ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

ঈদের মধ্যেও দাফনে সক্রিয় কোয়ান্টাম স্বেচ্ছাসেবক দল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:১৭, ২৪ মে ২০২০

প্রতিবারের মতো ঈদের সেই আমেজ নেই এবার।  পরিবারের আপনজনেরাও রয়েছেন দূরে।  নেই নতুন পোশাক  পরা কিংবা পোলাও-মাংসের বিশেষ আয়োজন।  করোনাকালে নিয়োজিত কোয়ান্টাম দাফন কার্যক্রমের স্বেচ্ছাসেবক দলের এবারের ঈদটা পালিত হচ্ছে মৃতদের দাফন ও সৎকারের মধ্য দিয়েই। পরিবারে না ফিরে দাফন ক্যাম্পে সক্রিয় থেকে বরং ২৪ ঘণ্টা সেবার জন্যে প্রস্তুত রয়েছেন নিবেদিতপ্রাণ এই স্বেচ্ছাসেবকরা। 

কোভিড-১৯ কিংবা সাসপেক্টড অবস্থায় মৃতদের দাফন কাজে নিয়োজিত কোয়ান্টাম স্বেচ্ছাসেবকরা গত ৭ এপ্রিল থেকে এভাবেই নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কখনো ঢাকা মেডিকেল, কখনো মুগদা হাসপাতাল, কখনো মিরপুর, কখনোবা উত্তরাতে ছুটে যান মরদেহ দাফন বা সৎকার কাজে। করোনায় মৃতদের পরিবার বা স্বজনরা যখন মরদেহ ফেলে দূরে দূরে থাকছেন, হাসপাতালে তখন কাছের মানুষটি হয়ে মমতার সাথে শেষ বিদায়ের কাজটা করে যাচ্ছেন দাফনকর্মী স্বেচ্ছাসেবক দল।

কোয়ান্টাম দাফন কার্যক্রমের সমন্বয়ক ছালেহ আহমেদ জানান, করোনার এই সময়ে ঈদের আনন্দটাই বড় কথা নয়। ঈদের দোহাই দিয়ে আমরা ঘরে থাকতে পারি না।  মানবিক কারণেই আমরা এই সময়েও দাফন কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দল রাত-দিনের যেকোনো সময়ের জন্যে প্রস্তুত রয়েছি।  এমনকি ঈদের দিনও আমরা সেবার জন্যে প্রস্তুত রয়েছি। 

জানা যায়, এ পর্যন্ত সারাদেশে দুই শতাধিক মরদেহ দাফন ও সৎকার করেছে কোয়ান্টাম। এর মধ্যে ঢাকায় ১৭১ জন ও বাকিরা রাজশাহী, বরিশাল, বগুড়া, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিধি মেনে হাসপাতাল বা বাসায় গিয়ে মৃতদের ধোয়ানো, ওযু করানো, কাফনের কাপড় পরানো সম্পন্ন করে স্বেচ্ছাসেবক দল। এরপর ডব্লিউএইচও-র নির্ধারিত বিশেষ ব্যাগে মরদেহ প্যাকেট করে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় সরকার নির্ধারিত কবরস্থানে। সেখানে জানাজাশেষে কবরস্থ করার পর মৃতের জন্যে আন্তরিক দোয়া করা হয়। কোয়ান্টামের পক্ষ থেকে শুধু মুসলিমই নয়, সনাতন ধর্মের মৃতদেহ সৎকারের জন্যেও আলাদা টিম কাজ করছে।  মহিলা মৃতদেহের জন্যে রয়েছে কোয়ান্টামের মহিলা স্বেচ্ছাসেবী দল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশেষ পিপিইসহ সুরক্ষা পোশাক পরেন স্বেচ্ছাসেবকরা।  সাধারণ মরদেহের সাথে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মরদেহের দাফন একেবারে ভিন্ন। দাফনের পুরো প্রক্রিয়ায় অ্যালকোহল, হাইড্রােজেন-পার-অক্সাইড এবং হাইফো ক্লোরাইড সলিউশন ইত্যাদি জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। শুধু নিজেদের সুরক্ষাই নয়, হাসপাতালে যেখানে মরদেহ থাকে সেই স্থানসহ কবরস্থানের যে এলাকায় কাজ করেন- পুরো এলাকা জীবাণুনাশক দিয়ে সুরক্ষা দেয়া এবং প্রতিবার দাফন শেষে স্বেচ্ছাসেবকদের  ব্যবহৃত উপকরণ পিপিই, মাস্ক, সেফটি গ্লাস, ফেস শিল্ড, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, হেবি গ্লাভস, নেক কভারসহ যাবতীয় পরিধেয় জিনিসপত্র তাৎক্ষণিক পুড়িয়ে পরিবেশ সুরক্ষিত রাখতে সচেতন থাকেন স্বেচ্ছাসেবক দল।  একটি দাফন কাজে মরদেহের কাফনের কাপড়, মরদেহ বহনের জন্যে বিশেষ বডি ব্যাগসহ প্রায় ৩০ রকমের উপকরণ ব্যবহৃত হয়।  এসবই কোয়ান্টামের স্ব-অর্থায়ন ও সদস্যদের অনুদানে পরিচালিত হচ্ছে।

দাফন কার্যক্রমের সমন্বয়ক ছালেহ আহমেদ জানান, কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবক, কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্যসহ আরো অনেকেই আমাদেরকে সহযোগিতা করছেন।  সবার সহযোগিতা নিয়ে আমরা দেশের এই দুর্যোগে শেষ পর্যন্ত সেবা দিয়ে যেতে চাই।

একে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি