেলা শহরসহ নতুন করে আরে ৫০গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এনিয়ে জেলার ৩ লক্ষ পানিবন্দী মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নের ৪৭৫টি গ্রাম পানির নীচে তলিয়ে আছে।
টাঙ্গাইলে যমুনাসহ সব নদীর পানি কমলেও জেলার পূর্বদিকের উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ছোনকা পাড়া ব্রিজ বন্যার পানির তোড়ে ভেসে যাওয়ায় বাসাইল উপজেলা সদর থেকে কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন সড়কটি বন্ধ রয়েছে। এদিকে যমুনা, ধলেশ্বরী ও ঝিনাই নদীর পানি কিছুটা কমেছে।
বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলায় বেশ কয়েকটি সড়ক ও সেতু ধ্বসে যাওয়ায় ভেসে গেছে অনেক গ্রাম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তলিয়ে আছে পানিতে। জেলা প্রশাসক জানান শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জে জেলার সার্বিক বন্যার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্যায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা দুর্গত মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে পানি বাহিত রোগ। রয়েছে খাবারের অভাব।
গাইবান্ধায় তিস্তা, ঘাঘট, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি সামান্য কমলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। এইসব এলাকায় খাদ্যাভাব, পানির সংকট ও পয়:নিস্কাশন সমস্যা প্রকট। অন্যদিকে ত্রান বিতরণ নিয়েও আছে নানা অভিযোগ।
সিলেটের দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি বাড়িঘর থেকে নামার আগেই আবার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমা-কুশিয়ারার পানি। নিম্নাঞ্চলের বহু এলাকা এখনো পানিতে ডুবে আছে।
ফরিদপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। এছাড়া সরদপুর, চরভদ্রসন ও ফরিদপুর সদর উপজেলার শতাধিক গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট ।
এসএ/
আরও পড়ুন