তাপসকে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের সমর্থন
প্রকাশিত : ১১:১৯, ২৩ জানুয়ারি ২০২০
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে সমর্থন দিয়েছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ।
গতকাল বুধবার পুরান ঢাকার কারা কনভেনশন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে ব্যবসায়ীদের এই সংগঠন।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সভাপতিত্বে ব্যবসায়ী নেতারা ৩৮টি সমস্যা চিহ্নিত করে এর সমাধানের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স এফবিসিসিআই থেকে দেওয়া, পুরোনো জেলখানার স্থানে আধুনিক সুপরিসর পার্কিং লট করা, চকবাজার সংযোগ সড়ক প্রশস্ত করা, কাঁচাবাজার আধুনিক ও প্রশস্ত করা, পুরান ঢাকায় আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়রানি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং কেমিক্যাল কারখানা, গোডাউন সিটি করপোরেশনের জায়গা বরাদ্দের ভিত্তিতে সরিয়ে নেওয়া।
১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে শেখ ফজলে নূর তাপসকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, অন্য কাউকে ভোট দিলে তারা ব্যবসায়ীদের জন্য জমি দিতে পারবেন না। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবেন না। ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে তাকে (তাপস) বিজয়ী করতে হবে।
তিনি বলেন, উনি (তাপস) দেশের শীর্ষ আইনজীবীদের একজন, উচ্চশিক্ষিত ও মেধাবী। উনি যেটা বলেন, সেটা করে দেখান। আর যেটা করতে পারবেন না, সেটি বলেন না। তাকে বিজয়ী করতে পারলে আমাদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান আসবে।
নৌকার এই প্রার্থীর উদ্দেশে এ. কে. আজাদ বলেন, আপনার সঙ্গে আমরা আছি। আপনি বিজয়ী হলে আমাদের গ্যাস, পানি এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামোর ব্যবস্থা করবেন। তাহলে আমরা পুরান ঢাকা থেকে শিল্পকারখানা সরিয়ে দেব।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, কেমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়ার কথা। দীর্ঘদিনেও এটি না পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক। তাপসকে বিজয়ী করতে পারলে তিনি নিশ্চয়ই ব্যবসায়ীদের এই চাহিদা পূরণ করবেন।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের উত্থাপিত বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ফজলে নূর তাপস বলেন, আইনজীবীর পাশাপাশি তিনি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের চাওয়া-পাওয়া বোঝেন। ব্যবসায়ীরা তার কাছে যে ২৮টি সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, বিজয়ী হলে সেগুলোর সমাধান তো করবেনই, বাকি সমস্যার আলোকেও কাজ করবেন।
অলীক স্বপ্ন দেখান না জানিয়ে এই মেয়র প্রার্থী বলেন, আমার কাছে কোনো জাদুরকাঠি, কিংবা জাদুর টুপি নেই। আমি একজন বাস্তবভিত্তিক মানুষ। আপনাদের কোনো জাদুকরী স্বপ্ন দেখাব না। আমার দেওয়া পাঁচটি রূপরেখায় কোনো স্বপ্ন নেই। আমি এটুকু বলতে পারি, ডিএসসিসি হবে বাস্তবে ব্যবসায়ীদের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসা সহজ করার আশ্বাস দিয়ে তাপস বলেন, একটি ট্রেড লাইসেন্স পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হলে তারা কীভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাবেন। ট্রেড লাইসেন্সের ব্যবস্থা করা হবে পাঁচ দিনের মধ্যে। সিটি করপোরেশনে একটি 'হেল্প ডেস্ক' করা হবে। ব্যবসায়ীদের দিনের সমস্যা দিনেই সমাধান করব। অনলাইন এবং মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সেবা বাড়ানো হবে।
কর না বাড়িয়ে সেবা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, ডিএসসিসিকে একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সিটি করপোরেশনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যেন রাজস্ব সংগ্রহে কোনো অসুবিধা না হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো সম্ভব হবে। করের সমন্বয়সাধন করা হবে, যেন ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার না হন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত হলে প্রথম তিন মাসের মধ্যে দক্ষিণের জনগণের সব নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করব। উন্নত ঢাকার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে ২০৪১ সালের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা হবে। সিটি করপোরেশনে কোনো 'উইপোকার' জায়গা হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ডিএসসিসির প্রকল্পের বরাদ্দ উইপোকারা খেয়ে ফেলে। ইনশাআল্লাহ, আমি নির্বাচিত হলে কোনো উইপোকার জায়গা হবে না।
রাস্তাঘাটে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যাতায়াত ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বলেন, সড়কগুলো কার্যকর এবং উন্নত হবে। কিছু সড়কে ধীরগতির যানবাহন চলবে, অন্য সড়কে চলবে দ্রুতগতির। কোনো সড়কে মানুষ হেঁটে চলাচল করবে, আবার কোনো সড়কে ঘোড়ার গাড়ি চলবে। পৃথিবীর কোথাও এক সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে না। এখানে সমন্বয় দরকার, একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দরকার।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পাঁচটি রূপরেখা পুনর্ব্যক্ত করে ঢাকায় সবুজায়নের ওপর জোর দেবেন বলে জানান এই মেয়র প্রার্থী। বুড়িগঙ্গা নদীর সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা এবং মাদক নির্মূলের ঘোষণাও দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, সিদ্দিকুর রহমান, সালাউদ্দিন, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ, সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ব্যবসায়ী নেতা জসিম উদ্দিন, রেজাউল করিম রেজনু, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, ব্যবসায়ী নেতা শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ।
আরও পড়ুন