করোনার মূল টার্গেট ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াবেন যেভাবে
প্রকাশিত : ১০:২৮, ৩১ মে ২০২০
বিশ্বব্যাপী যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা সরাসরি আমাদের শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। তাই সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি ফুসফুসের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হতে হবে। জীবনযাত্রায় সাধারণ কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমেই সেটা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন।
ধূমপান ছাড়তে হবে
সবার আগে ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে। ধূমপানের কারণে নিকোটিন, টার, কার্বন মনো অক্সাইডের মতো হাজার হাজার আমাদের ফুসফুসে প্রবেশ করে ফুসফুসকে বিষাক্ত করে। এসব রাসায়নিক জমতে জমতে একপর্যায়ে ফুসফুসের বাতাস চলাচলের পথ ছোট হয়ে যায়। ফলে শ্বাসকষ্ট, এমনকি ক্যানসার হতে পারে। তবে ধূমপান ছাড়লেই আপনি নিরাপদ নন। এজন্য আপনাকে পরোক্ষ ধূমপান অর্থাৎ, ধূমপায়ীদের থেকে দূরে থাকতে হবে।
প্রচুর পানি খেতে হবে
ফুসফুস সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এই পানি ফুসফুসের ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। এ জন্য দিনে অন্তত ৬-৮ গ্লাস পানি খেতে হবে।
কী খাবেন, কী খাবেন না
খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি, গাজর, টমেটো, লেবু, বিভিন্ন মৌসুমি ফল যেমন আঙুর, আনারস, আমলকি, পেয়ারা সেই সঙ্গে সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে। এসব খাবারে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এবং মিনারেল। চেষ্টা করুন চিনি এবং ক্যাফেইনযুক্ত জাতীয় খাবার যেমন কোমল পানীয়, চা, কফি এড়িয়ে যেতে। এছাড়া শিশুর ফুসফুসের বিকাশে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে নিয়মিত।
নিয়মিত ব্যায়াম করা
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করতে হবে। না হলেও অন্তত ৩ থেকে ৫ দিন ব্যায়াম করতে হবে। এতে শ্বাসযন্ত্রের পেশীগুলো সুগঠিত হবে। সবচেয়ে ভালো শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করা। এই ব্যায়ামের সময় জোরে নিঃশ্বাস নিতে হয়। এতে ফুসফুস সহ আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন প্রবেশ করে। যা আমাদের দিনভর কর্মদ্যম রাখে।
এ জন্য শিশুদের খেলাধুলার প্রতি উৎসাহ দিতে হবে। বাড়িতে বসে ফুসফুসের ব্যায়াম করতে হলে প্রথমে পিঠ সোজা করে বসতে হবে। এরপর নাক দিয়ে জোরে নিঃশ্বাস নিতে হবে যাতে মনে হয় পেট পর্যন্ত বাতাস যাচ্ছে। এই বাতাস ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং মুখ দিয়ে ছাড়ুন। এভাবে ফুসফুস পরিষ্কার হবে, কার্যক্ষমতা বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। তবে ফুসফুস ধরে রাখার সময় আপনার যদি কাশি আসে বা বুকে চাপ দিয়ে ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
বাতাস বিশুদ্ধ রাখুন
গবেষণা মতে, আমাদের বাড়ির ভিতরের বাতাস কখনো বাইরের বাতাসের চেয়েও বেশি দূষিত হয়। যার প্রভাব ফুসফুসের ওপর পড়ে। এজন্য ঘর সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সকালে দরজা জানালা খুলে দেবেন যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে। রান্নার সময় চিমনি, কিচেন হুড বা ফ্যান ব্যবহার করুন। মাটির চুলা যারা ব্যবহার করেন, চেষ্টা করুন বায়োগ্যাসের চুলা কমধোয়ার চুলা ব্যবহার করুন। ঘরের মধ্যে কাপড় না শুকানোই ভালো। আর বাইরের বাতাস থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করুন।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া
ফুসফুস সুস্থ রাখার আরেকটি দিক হলো পর্যাপ্ত বিশ্রাম। শ্বাসকষ্ট হলে ঘুমের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। এতে ফুসফুস রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের বার বার হাত পরিষ্কারের কথা বলা হচ্ছে। কারণ হাত থেকেই ভাইরাস ফুসফুসে চলে যায়। তাই বার বার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে।
ফুসফুস বিষয়ে যা এড়িয়ে যাবেন না
যদি আপনার দীর্ঘদিন ধরে কাশি, শ্বাসকষ্ট থাকে, পরিশ্রম করতে গেলে অনেক ক্লান্ত লাগে, লম্বা শ্বাস নিতে গেলে বুকে ব্যথা করে বা যদি এমন মনে হয় যে আপনি পর্যাপ্ত বাতাস পাচ্ছেন না- সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করবেন না।
এমবি//