সিটি কর্পোরেশনের লোক বলে জিকে শামীমের বাসায় ঢোকে র্যাব
প্রকাশিত : ১৬:০০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৬:০৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
রাজধানীর নিকেতনের ব্যবসায়িক কার্যালয় থেকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা জি কে শামীমকে আটক করেছে র্যাব। এসময় বিপুল পরিমান নগদ অর্থসহ অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব। এ ছাড়া ২০০ কোটি টাকার একটি এফডিআর পাওয়া গেছে।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম তার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে এ টাকা উদ্ধার করেন। এখন পর্যন্ত অভিযান চলছে।
এর আগে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর নিকেতনে শামিমের ব্যবসায়িক কার্যালয় জি কে বিল্ডার্সে র্যাবের একটি দল এসে তাদের তুলে নিয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জি কে বিল্ডার্সের কর্মচারী দিদারুল ইসলাম। তিনি জানান, ‘সিটি কর্পোরেশনের লোক বলে বাসায় ঢোকে র্যাব। পরে র্যাব পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব। এসব অস্ত্র লাইসেন্সকৃত কি-না তা যাচাই করা হবে বলে র্যাব জানিয়েছে।
তবে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি র্যাব। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং) এএসপি মিজানুর রহমান বলেন, পরে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে শামীম। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন ছেলের মধ্যে জি কে শামীম মেজো। বড় ছেলে গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন।
সন্মানদী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, প্রাইমারি স্কুল ও হাই স্কুল পাস করার পর তাঁদের গ্রামে দেখা যায়নি। ঢাকার বাসাবো আর সবুজবাগ এলাকায় বড় হয়েছেন। গত জাতীয় নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রচারণাও চালিয়েছিলেন শামীম।
গ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পর এজিবি কলোনি, হাসপাতাল জোন এবং মধ্য বাসাবোতেই পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন শামীম। ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মাধ্যমেই তাঁর রাজনীতি শুরু। পরবর্তী সময়ে মির্জা আব্বাসের ভাই মির্জা কালু ও মির্জা খোকনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় এবং তাঁদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে গণপূর্ত ভবনের ঠিকাদারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি। ঢাকা মহানগর যুবদলের সহসম্পাদকের পদও বাগিয়ে নেন। বিএনপি আমলে গণপূর্ত ভবন ছিল তাঁর দখলে। শামীম ছাড়া ওই মন্ত্রণালয়ের কোনো কাজ অন্য কারো পাওয়া ছিল দুঃসাধ্য ব্যাপার।
ক্ষমতার পালাবদলে শামীমও বদলে গিয়ে এখন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা। পাশাপাশি তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগেরও সহসভাপতি। একসময় মির্জা আব্বাস আর খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবিসহ সবুজবাগ-বাসাবো এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শোভা পেত জি কে শামীমের ব্যানার- পোস্টার। এখন শোভা পায় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবিসহ পোস্টার-ব্যানার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলের মতোই আওয়ামী সরকারের আমলেও জি কে শামীমের একক আধিপত্য চলছে গণপূর্তে ঠিকাদারি ব্যবসায়।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন জি কে শামীম। কিন্তু তাকে আটকে রাখা কি এত সোজা!
সম্পত্তির পাহাড় গড়েছেন এই ছোটখাটো শামীম। বাসাবো এলাকায় পাঁচটি বাড়ি এবং একাধিক প্লট রয়েছে শমীমের। বাসাবোর কদমতলায় ১৭ নম্বরের পাঁচতলা বাড়িটি জি কে শামীমের। এই বাড়িটি ম্যানেজার হিসেবে দেখাশোনা করেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. ইসমাইল হোসেন সর্দার। শামীম কয়েক বছর বাসাবোর ওই বাড়িতে বসবাস করলেও এখন থাকছেন বনানীর ওল্ড ডিওএইচএসে নিজের ফ্ল্যাটে। এবং নিজের কার্যালয় বানিয়ে বসেন নিকেতন এলাকায় একটি ভবনে। বাসাবোতে আরো রয়েছে তিনটি ভবন এবং ডেমরা ও দক্ষিণগাঁও ছাড়াও সোনারগাঁ উপজেলা, বান্দরবান ও গাজীপুরে কয়েক শ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি।
আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক এস এম মেজবাহ হোসেন বুরুজ ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর মারা যাওয়ার পর শূন্য পদটি দেওয়া হয়েছে জি কে শামীমকে। শামীম ওই পদ ব্যবহার করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন
টিআর/
আরও পড়ুন