যে কারণে দুই মেয়েকে হত্যা করেন পপি
প্রকাশিত : ১৭:৪০, ৭ মার্চ ২০২০
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি বাসায় নিজের দুই শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যার কারণ জানিয়েছেন গৃহবধূ আরিফুন্নেসা পপি। হত্যার কথা স্বীকার করে ওই গৃহবধূ স্বামী ঠিকমত সংসারের খরচ না দেয়ায় জীবনযাপনে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, আর এতেই দুই মেয়েকে হত্যা করে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জানান।
আজ শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের অবজারভেশন কক্ষে গণমাধ্যমকে এসব কথা জানান ওই নারী। এর আগে শুক্রবার রাতে খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ গোড়ানের একটি বাড়িতে রোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটে।
শনিবার সকালে দুই মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস (১১) ও আলভী (৮) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাদের মা পপিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গৃহবধূ পপি বলেন, ‘গতরাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে ঘুমন্ত দুই শিশু জান্নাত ও আলভীকে হত্যার পরিকল্পনা করি। প্রথমে আগুনে পুড়িয়ে ও পরে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করি।’
মা হয়ে কেন এমন রোমহর্ষক হত্যার ঘটনা ঘটালেন জানতে চাইলে পপি বলেন, ‘সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারছিলাম না। সংসার চালানো যাচ্ছিল না। স্বামী সংসার খরচ দিতো মাত্র ১ হাজার ১০০ টাকা। ওই টাকায় কিছুই করা যাচ্ছিল না। এ নিয়ে হতাশা, বেঁচে থাকার নিরাশা থেকেই দুই সন্তানকে খুন ও নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।’
নিহত দুই শিশুর নানা আবু তালেব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘খিলগাঁওয়ে ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলে পড়াশোনা করতো তার দুই নাতনি জান্নাত ও আলভী। আলভী চতুর্থ শ্রেণিতে ও জান্নাত জুনিয়র ওয়ানে। মেধাবী দুই শিশুর বাবা মোজাম্মেল হোসেন বিপ্লব মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় ইলেকট্রিক সামগ্রীর ব্যবসা করেন। প্রতি শুক্রবার মুন্সিগঞ্জ থেকে খিলগাঁওয়ে আসেন আবার শনিবার মুন্সিগঞ্জে চলে যান।’
তিনি বলেন, ‘নাতনিদের মৃত্যুর খবর শুনে প্রথমে বাসায় ও পরে হাসপাতালে ছুটে আসি।’
খিলগাঁও থানা পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতের কোনো এক সময়ে পপি তার দুই শিশু সন্তান জান্নাতুল ফেরদৌস ও আলভীকে গলা কেটে হত্যার পর নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় পপিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা যায়, মা পপিই দুই সন্তানকে খুন করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। স্বামী মুন্সিগঞ্জ থাকেন। সাংসারিক খরচ দেয়া না দেয়া নিয়ে পারিবারিক কলহ চলছিল। গত রাতে দুই সন্তানকে খুন করার পর পপি সকালে নিজেই আত্মহত্যার চেষ্টার আগে তার বাবা তালেবকে জানায় খুনের কথা ও নিজে আত্মহত্যা করবেন।’
তবে কেন এই খুন এবং এই খুনের নেপথ্যে আরও কেউ জড়িত কিংবা অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না- তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এআই/আরকে
আরও পড়ুন