কাউন্সিলর নাঈমকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন
প্রকাশিত : ২২:১৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯
জোরপূর্বক জমি ও মার্কেট দখল করে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে ঢাকা সিটির ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সেচ্চাসেবকলীগ নেতা আনিসুর রহমান নাঈমের গ্রেপ্তার দাবিতে, 'আমরা নির্যাতিত জনতার' ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। নাঈমের মতো একজন মাদক ব্যাবসায়ী, ভূমিদখলবাজ, চাঁদাবাজ, অস্ত্রবাজ, সন্ত্রাসী, অর্থ পাচারকারী, নকল টাকা তৈরির মত এমন অপরাধীকে মানববন্ধন থেকে দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
ভুক্তভোগীরা বলেন, ঢাকা বিমান বন্দরস্থ “হযরত শাহ জালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা বাবুস সালাম ওয়াকফ এস্টেটে ইসি নং- ১৮৮৭১ পাঁচ তলা বিশিষ্ট মসজিদ মাদ্রাসা ভবন ও তৎসহ তিন তালা একটি মার্কেট ভবন উক্ত আনিসুর রহমান নাঈম ও তার পিতা-মফিজ উদ্দিন ব্যাপারী উক্ত মাদ্রাসা বিভাগের সাবেক পিন্সিপাল মওলানা আনিছুর রহমানের (দুনীতি ও অর্থ আত্মসাতের দায়ে চাকুরীচ্যুত) সহায়তায় অবৈধ পন্থায় গত ২০১৭ ইং সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে অদ্যবধি জবর দখল করে রেখেছে। তাদের সন্ত্রাসী হামলায় উক্ত ওয়াকফ এস্টেট মসজিদ মার্কেটের প্রতিষ্ঠাতা মোতাওয়ালী ও সভাপতি সৈয়দ মুশতাক হোসেন রতন মারাত্মক ভাবে আহত হয়ে প্রাণ ভয়ে আছেন। স্থানীয় বিমানবন্দর থানায় মামলা নিতে অপারগতা জানানোয় তিনি আদালতে কয়েকটি মামলা (বিচারাধীন) দায়ের করেছেন।
উক্ত মার্কেটে দীর্ঘ দিনের প্রতিষ্ঠিত ৪টি চালু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক রাতে কোটি টাকার মালামাল লুট করে উক্ত দোকান/প্রতিষ্ঠানসমূহ জবর দখল করে নেয় এবং আরো কয়েকটি নতুন করে দখল করার জন্য হামলা, হুমকি দিয়ে নানা ভাবে জবর দখল করার পায়তারা করছে। যার অভিযোগে ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ দোকান মালিক/ব্যবসায়ীগণ বেশ কয়েকটি মামলা ও অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেখানে ২০টি দোকান, মোবাইল টাওয়ার, এটিএম ব্যাংক বুথ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা থেকে উক্ত নাঈম-মফিজ-মওলানা আনিস-গং প্রতিমাসে নূন্যতম ১০লক্ষ টাকা করে জোড় পূর্বক ভাড়া উত্তোলন করে ওয়াকফ প্রশাসকের হিসাবে জমা না দিয়ে এ পর্যন্ত ৩ কোটি টাকাও অধিক আত্মসাৎ করেছে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, বাবুস সালাম ওয়াক্ফ এস্টেট মসজিদ-মাদরাসা ও মার্কেট কমপ্লেক্স এ বিগত ১৫বছর যাবৎ বৈধ ভাবে ব্যবসা করে যাওয়া ও ভোগ দখলে থাকা “এয়ারপোর্ট রেস্তোরা ও দাওয়াত রেস্ট হাউস” নামক প্রতিষ্ঠান/দোকান দুইটি মালিক (ভাড়া গ্রহিতা) ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল আযম (প্রিন্স) এর উক্ত ২টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানই অভিযুক্তরা জবর দখলের জন্য হামলা করে ও হুমকি দিয়ে জিম্মি করে রেখেছে। যার অভিযোগের থানায় মামলা না নেওয়ায় আদালতে ইতিমধ্যে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তারা বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর গবেষক (অব:) পরিচালক ডঃ হারুনর রশিদ এর সাড়ে ৬ কাঠা জমি ১০ বছর ধরে জবর দখল করে ভোগ করছে। পরবর্তীতে নাম মাত্র মূল্য (৯৫ লক্ষ টাকা) আপোষ মীমাংষা করিয়া ২৫লক্ষ টাকা বায়না করার পর বাদ বাকী এক টাকাও গত ৫ বছরেও পরিশোধ করে নাই বরং জমি দখল করে নানা হুমকি ধমকী দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছে।
সুগার করর্পোরেশন এর বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক রোকেয়া খাতুনের সাড়ে ৭ কাঠা জমি জোর করে দখল করে নিয়েছে নাঈম। পরবর্তীতে আরও একজনের আড়াই কাঠা জমি নিয়ে জবর দখল ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তার উপরে “হোয়াইট হাউজ” নামক প্রাসাদ নির্মাণ করেছে। যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, মিনারা বেগম (৬০) স্বামী মৃতঃ আহম্মেদ আলী ভূইয়া, দক্ষিণখান মৌজা ৪১৫৩নং দাগের ৬৫৯ খতিয়ানের ২৯ শতাংশ ভুমি দখল (১০ বছর পূর্বে) করিয়া গার্মেন্টেস প্রতিষ্ঠান করেছে। যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আশিয়ান সিটিতে আনিসুর রহমান নাঈমের সন্ত্রাসী দলবল কর্তৃক ইউনিয়ন পরিষদের উপর অবৈধভাবে নির্মিত অসংখ্য জমির মালিক ও এলাকাবাসীদের জিম্মি করে অবৈধভাবে/চাঁদা আদায় করছে। যার অভিযোগে এলাকাবাসী (ক্ষতিগ্রস্থ) পক্ষে মনোয়ারা বেগম ও ইকবাল হোসেন বিভিন্ন দপ্তরের অভিযোগ করেও আজও কোন সমাধান পাননি।
এছাড়া শাহনাজ বেগম, স্বামী: সাদেক আলী এর ৩ কাঠা জমি জবর দখল করেছে (১০ বছর যাবৎ)। আব্দুর রফিক, পিতা মৃত আব্দুল রশিদ (জি,এম) ফিনিস প্রোঃ এর ৩ কাঠা জমি দখল করে বাগান বাড়ি নির্মাণ করেছে। মোঃ মোহন মিয়ার (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও কাউন্সিলর প্রার্থী) বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ডের লীজ নেওয়া পাবলিক টয়লেটটি দখল করে নিয়েছে। এবং লক্ষ লক্ষ টাকা পানি অবৈধভাবে বিক্রি করছে। এবং আশেপাশের ফুটপাতের, অবৈধ ভাবে তৈরি করা দোকানপাট, গাড়ীর ওয়ার্কস ইত্যাদি থেকে নিয়মিত ব্যাপক চাঁদাবাজী করে যাচ্ছে।
অত্র এলাকার সিভিল এভিয়েশন অথরেটির ও বাংলাদেশ রেলওয়ে, আশিয়ান সিটি ও নবরুপা আবাসিক এলাকা সবগুলো জলাভুমিসহ অসংখ্য প্লট অবৈধ ভাবে দখল করে মৎস্য খামার ব্যবসা করছে। সিভিল এভিয়েশন ও রেলওয়ের পতিত জমি সমূহ নার্সারি তৈরি করে অবৈধভাবে ব্যবসা করছে। সমগ্র এলাকায় আবাসন ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে, জমি ও জলাশয় দখল, অবৈধ ব্যবসা, মাদক ব্যবসা (তার বড় ভাই গুলশান থানায় মাদকের মামলা আসামী), নকল টাকা তৈরি (তার ভাই হাতে নাতে ধরা পড়েছে), ফুটপাত চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজি, বিমানবন্দর কার পাকিং, কার্গো ও রেল স্টেশন দখল ও জিম্মি করে প্রচুর অবৈধ কালো টাকা ও বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন।
মানববন্ধনে এলাকার এসব ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে এসব জবর দখলকারিদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্থদের সুষ্ঠু সমাধান করে দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানান।
এসি
আরও পড়ুন