উত্তরায় গার্ডার চাপায় ৫ জন নিহতের ঘটনায় মামলা
প্রকাশিত : ০৯:২২, ১৬ আগস্ট ২০২২
রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের একটি গার্ডার পড়ে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় চালক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ আগস্ট) রাতে নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝরণা আক্তারের ভাই মো. আফরান মণ্ডল বাবু বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় এ মামলা করেন।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসীন মামলার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় ক্রেনের চালক, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি) ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। ব্যক্তি হিসেবে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতদের।
ওসি মোহাম্মদ মোহসীন জানান, ‘উত্তরায় ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহত দুই বোনের ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। জড়িত দোষীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।’
মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে একটি চাইনিজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি কাজ করছে। এই কাজের অংশ হিসেবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঢাকা থেকে গাজীপুরগামী রাস্তায় একটি ক্রেনের সাহায্যে বক্সগার্ডার লোবেট ট্রাকে ওঠানো হচ্ছিল।
প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে সড়কে যান চলাচলের মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে এই কাজ করা হচ্ছিল। তার স্বজনদের বহনকারী গাড়িটি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে একটি বক্স গার্ডার গাড়িটির চালকের আসনসহ পেছনের আসনের অর্ধেকের বেশি অংশজুড়ে আছড়ে পড়ে। ফলে ঘটনাস্থলেই গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং গাড়িতে থাকা ৭ জনের মধ্যে ৫ জন নিহত হন। আসামিদের অবহেলার কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। ক্রেনের চালক, সিজিসিসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে।
হতাহতদের পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বৌভাতের দাওয়াত খেয়ে স্বজনরা নবদম্পতিকে নিয়ে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে উত্তরার জসীম উদ্দীন মোড় সংলগ্ন সড়কে বিআরটির প্রকল্পের গার্ডার আছড়ে পড়ে তাদের বহনকারী প্রাইভেটকারের ওপর। প্রাইভেটকারে সাত আরোহীর মধ্যে শুধু বেঁচে যান নবদম্পতি হৃদয় (২৫) ও রিয়া মনি। শনিবার (১৩ আগস্ট) তাদের বিয়ে হয়।
প্রাইভেটকারে আরোহীদের মধ্যে ছিলেন- হৃদয়ের বাবা রুবেল (৬০), হৃদয়ের শাশুড়ি ফাহিমা (৪০), রিয়া মনির খালা ঝরনা (২৮), ঝরনার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হৃদয় ও রিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বজনরা জানান, গত শনিবার হৃদয় ও রিয়ার বিয়ে হয়। তারা আজ (১৫ আগস্ট) ছেলের বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে মেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। হৃদয়ের পরিবার দক্ষিণখান থানার কাওলা আফিল মেম্বারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। আর কনে রিয়া মনির বাড়ি আশুলিয়ার খেজুর বাগানে আসরাফউদ্দিন চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায়।
হৃদয়ের চাচাতো ভাই রাকিব জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা দুর্ঘটনার খবর পান। প্রায় তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাড়ি থেকে মরদেহগুলো বের করে উদ্ধারকারীরা।
এসময় রাকিব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার কীভাবে এ অব্যবস্থাপনার মধ্যে কাজ করছে? আমরা কার কাছে বিচার দেব! আমাদের লাশগুলো অন্তত বের করে দিক। কিন্তু এখানে তো কোনো উন্নত যন্ত্রপাতি নেই।
এর আগে গত ১৫ জুলাই গাজীপুরে একই প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক ও একজন পথচারী আহত হন।
এনএস//
আরও পড়ুন