ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

পাপিয়ার ‘বিস্ময়কর’ তথ্য দিচ্ছে হোটেল ওয়েস্টিন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৫৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ০৮:৫৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেতা শামীমা নূর পাপিয়া ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের পর তাদের বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে র‌্যাবকে ‘বিস্ময়কর’ সব তথ্য দিচ্ছে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন। 

র‌্যাব সূত্র জানায়, হোটেল ওয়েস্টিনে সবসময় পাপিয়ার নামে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট বুক থাকত। গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫৯ দিন ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে অবস্থান করেন পাপিয়া। সেখানে ভাড়া বাবদ ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা নগদ পরিশোধ করেন পাপিয়া।

এ বিষয়ে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেছেন, রাজনীতির আড়ালে মাদক ও নারীদের নিয়ে ‘বাণিজ্য’ করতেন পাপিয়া। রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোয় বিশেষকরে ওয়েস্টিনে মাঝেমধ্যেই ‘ককটেল পার্টি’র আয়োজন করতেন। এসব পার্টিতে উপস্থিত হতেন সমাজের উচ্চস্তরের লোকজন। মদের পাশাপাশি পার্টিতে উপস্থিত থাকত উঠতি বয়সী সুন্দরী তরুণীরা।

ওয়েস্টিনে কারা পাপিয়ার রঙ্গমঞ্চে যোগ দিতেন সেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে র‌্যাব। হোটেল কর্তৃপক্ষও র‌্যাবকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে।

হোটেল কর্তৃপক্ষ র‌্যাবকে জানিয়েছে, ওয়েস্টিনের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট’ ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যেতেন পাপিয়া। এসব কাজ করে যে আয় করতেন, তা দিয়ে শুধু হোটেল বিলই দিতেন কোটি কোটি টাকা।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শামীমা নূর পাপিয়ার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে গেলে কেউই তথ্য দিতে রাজি হননি। সেখানে হোটেলের লবিতে অভ্যর্থনা কক্ষে যোগাযোগ করলে অপেক্ষা করতে বলা হয়। বেশ কিছুক্ষণ পর হোটেলের মার্কেটিং বিভাগের একজন নারী কর্মকর্তা আসেন। তার কাছে পাপিয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি কোনও উত্তর না দিয়ে হোটেলের মার্কেটিং কমিউনিকেশনের সহকারী পরিচালক সাদমান সালাউদ্দিনের একটি কার্ড দিয়ে তার সঙ্গে ফোনে অথবা ই-মেইলে যোগযোগ করতে বলেন। ওই ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি তথ্যের জন্য বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন।

র‌্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘আমরা চাইলে ওয়েস্টিন সব তথ্য দেবে। তবে মামলা তদন্তের দায়িত্ব এখনও আমরা পাইনি। মামলার তদন্তভার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব র‌্যাবকে দেওয়া হলে আমরা হোটেল থেকে সব তথ্যই নেব।’

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে ওই পাঁচ তারকা হোটেল থেকে আমরা সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করছি। তারাও আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই পাপিয়ার কাছ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক মাথা ঘুরিয়ে দেয়া খবর। পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গীদের ধরতে এরই মধ্যে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান চলছে।

তবে এসব অভিযান নিয়ে র‌্যাব এখনই মুখ খুলতে চাইছে না। এদিকে অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকা উদ্ধারের ৩ মামলায় পাপিয়া দম্পতির ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার শুনানি শেষে ঢাকার দুই হাকিম আদালত আসামিদের রিমান্ডে পাঠান।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চার জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব ১-এর একটি দল। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)।

গ্রেফতারের পর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর দেয়ার তথ্য অনুযায়ী হোটেল ওয়েস্টিনে পাপিয়ার নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং ফার্মগেট এলাকার দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র‌্যাব।

এসব স্যুট ও ফ্ল্যাট থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি ব্যাংক চেকবই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে র‌্যাব।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি