ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

বঙ্গবন্ধু পরিষদের সম্মানিত সভাপতিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩৮, ২৬ অক্টোবর ২০২৩

আজ আমাদের সম্মানিত সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের (পুরো নাম আবু আহসান মোহাম্মদ শামসুল আরেফিন সিদ্দিক) ৭১তম জন্মদিন। আমরা গর্বিত যে, আমাদের সম্প্রতি প্রয়াত সভাপতি ডা. এস এ মালেক এমন একজন ব্যক্তিকে আমাদের সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন যিনি নিজ ব্যক্তির পরিচয়কে ছাপিয়ে উচ্চ ব্যক্তিত্বের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছেন। তাঁর এই ব্যক্তিত্ব শুধু কোনো উত্তরাধিকার বা সঙ্গসুখ বা সাংগঠনিক সংশ্লিষ্টতার কারণে তৈরি হয়নি। বরং আজীবন পরিশ্রম, আদর্শের প্রতি আন্তরিক আনুগত্য, প্রশ্নহীন নিষ্ঠা, সৎ সহকর্মীদের প্রতি সহমর্মিতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, আপোষহীন সংগ্রাম, সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত ভূমিকা গ্রহণ ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি আজকের অবস্থানে এসেছেন। স্বভাবতই তাঁর নাম ও যশ আজ দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত।

তাঁর অনেক পরিচয়ের মধ্যে অন্যতম হলো তিনি এই দেশের ইতিহাসে সব সময় স্বৈরাচার, মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছেন ও নিজের পেশাগত জায়গা থেকে কার্যকর নেতৃত্ব দিয়েছেন। এসব কারণে তাঁকে বিরোধী পক্ষ থেকে বারবার হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে। সেই হুমকিগুলো এতোটাই শক্তি-মদমত্ত মহল থেকে এসেছিল যে বিরোধী পক্ষের সরকার জনগণের দাবির কারণে তাঁকে নিরাপত্তা দিতে সার্বক্ষণিক গানম্যান নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছিল। যদিও এরকম নিরাপত্তা নিতে তাঁর প্রবল আপত্তি ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সম্ভবত তিনিই একমাত্র উপাচার্য যিনি দীর্ঘ নয় বছর (২০০৯-২০১৭) অত্যন্ত সাফল্যের সাথে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর দায়িত্ব পালনের এই সময়ে অত্যন্ত বিশৃংখল বিশ্ববিদ্যালয়টির কোথাও একটিও গুলির আওয়াজ শোনা যায়নি, ছাত্রছাত্রীরা নির্বিঘ্নে ক্লাস করেছে, সেশন জট শূন্যের কোঠায় চলে এসেছিল, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োগে কোনো অন্যায়ের কথা ওঠেনি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ হয়েছিল প্রায় হাজার কোটি টাকার। এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার নির্মাণ কাজ চলছে। এই প্রায় ১,৭০০ কোটি টাকার বরাদ্দ উপাচার্য থাকাকালে বিভিন্ন সময়ে তিনি সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এনেছিলেন, যা তাঁর সততার কারণেই সম্ভব হয়েছিল বলে আমার বিশ্বাস।

আরো একজন উপাচার্যের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বিপুল পরিমাণ টাকা বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল। তিনি হলেন প্রফেসর এ কে আজাদ চৌধুরী (১৯৯৬-২০০১ সময়কাল) এবং তিনিও অত্যন্ত সৎ ছিলেন। তিনিও সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেই বরাদ্দ নিতেন। বলা বাহুল্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসহ দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যা কিছু অবকাঠামো ও অন্যান্য উন্নয়ন, তা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময়গুলোতেই হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শুরু করেছেন এবং বঙ্গবন্ধু-কন্যা তাকে আরো বিকশিত করেছেন। আর, বর্তমানের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. এ কে আজাদ চৌধুরীর নামটিও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাথে ঐতিহাসিকভাবে যুক্ত, কারণ তিনি এর জন্মকালীন উদ্যোগ গ্রহণকারীদের অন্যতম একজন। আজাদ স্যার ও আরেফিন স্যারের এই দুর্নীতিমুক্ত থাকা সততার জন্য তাঁদেরকে অশেষ শ্রদ্ধা। আমাদের সংগঠনেও সততা ও নৈতিকতার এমন শিক্ষা জোরদার হোক।

আরেফিন স্যারের আরো একটি বিষয় অনেকেই জানেন না বলে উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে মনে করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খুবই ব্যস্ত থাকেন। প্রতিদিনই গড়ে ৫টি সভা থাকে যেখানে উপাচার্যকে সভাপতিত্ব করতে হয়। সেই সভাগুলোতে অন্যদের মতো উপাচার্যও একটি সিটিং এলাউন্স পান। এটি সরকারি নিয়ম। কিন্তু আমাদের সভাপতি আরেফিন স্যার কখনও এই ভাতাটুকু নিতেন না। তিনি বলতেন, টাকাটা জমুক। দীর্ঘ নয় বছর উপাচার্য থাকাকালীন এই টাকাগুলো জমতে জমতে কোটি টাকার বেশি হয়েছিল। কিন্তু আসার সময় তিনি হালাল পাওনা এই কোটি টাকা না নিয়ে

বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে এসেছেন, বিশ্ববিদ্যলয়ের কোনো ভালো কাজে খরচ করার জন্য! এই দেশে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত অনেক উপাচার্য এসেছেন ও গেছেন। এ রকম উদাহরণ কিন্তু এ পর্যন্ত একটিও নেই।

অথচ তিনি কিন্তু খুব ধনী তা নন। তাঁর পরিবারটিকে উচ্চ মধ্যবিত্ত বলা যায়। পাওনা কোটি টাকা, এতগুলো টাকা, তিনি স্বেচ্ছায় কীভাবে দান করেন, আমার মাথায় আসে না। আমি নিশ্চিত জানি, এরকম অবস্থায় আমিও পারতাম না। আমি পরপর দুইবার ঢাকার বাইরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে যাওয়ার জন্য অনুরুদ্ধ হয়েছিলাম। আমার আর্থিক সীমাদ্ধতার কারণে আমি যাইনি। বিশেষ করে উপাচার্য হলে আমি যে অতিরিক্ত ভাতা ও সুবিধা পাবো তা দিয়ে আর যাই হোক, ঢাকায় পরিবার ও ঢাকার বাইরে আমার সাংসারিক খরচ সৎভাবে নির্বাহ করা সম্ভব নয় বলেই আমার মনে হয়েছে। আমি যাইনি, কিংবা গেলেও আমি এতগুলো টাকা সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করতে পারতাম না। কিন্তু তিনি পেরেছেন। এটা সততার বাইরেও আরো কিছু।

বিনয়ী, সদালাপী, এই বয়সেও অত্যন্ত পড়ুয়া, বিশেষভাবে রবীন্দ্রভক্ত, আমাদের এই প্রিয় সভাপতিকে নিয়ে আমরা গর্বিত। বঙ্গবন্ধু পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁকে জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা। আরো অনেক উদাহরণ সৃষ্টির জন্য আপনি দীর্ঘায়ু হোন, মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে এই আমাদের প্রার্থনা। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু ।
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি