ঢাকা, শুক্রবার   ১১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

প্রথম ডিজিটাল সড়ক রুপ পাচ্ছে ঢাকায়

প্রকাশিত : ২২:০২, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

চীনের সাংহাই কিংবা বেইজিং বা থাইল্যান্ডের ব্যাংকক অথবা যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের মতো ঢাকার বিমানবন্দর সড়ক ডিজিটাল রূপ পাচ্ছে। বনানী লেভেলক্রসিং থেকে বিমানবন্দর মোড় পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়কে ডিজিটাল সেবার সুবিধা রেখে অবকাঠামো স্থাপনের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ এগিয়েছে। গত সপ্তাহে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কাজ দ্রুত সময়ে শেষ করতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের প্রথম ডিজিটাল সড়কটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন—এমনটি চায় ঢাকা সড়ক বিভাগ।

জানা গেছে, এই সড়কের পাশে থাকবে পাহাড়ি ঝরনা। পাথরের গা বেয়ে নিচে জমে থাকা স্বচ্ছ জলে জলকেলি করবে নানা রঙের মাছ। ফুটপাতে থাকবে ফুলের সৌরভ, সবুজ পাতার বাহার। বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীরা বসতে পারবে ছায়ায়, ডিজিটাল যাত্রীছাউনিগুলোতে; যেখানে সব সময় থাকবে ইন্টারনেট সেবা ‘ওয়াই-ফাই’। দরকার হলে টাকা তোলার জন্য এটিএম বুথও থাকবে হাতের নাগালে। কয়েন দিয়ে পণ্য কেনার ব্যবস্থা থাকবে ছোট ছোট দোকানে। কথা বলতে বলতে চার্জ শেষ হয়ে গেলে মোবাইল ফোন সেটটি রিচার্জ করা যাবে রিচার্জ সেন্টারে। বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে বিশুদ্ধ পানি।

এখানেই শেষ নয়। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য আলাদা জায়গাও থাকবে সড়কের পাশে। থাকবে ডিজিটাল পুলিশ বক্স। সেখান থেকে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সড়কের পরিস্থিতি তদারক করতে পারবেন। ১২টি স্থানে থাকবে কৃত্রিম পাহাড়ি ঝরনা। নিকুঞ্জ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত থাকবে সাইকেল লেন।

তবে সওজের ভূমি ইজারা নীতিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন না হওয়ায় কাজ পুরোপুরি শেষ করতে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে ঢাকা সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

সওজ অধিদপ্তরের ঢাকা সড়ক বিভাগের অধীনে এই কাজে ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকা। পুরো অর্থই বিনিয়োগ করছে ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। চীনের ফুজহৌ রিয়েলি কম্পানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এই ডিজিটাল সড়ক ধীরে ধীরে বাস্তব রূপ পাচ্ছে। এই প্রকল্পের নাম ‘বনানী ওভারপাস থেকে বিমানবন্দর মোড় সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প’।

গতকাল শনিবার নিকুঞ্জ গেটের কাছে নজরে পড়ল নির্মিত ভাস্কর্য—পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যদের প্রতি ক্ষিপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা গ্রেনেড ছুড়ছেন, অস্ত্র হাতে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলছেন নারী। রাইফেল তাক করে আছেন আরো দুজন মুক্তিযোদ্ধা।

জানা গেল, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য এটি। এর নাম ‘বীর’। এটিসহ তিনটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হচ্ছে এই সড়কে। ভাস্কর্য ‘বীর’-এর উচ্চতা ৫৩ ফুট, দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট, প্রস্থ ৬২ ফুট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের পেইন্টিং বিভাগ থেকে ডিগ্রি নেওয়া হাজ্জাজ কায়সার ভাস্কর্যটির নকশাকার। উড়ন্ত উড়োজাহাজ, চলন্ত ট্রেন বা বাস থেকেও চোখে পড়ে ভাস্কর্যটি। জানা গেছে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রকাশ থাকবে সড়কের তিনটি ভাস্কর্যে।

বনানী লেভেলক্রসিং থেকে শুরু করে বিমানবন্দর মোড় পর্যন্ত ঘুরে বিদ্যামান সড়কের পাশে স্থানে স্থানে দেখা গেছে যাত্রীছাউনি, বসার স্থান, বনায়নের বাস্তব রূপ। বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের দৃশ্যও নজরে পড়েছে। কোথাও চলছে মাটি ভরাটের কাজ। কোথাও তোলা হয়েছে ভবনের ভিত্তি। কোথাও তোলা হয়েছে দেয়াল। চীন থেকে আসা নির্মাণসামগ্রী মজুদ করা হচ্ছে প্রকল্প এলাকায়।

২৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ১২টি ডিজিটাল যাত্রীছাউনি থাকবে এই সড়কে। বনানী অংশে এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে যাত্রীছাউনি। একটি যাত্রীছাউনিতে ১০০ থেকে ১৬০ জন যাত্রী ও পথচারী বসতে পারবে। যাত্রীছাউনিতে অত্যাধুনিক স্ক্রিন লাগানো হয়েছে। আছে বসার পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থা। বনানী লেভেলক্রসিং থেকে র‌্যাডিসন হোটেলের সামনের সড়কে, শেওড়া, খিলক্ষেত, কাওলা ও বিমানবন্দরে এসব ডিজিটাল যাত্রীছাউনি চালু হচ্ছে। র‌্যাডিসন হোটেলের কাছে পাহাড়ি ঝরনা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে আছে ২০০ মিটার ওয়াকওয়ে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, স্থানে স্থানে থাকবে ডিজিটাল ডাস্টবিন, ডিজিটাল ট্রাফিক সাইন, স্বয়ংক্রিয় ধুলা পরিষ্কারের যন্ত্র, এলইডি স্ট্রিট লাইট, এলইডি অর্নামেন্টাল গার্ডেন লাইট। এগুলো বসানোর কাজ বিভিন্ন অংশে এগোচ্ছে। নিকুঞ্জ অংশের পাশে থাকবে শিশুদের জন্য কিডস জোন।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি