ঈদের পর ভাঙ্গা হবে কারওয়ান বাজার
প্রকাশিত : ০৯:০০, ১৯ মার্চ ২০২৪
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঈদের পরে কারওয়ান বাজারে ডিএনসিসির পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা হবে। তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারের এই কাঁচাবাজারের ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় এটি ধসে পড়তে পারে।
সোমবার বিকালে রাজধানীর গাবতলিতে ডিএনসিসির প্রস্তাবিত কাঁচাবাজারে ডিএনসিসির আওতাধীন কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের গাবতলীর আমিনবাজার পাইকারী কাঁচাবাজারে স্থানান্তরের লক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে বহু মানুষের জীবন হুমকিতে রয়েছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের গাবতলিতে ডিএনসিসির পাইকারি কাঁচাবাজারে স্থানান্তর করা হবে। দ্রুতই গাবতলিতে বরাদ্দ দেওয়া হবে। বরাদ্দ দেয়া হলে আপনারা যারা আসবেন না তাদের দায় নিজেদের নিতে হবে। বরাদ্দ পাওয়ার পরে কেউ না আসলে সেটি নিয়ম অনুযায়ী অন্যজনকে বরাদ্দ দিয়ে দেয়া হবে।’
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি।
তিনি বলেন, ‘কারওয়ান বাজারের ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে বা আগুন লাগলে বহু মানুষ হতাহত হবে। আমরা আর মৃত্যুর মিছিল দেখতে চাই না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কোন ব্যবসা চলতে দেয়া যাবে না। ঈদের পরে কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর শুরু হবে। ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নেন। মেয়র একটি চমৎকার সুযোগ আপনাদের জন্য দিচ্ছেন। আপনাদের অবশ্যই এই সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। মেয়র বলেছেন পাশেই নদীর পাশে বিজিবি মার্কেটে মাছের আড়ৎ নির্মাণ করে দিবেন। সব সুবিধাই আপনাদের জন্য নিশ্চিত করা হবে।’
মতবিনিময় সভার শুরুতে কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ গাবতলিতে স্থানান্তরের জন্য তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখন মেট্রোরেল হয়ে গেছে। কারওয়ান বাজার সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ট্রাক ঢুকতে অনেক সমস্যা হয়। এছাড়া কারওয়ান বাজারের ট্রাক তেজগাঁওয়ের রাস্তা দখল করে রেখেছে। কারওয়ান বাজার স্থানান্তর করে এলাকার পরিবেশ সুন্দর করতে হবে। গাবতলিতে স্থানান্তর হওয়ার পরে আপনাদের কি কি সুবিধা প্রয়োজন সে বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সাথে আলাপ করবেন। মেয়র আপনাদেরই প্রতিনিধি। উনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘ঢাকার মিরপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুর একদিনে গড়ে উঠেনি। সময়ের পরিক্রমায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট নেতৃত্বে ঢাকার উন্নয়ন প্রসারিত হচ্ছে। কারওয়ান বাজার এখন ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে। একটি সিটির প্রাণকেন্দ্রে পাইকারি কাঁচাবাজার থাকতে পারে না। ট্রাক আসছে, ট্রাক যাচ্ছে, রাস্তা বন্ধ করে মালামাল নামছে। কোন ডিসিপ্লিন নাই। রাস্তায় প্রচন্ড ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়। কারওয়ান বাজারটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কোন নিরাপত্তা নাই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ স্মার্ট শহরের কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ এই পাইকারি কাঁচাবাজার থাকতে পারবে না।’
আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম ধাপে কারওয়ান বাজার আড়ৎ মার্কেটের ১ম তলার ৪০০ বর্গফুটের ৬২টি দোকান এবং ২য় তলার ১৭০ বর্গফুটের ১১৪টি দোকান অর্থাৎ মোট ১৭৬টি দোকান স্থানান্তর করা হবে। এছাড়াও কারওয়ান বাজারে সম্পত্তি বিভাগ কর্তৃক বরাদ্দকৃত ১৮০টি টিনশেড দোকান আমিনবাজারে পাইকারী কাঁচাবাজারের আশেপাশের উন্মুক্ত স্থানে স্থানান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, কারওয়ান বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রায় ৫শ বছর আগে। এটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন ঢাকার কেন্দ্রবিন্দু ছিল সদরঘাট। পর্যায়ক্রমে ঢাকা গুলিস্থান, মতিঝিল হয়ে অনেক দূর প্রসারিত হয়েছে। তাই কারওয়ান বাজারটি ঢাকার প্রান্তে স্থানান্তর করার মাধ্যমে স্মার্ট শহর নিশ্চিত করতে হবে। আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই, কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত। অতএব এটি বাস্তবায়ন হতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, এটি স্থানান্তর হলে সব সুবিধাই পর্যায়ক্রমে নিশ্চিত করা হবে। গাবতলীতে বাজার শুরু হলে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মতবিনিময় সভা শুরুর আগে ডিএনসিসি মেয়র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গাবতলি পাইকারি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখেন।
এএইচ
আরও পড়ুন