প্রসাধনী-রঙ থেকে পরিবেশে পারদ মিশছে বছরে ৪৭৪৮ কেজি
প্রকাশিত : ১৬:২২, ২০ মার্চ ২০১৯ | আপডেট: ১৬:২৯, ২০ মার্চ ২০১৯
প্রসাধনী ও রঙ থেকে পরিবেশে (প্রকৃতি) মিশছে অতিরিক্ত পারদ (মার্কারি)। যার ফলে দিনে দিনে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝঁকি। আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগী ব্যাধীতে। এমনই দাবি করছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে সাতটি পণ্য থেকে বছরে পরিবেশে ছড়ায় ৮ হাজার ৬১৩ দশমিক ৮ কেজি পারদ। এর মধ্যে প্রসাধনী ও রঙ থেকে ছড়ানো পারদের পরিমাণ ৪ হাজার ৭৪৮ কেজি।
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) এক গবেষণায় কাজটি পরিচালনা করেন। গতকাল এসডোর রাজধানীর লালমাটিয়ার কার্যালয়ে ‘মার্কারি অ্যাডেড প্রডাক্ট অ্যান্ড অ্যাভেইলেবল অল্টারনেটিভস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব ও এসডো চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ, বিএসটিআইয়ের কেমিক্যাল ডিভিশনের চেয়ারম্যান ও এসডোর নির্বাহী বোর্ডসদস্য অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম, এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন ও নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা।
গবেষণার তথ্য বলছে, থার্মোমিটার, বাল্ব, সুইস ও রিলে, ব্যাটারি, প্রসাধনী, রঙ ও স্ফিগমোম্যানোমিটার থেকে বছরে ৮ হাজার ৬১৩ দশমিক ৮ কেজি পারদ পরিবেশে ছড়ায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত ও আমদানিকৃত রঙের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৫ টন। রঙ থেকে পরিবেশে পারদ ছড়ায় বছরে ৪ হাজার ৭৪৮ কেজি। একইভাবে দেশে প্রসাধনী (সাবান ও ক্রিম) উৎপাদিত ও আমদানি হয়েছে ১৬৮ টন। এর মধ্যে ডিসপোজড হয়েছে ১৪৩ টন, যা থেকে পরিবেশে পারদ ছড়িয়েছে ৫৫১ কেজি।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে থার্মোমিটার উৎপাদিত ও আমদানি হয়েছে ৪৭ লাখ ৭১ হাজার ৪২৮টি। এর মধ্যে ডিসপোজড হয় ৩ লাখ ৩৪ হাজারটি। এ থেকে পরিবেশে পারদ ছড়িয়েছে ৫৫১ কেজি। পর্যায়ক্রমে স্ফিগমোম্যানোমিটার, বাল্ব, সুইস ও রিলে এবং ব্যাটারি থেকে এক বছরে পরিবেশে পারদ ছড়িয়েছে যথাক্রমে ৯৬০, ৩৮২, ১ হাজার ৪০৪, ১৭ দশমিক ৮ কেজি।
বিশেষজ্ঞরা জানান, পারদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে কিডনি বিকল, হাত-পা অবশ, স্নায়বিক সমস্যা, ক্যান্সার এবং মস্তিষ্কে বিষক্রিয়া হয়ে মানসিক বিকৃতির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া খাবারের সঙ্গে মার্কারি পেটে গেলে কিডনি সমস্যা, মস্তিষ্কে প্রদাহ ও প্রতিবন্ধী সন্তান জন্মদানসহ নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন নারীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের রাসায়নিক বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. গ্রেগরি হাওয়ার্ড বলেন, স্বল্পমাত্রার পারদও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটির সামান্য সংস্পর্শ শিশুদের বুদ্ধিমত্তা, স্মরণশক্তি, ভাষাগত দক্ষতা এবং মস্তিষ্ক বিকাশের অন্য দিকগুলোর ওপর প্রভাব ফেলে।
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, মানুষের মধ্যে সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার মাত্রা বাড়ছে। মাছ থেকে পারদ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে রক্তে মিশে যাচ্ছে। অতিরিক্ত পারদ রক্তে মিশে যাওয়ার কারণে ক্যান্সার, কিডনি বিকল ও স্মৃতিভ্রংশ হয়।
সাবেক সচিব ও এসডো চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, পারদ একটি বিষাক্ত ভারী ধাতু, যা প্রায়ই অতিরিক্তভাবে বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহার হচ্ছে। এটি সমানভাবে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের সবার পারদের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি এর বিকল্প ব্যবহারের পথে এগিয়ে আসতে হবে।
টিআর/
আরও পড়ুন