নড়াইলে শিক্ষককে হেনস্থার বিচার দাবি শাহবাগের সমাবেশে
প্রকাশিত : ২১:২৯, ২৭ জুন ২০২২ | আপডেট: ২১:৩০, ২৭ জুন ২০২২
নড়াইলে পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানোর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে ঢাকায় এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে।
সোমবার বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে এ প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। এতে মাইনরিটি রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সংহতি জানায়।
সমাবেশে থেকে সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্রের বেধড়ক পিটুনিতে আহত উৎপল কুমার সরকারের (৩৭) মৃত্যুর ঘটনারও বিচারের দাবি জানানো হয়।
বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সমালোচনায় থাকা ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ফেইসবুকে নড়াইলের এক কলেজ ছাত্রের পোস্টকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১৭ জুন নড়াইলের সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ওই ছাত্রের পোস্ট দেওয়ার পরদিন কলেজে গেলে কিছু মুসলমান ছাত্র তাকে ওই পোস্ট মুছে ফেলতে বলেন। ওই সময় ‘অধ্যক্ষ ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন’ এমন কথা রটানো হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। অধ্যক্ষ ও দুজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ বাঁধে।
ওই সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কলেজের ছাত্র ও স্থানীয়রা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। ওই ঘটনার কিছু ছবি ও ভিডিও ফেইসবুকে আসে, যাতে পুলিশের উপস্থিতিও দেখা যায়।
শাহবাগের সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, “একেকজন শিক্ষক একেকভাবে নির্যাতন ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন, কিন্তু শিক্ষক মহলের দায়সারা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষক লাঞ্ছনা এখন শিক্ষক হত্যায় উপনীত হয়েছে। শিক্ষকদের প্রতি এই নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞকে আমরা উৎসবে পরিণত করেছি।
“যে বাচ্চা ছেলে-মেয়েগুলো এসব করছে, তাদের হাতে কিন্তু বাংলাদেশের ভবিষ্যত। তাহলে কেমন হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত, সেটি ভাবতে হবে।”
একই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ধারাবাহিকভাবে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে হেনস্তা, ড. অভিজিৎকে হত্যা এবং হুমায়ুন আজাদকে বইলেখার জন্য মেরে ফেলার মত ঘটনা ঘটে আসছে। পুরো বাংলাদেশ জুড়ে অসংখ্য পূজা মণ্ডপে-মন্দিরে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
“যে পুলিশ রক্ষা করবে, তার সামনে নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। পুলিশের পোশাক পরে, তার ভেতরেও ধর্মান্ধতা। এদেশ ধর্মান্ধতা পরিণত হচ্ছে চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক। তখন এখানে গান, চারুকলা, কবিতা, শিল্পসাহিত্য সব হারিয়ে যাচ্ছে। চূড়ান্ত সময়েও যদি আমাদের বোধোদয় না হয়, তাহলে পরাজয়ের জায়গা আরও সম্প্রসারিত হবে।”
সমাবেশে ‘নিপীড়ন বিরুদ্ধে শাহবাগ’ প্ল্যাটফর্মের সংগঠক ও শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবীন আহসান বলেন, “নড়াইলে যে ঘটনাটি ঘটেছে এটি যেন বাংলাদেশের মানচিত্রে জুতার মালা পরানো হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস পুলিশকে ডেকেছেন নিজের নিরাপত্তার জন্য, সেই পুলিশের সামনে তাকে হেনস্থা ও অপমানের শিকার হতে হয়েছে।
“সাভারে শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এই হতভাগ্য বাংলাদেশ আমি ৪৯ বছরে দেখিনি।”
শিক্ষার্থীদের ‘সাম্প্রদায়িক’ হয়ে ওঠার জন্য পাঠ্যক্রমকে দায়ী করে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, “আজকে পাঠ্যপুস্তক সাম্প্রদায়ীকীকরণ হয়েছে, একইসঙ্গে বর্তমান সরকার গত ১৪ বছরে সাম্প্রদায়িকতাকে তোষণ করে উগ্রবাদীদের হাতে দেশকে তুলে দিচ্ছে।
“আজকে শুধু একজন শিক্ষককে জুতার মালা পরানো হয়নি, এটা পুরো জাতিকে জুতার মালা পরানো হয়েছে।”
নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক সাবেক ছাত্রনেতা আকরামুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক খান, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক, সিপিবি নেতা লাকী আক্তার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম।
এএইচএস
আরও পড়ুন