ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

যে কোন সময় গ্রেফতার হতে পারেন সম্রাট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২২:৩৬, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রাজধানীর ক্লাবগুলোতে অবৈধ ক্যাসিনোর সঙ্গে যুবলীগ নেতাদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট আত্মগোপনে আছেন। আইনশৃঙ্খালা বাহিনীর দাবি, সম্রাট পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন। সবুজ সংকেত পেলেই যে কোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা হবে।

ক্যাসিনোর অভিযান শুরুর পর যুবলীগ, কৃষক লীগ ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা র‍্যাব ও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু ক্যাসিনো সম্রাট কেন গ্রেফতার হচ্ছে না বা তার অবস্থান কোথায়- এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। জনমনে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। 

সম্রাট এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযান শুরুর প্রথম তিন দিন তিনি দৃশ্যমান ছিলেন। ফোনও ধরতেন। কিন্তু এখন তিনি কোথায় আছেন, তা তার সংগঠনের কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না।

জানা যায়, অভিযান শুরুর পর কয়েকদিন কাকরাইলের ভূঁইয়া ম্যানশনে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে অবস্থানের পর অন্য স্থানে চলে যান সম্রাট। তিনি কোথায় গেছেন, সে সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। ভূঁইয়া ম্যানশনের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে সম্রাট অবস্থানকালে শতাধিক যুবক তাকে পাহারা দিয়ে রাখছিলেন। সেখানেই সবার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন পদস্থ কর্মকর্তা  জানিয়েছেন, সম্রাট পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন। তিনি ঢাকাতেই আছেন। সম্রাটের বিরুদ্ধে আদৌ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না? জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, সবাই সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবারের অভিযান চালিয়ে যেতে এবং চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব অত্যন্ত কঠোর-এমন বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার কাছ থেকে সরকারের কঠোর মনোভারের কথা জানার পর দিশেহারা হয়ে পড়েন খোদ যুবলীগের এই নেতা। কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। আগে যারা তার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন এখন তাদের অনেকেই তাকে এড়িয়ে চলছেন।

অপর একটি সূত্র জানায়, সম্রাট গ্রেফতার হলে অনেক প্রভাবশালীর নাম প্রকাশ হয়ে যাবে- এমন শঙ্কায় আছেন কিছু নেতা। তাদের কেউ কেউ সম্রাটকে পরামর্শ দিচ্ছেন, গ্রেফতার এড়িয়ে চলতে। তাদের পরামর্শে তিনি নিরাপদ স্থানে আত্মগোপন করেছেন। এ ধরনের নেতার পরামর্শে ও সহযোগিতায় তিনি দেশ ছাড়তে পারেন এমন শঙ্কায় আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, দুর্নীতির চক্রে এদের অনেকেই সম্রাটের দোসর। কেউ কেউ বেশ প্রভাবশালী। তাদের হাতও অনেক লম্বা। এক্ষেত্রে তারা চাইলে বা একটু ঝুঁকি নিলে সম্রাটের জন্য অনেক কিছুই করতে পারেন। তবে সম্রাটের দেশত্যাগের মতো তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নেই।

উল্লেখ্য, গত বুধবার ঢাকার মতিঝিলের ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রে র‌্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো মেলার পাশাপাশি সেগুলো পরিচালনায় যুবলীগ নেতাদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ পায়। 

ওই দিনই গ্রেফতার করা হয় যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে,পরদিন কলাবাগান ক্লাব থেকে গ্রেফতার করা হয় কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম ফিরোজকে। দুদিন পর গ্রেফতার করা হয় ঠিকাদার জি এম শামীমকে, যিনিও যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন।

অপরদিকে আজ ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়াকে আটক করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার সকালে তাদের আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ ১ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধার করা।

সম্প্রতি রাজধানীতে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে র্যা বের হাতে ধরা পড়েন সম্রাটের ডান হাত হিসেবে পরিচিত যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরপর ধরা পড়েন রাজধানীর টেন্ডার কিং আরেক যুবলীগ নেতা জিকে শামীম। এ দুজনই অবৈধ আয়ের ভাগ দিতেন সম্রাটকে। তারা গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাটের অবৈধ ক্যাসিনো সাম্রাজ্য নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। প্রকাশ্যে চলে আসে সুন্দর অবয়বের আড়ালে সম্রাটের কুৎসিত জগত। এতে করে বেকায়দায় পড়েন সম্রাট।

টিআর/  


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি