রিমান্ডে প্রভাবশালীদের নাম বললেন ‘ক্যাসিনো খালেদ’
প্রকাশিত : ১১:৩০, ৪ অক্টোবর ২০১৯
রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনো মালিক যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ওরফে ক্যাসিনো খালেদকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।
এরপর গত ১৯ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় করা অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুই মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পরে মামলাটি র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। র্যাব ২৭ সেপ্টেম্বর খালেদকে দুই মামলায় পাঁচ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়।
পুলিশের পর দ্বিতীয় দফায় দশ দিনের রিমান্ডে খালেদ র্যাবকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাসিনো খালেদ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের নাম বলেছেন। খালিদের দাবি এরা তার অবৈধ ক্যাসিনোর আয় থেকে নিয়মিত মাশোয়ারা নিত। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে প্রতিমাসেই তাদের বখরা দিতে হতো তাকে।
একইসঙ্গে কোন ক্যাসিনো থেকে কত টাকা আয় করতেন এবং চাঁদাবাজির অর্থের পরিমাণও জানিয়েছেন খালেদ। খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদের কাছ থেকে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা পূর্বাচল প্রকল্পে প্লটের জন্য ৫ কোটি টাকা নিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাউছার এবং ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটও তার কাছ থেকে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের অর্থ।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক প্রভাবশালী নেতাকেও দুই দফায় মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছেন তিনি। ঢাকা মহানগর পুলিশের দু’জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নিতেন। খালেদ তার সাম্রাজ্য ধরে রাখতে গড়ে তুলেছেন বিশাল ক্যাডার বাহিনী।
এর মধ্যে ১২ অস্ত্রধারী ক্যাডার সার্বক্ষণিকভাবে তার সঙ্গে থাকত। কিন্তু এখন এদের কারও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। খালেদ জানিয়েছেন, অবৈধ আয়ের টাকা নিজের এবং স্ত্রীর নামে ছয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তিনি গচ্ছিত রেখেছেন।
সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে তার তিনটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। দেশি-বিদেশি ব্যাংকের এসব হিসাবে প্রায় ৩১ কোটি টাকা গচ্ছিত রেখেছেন তিনি।
এ বিষয়ে খালেদের মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা র্যাব-৩ উপপরিচালক ফায়জুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যুবলীগ নেতা খালেদের রিমান্ড চলছে। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। রিমান্ড শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খালেদ তার অবৈধ আয়ের কয়েকটি উৎসের কথা বলেছেন জিজ্ঞাসাবাদে। তিনি বলেছেন, মতিঝিলের ইয়ংমেনস ক্লাব থেকে তিনি মাসে ৪০ লাখ টাকা আয় করতেন।
মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাবের ক্যাসিনো থেকে তার মাসিক আয় তিন লাখ টাকা। ফুটপাত থেকে তিনি মাসিক ২০ হাজার টাকা নিতেন। শাহজাহানপুর লেগুনাস্ট্যান্ড থেকে নিতেন ৩০ হাজার টাকা। শাহজাহানপুর রেলওয়ে গেট বাজার থেকে নিতেন ৬০ হাজার টাকা।
জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, খালেদ অবৈধ আয়ের ভাগীদার হিসেবে যাদের নাম বলেছেন তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন।
এদের একজন খালেদের কাছ থেকে পূর্বাচল প্লটের জন্য ৫ কোটি টাকা নিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর ইসমাইল হোসেন সম্রাট একাধিক ঠিকানা বদল করে এই প্রভাবশালী নেতার বাসায় আত্মগোপন করেন।
আবদুর রহমান এবং নুরুল হুদা নামে দু’জন নিয়েছেন ২ কোটি টাকা। আনিছুর রহমান নিয়েছেন ৪০ লাখ টাকা। যুবলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা দুই ঈদে তার কাছ থেকে নিয়েছেন ২০ লাখ টাকা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, খালেদ তাদের বলেছেন, ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের ক্যাসিনোর নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি। তবে ঢাকার ক্লাবপাড়াসহ নগরীর ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট।
এছাড়া ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনোর নিয়ন্ত্রক ছিলেন মোল্লা আবু কাউছার। দিলকুশা, মোহামেডান এবং আরমাবাগ ক্লাবের ক্যাসিনোর নিয়ন্ত্রক ছিলেন সিঙ্গাপুরে পলাতক যুবলীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ।
আরও পড়ুন