ঢাকা, রবিবার   ১০ নভেম্বর ২০২৪

দুধ চুরি করা সেই বাবাকে চাকরি দিতে খুঁজছে স্বপ্ন

প্রকাশিত : ০০:০৯, ১২ মে ২০১৯ | আপডেট: ১১:১৫, ১২ মে ২০১৯

তিন মাস ধরে চাকরি না থাকায় সন্তানের ক্ষুধার যন্ত্রণা মেটাতে বাধ্য হয়ে সুপার শপ স্বপ্ন থেকে দুধ চুরি করেছিলেন বাবা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে তা ভাইরাল হবার পর ঘটনা নজরে আসে স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসিরের। পরে তার নির্দেশে সেই বাবা ও সন্তানের দায়িত্ব নেবার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, এ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে আর খোঁজ মিলছেনা সেই বাবার।

শনিবার রাতে একুশে টিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানিয়েছেন স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম।

সাব্বির হাসান নাসির বলেন, আমরা কালকে জানতে পারলাম স্বপ্ন থেকে দুধ নিয়ে বিল না দিয়েই দৌঁড়ে চলে যান এক ব্যক্তি। তখন লোকজন ওনাকে ধাওয়া করে এবং একপর্যায়ে ধরে ফেলে। তারপর পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায় এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন সে লোকটি তার বাচ্চার দুধ না থাকা ও তার চাকরি না থাকার কথা জানায়। বাচ্চার ক্ষুধা নিবারণের জন্যই এমনটা করেছে বলে স্বীকার করে।

স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিষয়টি জানার পর আমাদের ম্যানেজার বলে যে, ঠিক আছে আপনার টাকা দেয়া লাগবে না, আপনি চলে যান। তারপর পুলিশের এসি জাহিদুল ইসলাম বলে, যেহেতু আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, এই টাকাটা আমরা দিয়ে দিচ্ছি। তারপর সে টাকাটা পুলিশের এসি জাহিদ সাহেব দিয়ে দেন।

তিনি বলেন, বিষয়টা জানতে পেরে আমার খুবই খারাপ লাগে। তারপর আমি বললাম যে, ঠিক আছে, এই মাসে যাতে ওনার কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য আমরা ৫ হাজার টাকার একটা ভাউচার দিয়ে দেই, যেটা দিয়ে ওনার বাচ্চার খরচ চালাতে পারবে। আর ওনি যেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তাহলে ওনার যোগ্যতা অনুযায়ী যেকোনো একটা চাকরি আমরা দিয়ে দিব।

সেই বাবার সঙ্গে আপনারা যোগাযোগ করতে পেরেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ওনার সঙ্গে আমরা এখনও যোগাযোগ করতে পারিনি। ওনার নাম্বারটা শুধুমাত্র জাহিদ সাহেবের কাছেই আছে। আমরা সকাল থেকেই জাহিদ সাহেবকে বলছি আমাদেরকে সহযোগিতা করতে, ওনি যেন আমাদের সঙ্গে ওনার যোগাযোগ করিয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে ডিএমপির সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি একুশে টিভি অনলাইকে বলেন, ঘটনাটি আমার কাছে খুবই স্পর্শকাতর লেগেছে। নাম-পরিচয় রেখে তাকে ছেড়ে দেই। আমি যেটা করেছি মানুষ হিসেবে এমনটা করা খুবই স্বাভাবিক। আমি জানি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ দুধের প্যাকেট চুরি করবে না।

তিনি আরও বলেন, ওই লোকটি মালিবাগের হোসাফ টাওয়ারের একটি মোবাইলের দোকানে কাজ করত। ইতোমধ্যে সেই ব্যক্তিকে সাহায্যের বিষয়ে অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। স্বপ্নের পক্ষ থেকে কয়েকজন রাতে আমার অফিসে এসেছিলেন, সেই বাবার সাথে যোগাযোগ করার জন্য, কিন্তু তখন থেকেই ওনার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে, আমি ওনার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা নিয়েছি, কাল আমি আবারও ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, লোকটিকে আমার কাছে ভদ্র বলেই মনে হয়েছে। এই বিষয়টা ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার কারণেই সে হয়তো নাম্বারটি বন্ধ করে দিয়েছে। আবার হয়তো এটা নিয়ে সে ভয়ও পেতে পারে। তবে তার কোন ভয় নেই। আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বাবুর ও তার জন্য একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিব।

স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির এ ব্যপারে বলেন, পুলিশ জানিয়েছেন ঘটনার পর থেকে লোকটি আর ফোন ধরছে না। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে বলতে চাচ্ছি, যিনিই এই কাজটা করেছেন, আমরা আপনার নাম পরিচয় প্রকাশ করব না। হয়তো আপনি এখন লজ্জা পাচ্ছেন, লজ্জা না পেয়ে আপনি যদি কাল আমাদের তেজগাঁও অফিসে আসেন, তাহলে আমি একটা ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিব।

 

উল্লেখ্য, গত ১০ মে রাজধানীর বাকি সড়কে কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম বাচ্চার জন্য বাবার দুধ চুরির মত হৃদয়বিদারক ঘটনার মুখোমুখি হন। এরপর তিনি তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তা সবার কাছে তুলে ধরলে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে।

টিআই/ কেআই


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি