ঢাকা, সোমবার   ০৭ অক্টোবর ২০২৪

রোগীর কোন অবস্থায় প্রয়োজন হয় ভেন্টিলেটর?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০৪, ১৬ আগস্ট ২০২০

ভেন্টিলেটর হল কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র। যখন কোন মানুষের ফুসফুসের সংক্রমণ, দুর্ঘটনা বা অন্য কোনও গুরুতর শারীরিক অবস্থায় নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকে। এই অবস্থায় শরীরে অক্সিজেন কমে যায় ও কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে রোগীর অবস্থা আরও জটিল হয়ে ওঠে। এই সময়ে রোগীর জীবন বাঁচাতে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস প্রশ্বাস চালু রাখতে প্রয়োজন হয় ভেন্টিলেটর। আর এই ভেন্টিলেটরের প্রয়োজনীয়তা কোভিড-১৯ মহামারিতে মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।

করোনাভাইরাস শ্বাসনালী হয়ে ফুসফুসকে আক্রমণ করে। বেশিরভাগ মানুষেরই অল্পস্বল্প শ্বাসকষ্ট হয়, কিন্তু ৫ থেকে ১০% রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক রকমের শ্বাসকষ্ট হয়। তখন তাদের জীবন বাঁচাতে ভেন্টিলেশনে রাখার প্রয়োজন পরে।

কখন দরকার হয় ভেন্টিলেটর

চিকিৎসকরা জানান, কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের কারণেই হোক বা অন্য কারণে, যখন মানুষ এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে নিজে শ্বাস নেবার ক্ষমতা রাখেন না তখনই ভেন্টিলেটরের সাহায্য নেওয়া হয়। এর সাহায্যে সাময়িকভাবে পরিস্থিতির সামাল দিলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে, নিউমোনিয়া, সিওপিডি-সহ বিভিন্ন ফুসফুসের অসুখ হলে, সেপ্টিসিমিয়ার মতো সাংঘাতিক কোনও সংক্রমণ হয়ে রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়লে, সিভিয়ার হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোক হলে, বিষাক্ত সাপে কামড়ালে, জটিল কোনও অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর অবস্থা সামাল দিতে ভেন্টিলেটরের সাহায্য নিতে হয় বলে জানালেন বিশেষজ্ঞরা।

মোটকথা, শরীরে যখন অক্সিজেনের মাত্রা খুব কমে যায় একই সঙ্গে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়, তখনই ভেন্টিলেটরের সাহায্যের দরকার হয়। যখন নিঃশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা চলে যায় সেই সময়েই কৃত্রিমভাবে শ্বাস চালু রাখার জন্যে ভেন্টিলেটরের সাহায্য নিতে হয়।

ভেন্টিলেটর মৃতপ্রায় রোগীকেও বাঁচিয়ে তোলে

মুমুর্ষু মানুষকে জীবন ফিরিয়ে দিতেই ভেন্টিলেটরের সাহায্য নেওয়া হয়। কখনও কখনও সাময়িকভাবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ভেন্টিলেটরের সাহায্য নেওয়া হয়। আবার অনেক সময় বছরের পর বছর রোগীকে ভেন্টিলেটরে রাখতে হতে পারে।

বেশির ভাগ মানুষের মনে এই প্রশ্ন ওঠে যে, এই কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের সাহায্য নিলে রোগীর ফিরে আসার সম্ভাবনা কতটা। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোগী ভেন্টিলেটর থেকে সুস্থ হয়ে বেরিয়ে আসতে পারবেন কিনা তা নির্ভর করে মানুষটির সার্বিক শারীরিক অবস্থার উপর। অনেক ক্ষেত্রেই রোগী ভাল হয়ে ওঠেন। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ভেন্টিলেটরে রোগীকে রেখে চিকিৎসা করার সময় জীবনদায়ী ওষুধসহ একাধিক বার নানা টেস্ট করানোর প্রয়োজন হয়। 

তবে ব্যাপারটা যথেষ্ট খরচ সাপেক্ষ। তাই রোগীর আপনজনদের সম্মতি নিয়েই তবে রোগীকে ভেন্টিলেটরে দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, খরচের ধাক্কা সামলাতে না পারলে অনেকে ভেন্টিলেটর থেকে রোগীকে বার করে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু ইচ্ছে হলেই রোগীকে ভেন্টিলেটর থেকে বাইরে আনা যায় না। রোগী সুস্থ হলে কিংবা মারা গেলে তবেই তার এই জীবনদায়ী মেশিন খুলে দেওয়া যায়, এটাই আইন। 

তবে একটা ব্যাপার জেনে রাখা উচিত, মানুষ মারা যাওয়ার পর তাকে ভেন্টিলেটরে রেখে বিল বাড়ানোর গল্প একেবারে মনগড়া। কেননা, ভেন্টিলেটর শুধুমাত্র শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখতে পারে। মানুষ মারা গেলে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। 

ভেন্টিলেটরের সংখ্যা অনেক কম, বেসরকারি হাসপাতালের খরচও আকাশছোঁয়া। তাই বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও মুখে মাস্ক পরার নিয়ম মেনে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের চেষ্টা করুন। সূত্র: আনন্দবাজার

এএইচ/এমবি


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি